#পিচ্চি_বউ (পর্ব :-০৬)
writer :- #সাইফুল_রাজ
অভিমান, নীরবতা আর প্রথম টান
:- সকালটা শুরু হলো অস্বস্তিকর নীরবতায়।
:- প্রিয়া ঘুম থেকে উঠে দেখল, রাজ আগেই বেরিয়ে গেছে।
:- টেবিলের ওপর রাখা ঠান্ডা চায়ের কাপটা তার চোখে পড়ল।
:- বুঝতে পারল, রাজ কিছু না বলেই চলে গেছে।
:- বুকের ভেতর হালকা কষ্ট জমে উঠল।
:- তবুও সে নিজের কাজ শুরু করল।
:- রান্নাঘরে ঢুকতেই শাশুড়ির কণ্ঠ—
:- “বউমা, আজ দুপুরে মামার বাড়ি থেকে লোক আসবে।”
:- প্রিয়া বলল, “জি মা।”
:- “খাবারের ব্যবস্থা ভালো হওয়া চাই।”
:- কথার ভেতরে চাপ স্পষ্ট।
:- প্রিয়া মাথা নিচু করে কাজ ধরল।
:- আজ সে নিজেকে প্রমাণ করতে চায়।
:- সকাল থেকে রান্নাঘরে ব্যস্ততা বেড়ে গেল।
:- শাশুড়ি বারবার এসে তাকাচ্ছেন।
:- “এটা ঠিক করেছ?”
:- “ওটা ভালো করে দেখেছ?”
:- প্রিয়ার হাত কাঁপছে, তবুও মন শক্ত।
:- রিমি এসে বলল, “ভাবি, একটু পানি খান।”
:- প্রিয়া হাসল, “পরে খাব।”
:- দুপুরের দিকে অতিথিরা আসতে শুরু করল।
:- বাড়ি ভরে গেল কোলাহলে।
:- প্রিয়া একাই রান্না সামলাচ্ছে।
:- কেউ তার প্রশংসা করছে না, কেউ খেয়ালও করছে না।
:- শাশুড়ি আত্মীয়দের সামনে বললেন—
:- “নতুন বউ, তাই একটু অগোছালো।”
:- কথাটা প্রিয়ার কানে গেল।
:- বুকটা ভারী হয়ে উঠল।
:- তবুও সে চোখ নামিয়ে কাজ চালিয়ে গেল।
:- খাবার পরিবেশন শুরু হলো।
:- সবাই খেয়ে প্রশংসা করতে লাগল।
:- “খাবার খুব ভালো হয়েছে।”
:- “বউমা তো ভালোই রান্না জানে!”
:- শাশুড়ির মুখ শক্ত হয়ে গেল।
:- প্রিয়ার মনে সামান্য স্বস্তি।
:- ঠিক তখনই রাজ বাড়ি ফিরল।
:- সে ভিড় দেখে একটু থমকাল।
:- অতিথিদের সঙ্গে বসতে হলো তাকে।
:- কেউ একজন বলল, “রাজ, তোমার বউ তো বেশ গুণী!”
:- রাজ হালকা হেসে বলল, “হুম…”
:- কিন্তু সেই হাসিতে উষ্ণতা নেই।
:- প্রিয়া দূর থেকে তাকিয়ে রইল।
:- তার চোখে লুকোনো অভিমান।
:- দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো।
:- অতিথিরা চলে গেল।
:- প্রিয়া ক্লান্ত শরীরে থালা ধুচ্ছিল।
:- শাশুড়ি এসে বললেন—
:- “আজ একটু ঢিলেমি করেছ।”
:- প্রিয়ার হাত থেমে গেল।
:- এত প্রশংসার পরও এই কথা?
:- সে আস্তে বলল, “ভুল হলে বলবেন মা।”
:- শাশুড়ি কিছু না বলে চলে গেলেন।
:- প্রিয়ার চোখে পানি জমে উঠল।
:- সে দ্রুত মুখ ঘুরিয়ে নিল।
:- রাজ সব দেখছিল দূর থেকে।
:- তার ভেতরে অদ্ভুত অস্বস্তি।
:- সন্ধ্যায় প্রিয়া ঘরে চুপচাপ বসে ছিল।
:- রাজ ঢুকে বলল, “খাওনি কেন?”
:- প্রিয়া বলল, “ক্ষুধা নেই।”
:- রাজ বুঝতে পারল, এটা ক্ষুধার কথা না।
:- “আজ খুব কষ্ট হয়েছে?”
:- প্রশ্নটা হঠাৎ।
:- প্রিয়া তাকাল—
:- “কষ্ট তো প্রতিদিনই হয়।”
:- রাজ থমকে গেল।
:- “আমি চেষ্টা করছি…”
:- প্রিয়া শান্ত গলায় বলল, “আমি অভিযোগ করছি না।”
:- কথাটাই রাজকে বেশি আঘাত করল।
:- রাজ চুপচাপ বেরিয়ে বারান্দায় দাঁড়াল।
:- আকাশে অল্প অল্প মেঘ।
:- তার মনে প্রশ্ন—
:- “আমি কি সত্যিই অন্যায় করছি?”
:- রাতে হালকা বৃষ্টি নামল।
:- ছাদের টিনে টুপটাপ শব্দ।
:- প্রিয়া জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে।
:- রাজ এসে পাশে দাঁড়াল।
:- দুজনেই চুপ।
:- বৃষ্টির শব্দই কথা বলছে।
:- হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকাল।
:- প্রিয়া একটু চমকে উঠল।
:- রাজ অবচেতনে বলল, “ভয় পেয়েছ?”
:- প্রিয়া মাথা নাড়ল, “না… অভ্যস্ত।”
:- রাজের বুকটা কেঁপে উঠল।
:- এই ‘অভ্যস্ত’ শব্দটা তার মাথায় ঘুরতে লাগল।
:- রাজ আস্তে বলল, “সবকিছুতে অভ্যস্ত হতে নেই।”
:- প্রিয়া তাকাল, চোখে বিস্ময়।
:- “তাহলে?”
:- রাজ কিছু বলল না।
:- কিন্তু তার নীরবতায় লুকিয়ে রইল অনুশোচনা।
:- রাতে শুতে যাওয়ার সময় প্রিয়া বলল—
:- “আমি আপনার জীবনে জোর করে ঢুকিনি।”
:- রাজ বলল, “আমি জানি।”
:- “তবুও যদি কখনো কষ্ট দিই…”
:- রাজ থামাল, “আজ আর কিছু বলো না।”
:- দুজন শুয়ে পড়ল।
:- মাঝখানে সেই অদৃশ্য দেয়াল।
:- কিন্তু দেয়ালের গায়ে আজ প্রথম বৃষ্টির ফোঁটা পড়েছে।
:- রাজ চোখ বন্ধ করে ভাবল—
:- “এই মেয়েটা আমাকে বদলাচ্ছে।”
:- প্রিয়া মনে মনে বলল—
:- “আমি অপেক্ষা করতে পারি।”
:- বৃষ্টির শব্দে রাত আরও গভীর হলো।
:- সম্পর্কের আকাশে অল্প অল্প মেঘ সরে,
:- নতুন আলো ঢোকার পথ তৈরি হলো।
---
Be continue… ❤️❤️