পোস্টস

চিন্তা

মার্কুইস ডি ভভেনার্গু-র এক গুচ্ছ প্রবচন

৭ জুন ২০২৪

অরিত্র আহমেদ

মূল লেখক মার্কুইস ডি ভভেনার্গু (১৭১৫-১৭৪৭)

অনুবাদক অরিত্র আহমেদ

  • মার্কুইস ডি ভভেনার্গু (১৭১৫-১৭৪৭) ছিলেন আঠারো শতকের এক ফরাসি লেখক ও মোরালিস্ট দার্শনিক। মোরালিস্ট ধারার অন্যান্য দার্শনিকদের মতোই তিনিও তাঁর সকল ভাবনা প্রকাশ করেছেন ম্যাক্সিম, তথা সংক্ষিপ্ত প্রবচনের আকারে। এফ. জি. স্টিভেন্স অনূদিত The Reflections and Maxims of Luc De Clapiers Marquis of Vauvenargues বইয়ে তাঁর সাতশো'র বেশি প্রবচন সংকলিত হয়েছে। ওই সংকলনেরই ৫৫ টি প্রবচনের অনুবাদ এখানে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

  •  যুদ্ধের চেয়ে দাসত্বের বোঝা বেশি ভারি। 
     দাসত্ব মানুষকে এতো নীচে নামিয়ে দেয় যে মানুষ দাসত্বের মোহে মোহিত হয়ে পড়ে।
     খারাপ রাজার সমৃদ্ধি তার প্রজাদের জন্য এক দুর্যোগ ছাড়া কিছু নয়।
     আমরা যাদেরকে ভালো বানাতে পারি না, তাদেরকে অসুখী বানানোর কোনো অধিকার আমাদের নেই।
     অভ্যাস সর্বশক্তিমান, এমনকি ভালোবাসার বেলায়ও। 
     প্রশংসা, ভালোবাসার মতোই, জীর্ণ হয়ে যায়। 
     করুণা ছাড়া কেউ ন্যায়বান হতে পারে না।
     যুক্তি আমাদেরকে প্রকৃতির চেয়ে বেশি ঘন ঘন ভুল পথে চালিত করে। 
     মস্তিষ্ক কখনো হৃদয়ের চাওয়া-পাওয়া বুঝতে পারে না।
     বড়ো কিছু অর্জন করতে হলে আমাদের এমনভাবে বাঁচতে হবে যেনো আমরা কখনো মরবো না।
     মৃত্যুচিন্তা আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, কারণ এর কারণে আমরা বেঁচে থাকতে ভুলে যাই। 
     আবেগ মানুষকে শিখিয়েছে যুক্তি প্রয়োগ করতে।
     তরুণেরা তাদের নিজেদের ভুলের চেয়ে বুড়োদের বিচক্ষণতার কারণে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়। 
     মানুষের ক্ষতি যারা করে, তাদের একটা সাধারণ অজুহাত হলো, তারা মানুষের ভালোটাই চেয়েছিলো।
     আইনের চেয়ে স্বৈরাচার বেশি কড়া।
     ঘৃণা বন্ধুত্বের চেয়ে শক্তিশালী, তবে ভালোবাসার চেয়ে দুর্বল। 
     সময়ের মূল্য যে জানে না, খ্যাতি তার জন্যে নয়।
     বশ্যতা স্বীকার করার জন্যই যার জন্ম হয়েছে, সে সিংহাসনে বসলেও বশ্য হয়েই থাকবে। 
     মনে তো হয় না যে প্রকৃতি মানুষকে স্বাধীন হওয়ার জন্য সৃষ্টি করেছে।
     দাসত্ব হলো সমাজের সন্তান।
     দুর্বল অধীন থাকতেই পছন্দ করে, কারণ তার দরকার নিরাপত্তা। মানুষকে যারা ভয় করে, তারা পছন্দ করে আইন। 
     সবকিছু যে সহ্য করতে পারে, সবকিছু করার সাহসও সে করতে পারে।
     মানসম্মান বাঁচিয়ে চলতে চাইলে অনেক অপমান দেখেও না দেখার ভান করতে হয়। 
     মেজাজে দৃঢ় এবং চিন্তায় নমনীয় হওয়া ভালো। 
     এমনকি যে প্রশংসা আন্তরিক নয়, তা শুনেও আমরা মাঝেমাঝে আনন্দিত হই।
     বিরাট অপমানের ক্ষেত্রে আমরা খুব কমই সান্ত্বনা খুঁজে পাই; আমরা সেগুলো খালি ভুলে যাই। 
     চিন্তার চেয়ে প্রয়োজন আরো ভালো বেদনানাশক। 
     প্রয়োজন যে ক্ষতকে সারাতে পারে না, প্রয়োজন তাকে আরো বিষাক্ত বানায়। 
     ধৈর্য্য হলো আশা করার শিল্প। 
     সমৃদ্ধি খুব কম বন্ধু তৈরী করে ।
     হতাশা কেবল আমাদের অসুখই বাড়ায় না, আমাদের দুর্বলতাও বাড়ায়।
     ভালো ও মন্দের চরম রূপ সাধারণ মানুষের অনুভব-ক্ষমতার বাইরে।
     প্রকৃতিতে স্ববিরোধী কিছু নেই। 
     বিশ্বাস হলো অসুখীর সান্ত্বনা, সুখীর আতঙ্ক। 
     প্রতারণা করার শিল্পই হলো মানুষের মন জোগানোর শিল্প। 
     সত্য ছাড়া কিছুই টেকে না।
     অনেক সুখী মানুষই জানে না যে তারা সুখী। 
     উদারতা উপদেশ দেয় না, বরং সাহায্য করে।
     খ্যাতির লিপ্সা সাহসী মানুষের জৌলুস বাড়ায়। 
     প্রতিটা মানুষ সত্যবাদী হয়ে জন্ম নেয়, আর মিথ্যুক হয়ে মরে।
     আমাদের সকল বন্ধুর মৃত্যু আমাদেরকে নাড়া দেয় না। 
     আমরা যা ভাবি, আমরা তা কদাচিৎ বলি কিংবা লিখি।
     বিরাট সৌভাগ্যের চেয়ে বিরাট প্রতিভা বিরলতর।
     ধন-সম্পদের চেয়ে প্রভাব-প্রতিপত্তি বেশি মূল্যবান।
     কিছু অসাধারণ মানুষ আছেন, যারা অবসাদ থেকে মুক্তি পান কেবল তাদের বন্ধুদেরকে পরিত্যাগ করার মাধ্যমে। 
     সদগুণ যদি নিজেই নিজের পুরস্কার হতো, তাহলে এটা আর মানবিক বৈশিষ্ট্য হয়ে থাকতো না, বরং অলৌকিক কিছু হয়ে যেতো। 
     ভালো অজুহাত আমাদের অনেক আছে, কিন্তু ভালো দৃষ্টান্ত আছে খুব কম।
     আমাদের চিন্তা আমাদের কাজের মতো এতো উৎকৃষ্ট নয়।
     দারিদ্র্যের হাত থেকে যারা বেঁচে যায়, তারা দম্ভের হাতে ধরা পড়ে।
     দম্ভ হলো দুর্বলের সান্ত্বনা। 
     এক হিসেবে পৃথিবীর সমস্ত বইয়ের প্রধান সমস্যা হলো সেগুলো অতিরিক্ত দীর্ঘ । 
     যুক্তির মোহে মোহিত কোনো মানুষ যখন দেখি, তখন বাজি ধরে আমি বলে দিতে পারি যে, মানুষটা যৌক্তিক নয়।
     আশা হলো একমাত্র ভালো জিনিস, যাকে মোহভঙ্গ সম্মান করে। 
     একটা ফ্যাশনকে সরিয়ে দিয়ে আরেকটা ফ্যাশন আসে; মানুষের মন এতোই সংকীর্ণ যে সে একই সময়ে একটার বেশি দু’টো জিনিসকে মূল্য দিতে পারে না।
     চিরস্থায়ী কোনো কিছুই খুব একটা সুখকর নয়, এমনকি জীবনও নয়; তবু আমরা একে পছন্দ করি।