শহরের শরীরে কোনো গোপন-গভীর দীর্ঘশ্বাস অনুভব করি। কর্ম-ক্লান্ত মানুষ ফিরছে তার আপন নীড়ে। কোথাও উচ্ছ্বাস নেই, উচ্চকন্ঠে হাসির শব্দ নেই, নেই প্রশান্তির কোনো চিহ্ন। সবার চোখে মুখে একই অনিশ্চয়তা। একটা নিশ্চিন্তপুরের খোঁজে সবাই ছুটে যাচ্ছে, যেন বা শেষ ট্রেন মিস হলেই গন্তব্যের আর কোনো ট্রেন মিলবে না। কিংবা হয়তো সবাই অপেক্ষা করে আছি একই গন্তব্যের, যেন বা সবার জীবনের একটাই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য, জীবনের এক খানা টেকসই উন্নয়ন।
পরম্পরায় পাওয়া ঐতিহ্য গ্রাস করে ফেলছে রিয়েল এস্টেট, প্রতিনিয়ত ভেঙে পড়ছে শহরের প্রাচীন বাড়ি। যুক্ত পরিবারের আর কোনো সম্ভাবনা নেই বলে নব্য নির্মিত সেসব বাড়ির সীমিত-সীমানায় নেই কোনো বৃহৎ পরিসর।
নগরীর বিষণ্ণ ব্যালকনিতে আটকে থাকে শহরের সংক্ষিপ্ত আকাশ। মৃত মাছের মত ঝুলতে থাকে পোশাক, মলিন অন্তর্বাস, দু’চারটে শূন্য হ্যাঙ্গার।
সবই দেখি, শুধু মানুষ দেখি না কোথাও। সড়কের বুকে জেগে ওঠে খানা-খন্দ। ঝুঁকি আর ঝক্কি নিয়ে তবুও প্রতিদিন পাড়ি দেওয়া ক্লান্ত এ-জীবন।
সুপার শপে সাজানো জীবনের রকমারি আয়োজনের কনজিউমার জানে না অলক্ষ্যে তার কার্ড ক্লোন হয়ে সাধের উপার্জন হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে কি না কোথাও। সদ্য প্রেমে পড়া তরুণী জানে না ‘মন কে শরীরে রেখে’ ফিরে যাওয়ার পায়তারা করছে কি না প্রেমিক সেজে থাকা পুরুষটি। ‘সকল নিয়ে সর্বনাশের আশায়’ বসে থাকা পুরুষটিও জানে না ঠিক কোথায় মিলবে তাঁর মনের পাসোয়ার্ড।
তবুও অজস্র অমিল নিয়ে প্রতি সন্ধ্যায় মরিচ বাতির আলোয় ওয়েডিং পার্টি হবে জাজ্বল্যমান কোনো কমিউনিটি সেন্টার-এ। খুশি খুশি চেহারার ফটো-শুট চলবে রাত অবধি। পাতে না ওঠা একটা অর্ধগলিত রোস্টের হাহাকারের মত মিলিয়ে যাবে দু’টি ভিন্ন শরীরের অভিন্ন হবার এই সামাজিক প্রক্রিয়া।
তবুও এ শহর, এ সভ্যতা দেবে না বিনা কাজে বাঁশি বাজিয়ে কাটিয়ে দেওয়ার মতো কোনো দিন।
(মুক্তগদ্যের বই ‘রাজহাঁসের চিঠি’ থেকে)