পোস্টস

গল্প

দাদির মৃত্যু;শতবর্ষী জীবনের অন্তর্ধান

৯ জুন ২০২৪

নেয়ামতুল্লাহ তাকবীর

দাদি ইন্তেকাল করেছেন গত সন্ধ্যায়। সূর্য যেমন নিস্তেজ হতে হতে সহসাই ডুবে যায়, দাদির জীবনের সলতেটাও জ্বলতেজ্বলতে সহসাই নিভে গেছে দিনের আলোর সঙ্গে সঙ্গে।


 

অবশ্য দাদি ইন্তেকাল করেছেন আরও দেড় মাস আগে। চোখ দুটো, হাত-পা, গোটা দেহসবই নিথর, নিশ্চল। বেঁচে ছিলশুধু নিঃশ্বাসটুকু। এই নিঃশ্বাসের সঙ্গেই ঝুলে ছিল দাদির জীবন। কী আশ্চর্য! আমরা আমাদের দেহের কত যত্ন নেই।পরিচর্যা করি। দাদিও করেছেন। পায়ে এঁকেছেন আলতা রঙের ফুল, হাতে পরেছেন চুরির গোছা, চোখে টেনেছে সুরমারেখাকোনো এক দিন। অথচ এই হাত-পা-চোখ মরে যাওয়ার পরেও বেঁচে ছিলেন দাদি, শুধু একটু নিঃশ্বাসের জোরে। তাহলে কিএই নিঃশ্বাসই আমাদের জীবন, যার কোনো যত্ন নিতে হয় না! পরিচর্যা করতে হয় না! অর্থাৎ জীবনের জন্য আমাদের কোনোখরচ নেই! আমরা জার্নি করি শুধুই জীবনের বহিরাবরণের জন্যযা মরে গেলেও আমরা বেঁচে থাকি মুফতে পাওয়ানিঃশ্বাসের জোরে!


 

দাদির মৃত্যু হয়েছে কংক্রিটের ঢাকায়, যেখানে খেলাঘরের খেলা শেষে বিশ্রামের জন্য এক পশলা মাটির ছোঁয়া পাওয়া যায়না। মৃত্যু বরিত হয় অবধারিত জায়গায়। তবু দোয়া করতে মন চায়, আল্লাহ এই ঢাকার আবহাওয়ায় দুশমনকেও মৃত্যু নাদিন। ঢাকা যেমন জীবন যাপনের উপযুক্ত শহর নয়, তেমনই মৃত্যু বরণেরও উপযুক্ত শহর নয়। এই শহর শুধুইঅমানবিকতার শহর। আমি এই শহরে মৃত্যুবরণ করলে ওপার জীবনে হয়ত অপরাধবোধে ভুগবো!


 

আমার দাদির জীবন ছিলো শতবর্ষী। আমার ভাগ্য যেআমি একটি শতবর্ষী জীবনের অবসান যেমন দেখেছি, একটিশূন্যবয়সী নক্ষত্রেরও ঝরে পরা দেখেছিখুবই আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে।

যেকোনো মৃত্যুর ঘটনায় সবার আগে মনে পরে আমার মেয়ের মৃত্যুর কথা; দাদীর মৃত্যুতে তা পরেছে আরও বেশি। আমারমেয়েটির কথা মনে পড়লে কলমে আর লেখা আসে না...


 

আল্লাহ উভয়কে জান্নাতে একত্র করে দিন।

---


 

৩০, , ২০২৪ .

বিএম কলেজ মসজিদ, বরিশাল

ওয়াক্তে ফজর