Posts

চিন্তা

জুন মাসের কথা

June 9, 2024

নূহা চৌধুরী

Original Author নূহা চৌধুরী

95
View

এক শনিবার বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে বাসার এক কোণায় ছোট্ট রুমে গা এলিয়ে পড়ছিলাম পারুল ও তিনটি কুকুর। বইয়ে যখন পারুল হিসহিসিয়ে বলছে কিল হিম, কিল হিম, মামাতো ভাই এসে আমাকে থামিয়ে দিলো। আপুরা কাঁদছে। আমি ঠিকঠাক বুঝলাম না। আপুরা কান্না করবে কেন? আপুরা সবাই খুব ফর্সা। উঠে গিয়ে দেখি দুইজনের গাল আর চোখ টকটকে লাল। কুশনে একজন মুখ চেপে বসে আছে। ক্রিংক্রিং করে টিএনটি ফোনটা বাজলো।

২০০৩ সাল। তখন জানালা খুলে দিলে পাঁচতলার ওপর হুহু বাতাস। গরমের ছুটিটা এপ্রিলেই শেষ হয়। তখনও সে বছরের এসএসসির রেজাল্ট বের হয়নি। কালো একটা স্কার্ট আর নীল একটা শার্ট পরে গল্পের বই খুলে মামার বাসায়। ঐ বাসায় অনেক গুলো কাজিন। লেবু মাখা খেতে খেতে সন্ধ্যায় আমরা লুডো খেলি। নানীর অল্প জ্বর। সে হাসপাতালে। বাসায় আমাকে দেখা কঠিন তাই মামার বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে মা। পড়াশোনা করবো বলে বই পত্তর এনেছি। পড়ছি হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল আর সেবার অনুবাদ। ড্রাকুলা পড়া শেষ। পারুল এবং তিনটি কুকুর পড়া ধরেছি। সে বাড়ির মাস্টার বেডরুমের ওয়াটারবেডে ঘুমিয়ে থাকতে খুব আরাম হবে বই পড়ে বেশ বোঝা যাচ্ছে। দুপুরের খাবার কোনমতে গিলে বইটা নিয়ে পড়েছি আবার। ইন্টারেস্টিং স্টোরি। আপুরা কাঁদছে শুনে উঠে গেলাম। ১০০ ভাগ ধারণা ছিল খেলছি না বলেই ছোটটা এসে এমন মিথ্যা বলছে।

লাশ বাড়িতে নিয়ে যাবে। শুনে আমি চমকে তাকাই। বড় আপু ফোনে জানাচ্ছে। কে মারা যেতে পারে আমি ভাবি। কেউ কি একসিডেন্ট করলো? কার জন্য এত কান্না হতে পারে?

বেল বাজলে ছুটে যাই। বড় আপুর বান্ধবী এসে পাশে বসে আপুর। আবার বেল দিলে আবার ছুটে যাই। ছোট আপু এসেছে কোচিং থেকে। কান্না কান্না মুখ হয়ে যায় আমার। কি হয়েছে ছোট আপু জানতে চায়। বলি কিচ্ছু জানিনা। সবাই কাঁদছে।

ছোট আপুর পিছে পিছে শোবার ঘরে যাই। টিএনটি ফোনটা বেজেই চলেছে এ্কটু পর পর। লাশ শব্দটাই শুনি। কে লাশ তখন ও বুঝে উঠতে পারিনা। আকাশ কালো হয়ে এসেছে মেঘ জমে জমে।ছোট আপু ব্যাগ ফেলে থমথমে। ও সবার মতো কান্না করতে পারেনা। বড় আপুর বান্ধবী আমাকে বলে ব্যাগ গুছাও। গ্রামে যাবা তোমরা। দাদু মারা গেছে।

আমি অবাক হয়ে তাকাই। দু দিনের জ্বরে মানুষ মরে যায়? এটা কেমন কথা হলো? এবার আসার সময় আমার জন্য বৈচির ঝাঁড় তুলে আনলো। পৌঁছালো যখন তখন ভোর। ছোট্ট আমি ঘুম ঘুম চোখে জড়িয়ে ধরেছিলাম। গা থেকে ভেসে এসেছিলো পান শ্যাওলার ঘ্রাণ।

বাইরে ঝুম করে বৃষ্টি নামে। আমার মনে হয় আমাদের সবার কষ্টে আকাশটা কাঁদছে। একুশ বছর সময় পার হয়ে গেছে। মনে হয় এই তো সেদিন। জুন মাস ছিল। এখন আরো কত জুন পার। স্মৃতি সবসময় চোখ পোড়ায়। এ বিশাল ব্রক্ষ্মান্ড থেকে একদিন আমার ও যেতে হবে। তারপর অনেক বছর স্মৃতি থাকবে। তারপর সব ধূলো ধূলো। সব বাষ্প। এতো এতো কষ্ট বুকে ধরে মানুষ বেঁচে থাকে এখানে। কেন থাকে? কি দরকার এতো কিছুর?

#এলোমেলো

Comments

    Please login to post comment. Login