একটি প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু কার্যক্রম নির্ভর করে ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন কর্মচারীদের পারস্পরিক দায়িত্ববোধ, সহযোগিতা এবং পেশাদার আচরণের ওপর। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অনেক অফিসে কিছু অধস্তন কর্মচারীর দায়িত্বহীনতা ও অবহেলার কারণে পুরো ব্যবস্থাপনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। তারা সারাদিন একটি নির্দিষ্ট কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকার অজুহাত দেখায় এবং নতুন বা অতিরিক্ত কাজের কথা বললেই পূর্বের কাজের ব্যস্ততা সামনে এনে বাকি কাজগুলো পেন্ডিং রাখে।
এই ধরনের কর্মচারীদের কাজের ধরন দেখে অনেক সময় মনে হয়, তারা যেন নিজের বেতনের বিনিময়ে দায়িত্ব পালন করছেন না; ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাজ করে দিচ্ছেন। নিজের সিদ্ধান্তে কোনো কাজ সম্পন্ন না করে প্রতিটি ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঊর্ধ্বতনের কাছে হাজির হন—“এটা ঠিক আছে কিনা দেখে নিন”, “এভাবে করলে সমস্যা হবে কি না”—এই ধরনের প্রশ্নে কাজের গতি আরও শ্লথ হয়ে যায়। ফলে যে কাজটি অধস্তন কর্মচারীর করার কথা ছিল, সেটির চূড়ান্ত দায়িত্ব ও বাস্তব কাজ শেষ পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকেই করতে হয়।
এর পাশাপাশি, কাজের ক্ষেত্রে ভুল হলে তার দায়ভার গ্রহণের মানসিকতা অনেকের মধ্যেই অনুপস্থিত। ভুল হলে দোষ চাপানো হয় পরিস্থিতির ওপর, সহকর্মীর ওপর অথবা সরাসরি ঊর্ধ্বতনের ওপর। নিজের কাজের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরিবর্তে তারা দায় এড়ানোর পথ খোঁজে। কখনো কখনো অগোছালো ও হযবরল কাজ নিয়ে এসে ঊর্ধ্বতনের সামনে উপস্থাপন করা হয়, যেন শুধু দেখানোর জন্যই কাজটি করা হয়েছে—কাজের মান বা ফলাফল নিয়ে কোনো চিন্তা নেই।
এই পরিস্থিতিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এক ধরনের নীরব নির্যাতনের শিকার হন। একদিকে তাঁকে নিজের দায়িত্ব পালন করতে হয়, অন্যদিকে অধস্তনদের কাজ সংশোধন, পুনর্নির্দেশনা এবং শেষ পর্যন্ত নিজ হাতে কাজ শেষ করার চাপ নিতে হয়। এতে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়, কর্মক্ষেত্রে বিরক্তি তৈরি হয় এবং পুরো অফিস পরিবেশ নেতিবাচক হয়ে ওঠে। দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব পড়ে প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও সেবার মানের ওপর।
5
View