Posts

পোস্ট

বিতর্ক ভুবনঃ বিতার্কিকের সেরা বন্ধু

October 24, 2023

তাহসিন আলম উৎস

Original Author তাহসিন আলম উৎস

265
View
বিতর্ক ভুবনঃ বিতার্কিকের সেরা বন্ধু

বিতর্ক একটি শিল্প। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে এই শিল্পের চর্চা যথেষ্ট নয়। এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হলো বিতর্কের ব্যাপারে উপযুক্ত ও পূর্ণাঙ্গ বইয়ের অভাব। এই প্রয়োজনটা উপলব্ধি করতে পেরেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল তরুণ বিতার্কিকদের জন্য “বিতর্ক ভুবন” বইটি লিখেছেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় পর্যায়ে সেরা বিতর্কিকের শিরোপা পাওয়া এই ব্যক্তিটি বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বোঝাই যাচ্ছে, বিতর্কে তার অভিজ্ঞতার ঝুড়ি মেলা ভারি। সেই অভিজ্ঞতাগুলোর আলোকেই তিনি মৌলিক কিছু বিষয়কে “বিতর্ক ভুবন” বইয়ে তুলে ধরেছেন। একজন বিতার্কিক হিসেবে আমি আগ্রহের সাথে বইটা পড়ে দেখি। 

বইয়ের ব্যবচ্ছেদ

কী আছে এই বইতে? না, এভাবে প্রশ্ন না করে যদি প্রশ্ন করা হতো, কী নেই এই বইতে, তাহলে বোধ হয় উত্তর দিতে সুবিধা হতো। আমি যদি গুণতে ভুল না করি, তাহলে এই বইয়ে মোট ৩৮ টি অধ্যায় রয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে বিতর্কের তিনটি ধারা নিয়ে সংক্ষিপ্ত ধারণা দেওয়া হয়েছে। যথাঃ প্রত্যক্ষ ধারা, প্রতীকী ধারা, এবং উন্মুক্ত ধারা। চারটি পৃষ্ঠার মধ্যে এই তিনটি বিষয়কে খুব সহজ ভাবে বর্ণনা করেছেন লেখক। 

পরবর্তী অধ্যায়ে বিতার্কিকের কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বইটার তৃতীয় অধ্যায়টি বিতর্কের প্রাণ ”যুক্তি”কে তুলে ধরেছে। কীভাবে যুক্তি প্রয়োগ করে প্রতিপক্ষের যুক্তিকে খন্ডন করতে হয়, সে ব্যাপারে বিশদ আলোচনা এই অধ্যায়ে ফুটে উঠেছে। 

চতুর্থ অধ্যায়টি একটু ব্যতিক্রম। বিতর্কের মাধ্যমে কীভাবে দর্শক-শ্রোতাকে নিজের পক্ষে উদ্বুদ্ধ করা যায়, সেটার নিনজা টেকনিক এখানকার মূল আলোচ্য বিষয়। পঞ্চম অধ্যায়টা বিতার্কিকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখানে বিতর্ক প্রস্তুতির ষড়ভুজ মডেলকে (Hexagon model for debate prep.) তুলে ধরা হয়েছে। এই মডেলটার ব্যাপারে জানা না থাকলে আদর্শ বিতর্ক করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই এখানে সাবলীল ভাষায় এগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পরবর্তী অধ্যায়ে বিতার্কিকের জন্য বিতর্কের উয়াপাদানগুলোকে তুলে ধরা হয়েছে। সেগুলো আবার কী? জানতে হলে পড়তে হবে বইটির ষষ্ঠ অধ্যায়।
বিতর্ক একটি শিল্প

সপ্তম থেকে শুরু করে অষ্টাদশ অধ্যায় পর্যন্ত ছোট-বড় বিভিন্ন মডেলের বিতর্ক নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করা হয়েছে। যেমনঃ সংসদ মডেল, জাতিসংঘ মডেল, আদালত মডেল, বিতার্কিকা মডেল ইত্যাদি। এ পর্যন্ত বিতর্কের প্রাথমিক ও ভিত্তিমূলক বিষয়ের বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু এরপর থেকে বিতর্কের গভীরের বিভিন্ন বিশ্লেষণধর্মী লেখা খুঁজে পেয়েছিলাম। 

উনবিংশ অধ্যায়ে “বিতর্কের তত্ত্বীয় দিক” নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যেমনঃ বিতর্কের শর্তাবলী, উদ্বুদ্ধকরণ চক্র, বিতর্কের ভারসাম্য ইত্যাদি। পরবর্তী অধ্যায়ের নাম “বিতর্কে উৎকর্ষ অর্জন”। বিতর্কের জন্য বিতার্কিককে কীভাবে প্রস্তুত হতে হবে এবং কোন কোন বিষয়ের উপর নজর দিতে হবে, সে ব্যাপারে জানতে হলে এই অধ্যায়টি পড়তে হবে। এরপরের অধ্যায়ে বিতর্কের বিচারপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ নম্বর বণ্টনের ক্ষেত্র এখানকার আলোচ্য বিষয়। 

পরবর্তী ছয়টি অধ্যায়ে বিতর্কে বিশ্বাস, রম্য, আবেগ, সংগীত, ভালোবাসা ও বিদ্বেষের উপস্থিতি-গুরুত্ব নিয়ে লেখক বিস্তারিত বর্ণনা লিখেছেন। বইয়ের বাকি অংশের অধিকাংশ আলোচনাগুলো আরেকটু অ্যাডভান্সড লেভেলের। যেমনঃ বিতর্ক ও সাংবাদিকতা, টেলিভিশন বিতর্কের সংকট, যুক্তিবাদী সমাজের বিনির্মাণ ইত্যাদি। এসব অধ্যায়ের মূল বিষয় হলো বিতর্ককে বাস্তবজীবনে কাজে লাগিয়ে সমাজ ও জাতির কল্যাণে কীভাবে ভূমিকা রাখা যায়। বইয়ের শেষ তিনটি অধ্যায় আবার একদমই আলাদা। ঐগুলোর ব্যাপারে কোনো বর্ণনা লিখব না। পাঠকেরা বইটা পড়লেই বেশি মজা পাবে বলে মনে করি। তো, এই ছিল বইটার আলোচ্য বিষয়।
বইটা পড়ে অনেক কিছু জানা সম্ভব


জেনেছি ও শিখেছি

১. যে কথাটা সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে, তা হলো, “নিরাশ মানুষ কখনো বিতর্ক করতে পারেন না।“ এটা আমাকে অন্যরকম অন্যপ্রেরণা যুগিয়েছিল। 

২. বিতর্কের মানে প্রতিযোগিতা নয়। একজন আদর্শ বিতার্কিক বাস্তবজীবনেও যুক্তিবাদী, বিচক্ষণ এবং মুক্তমনা হয়ে থাকেন। বইটা পড়েই এটা উপলব্ধি করতে পেরেছি। 

৩. বিতর্কে আবেগ, বিশ্বাস, রম্য ও ভালোবাসা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হয়ত বা জানতে পারতাম না যদি এই বইটা না পড়তাম। 

৪. বইটার কল্যাণে বিতর্ক কীভাবে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতির উন্নয়ন করতে পারে, সে সম্পর্কেও ধারণা লাভ করেছি। 

শেষ কথা

“অসাধারণ” শব্দটা দিয়েই বইয়ের ব্যাপারে মতামত দিতে চাই। এই বইটা পড়ে যেকোনো বিতার্কিক উপকৃত হবেই। আমার কাছে মনে হয়, সবচেয়ে বেশি সুফল পাবে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বইটা এমনভাবে লেখা হয়েছে যে যেকোনো বয়সের পাঠকই এখান থেকে রস আস্বাদন করতে পারবে। একজন বিতার্কিক হিসেবে বলব, এই বইটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
বইটি রকমারি থেকে সংগ্রহ করা যাবে
এই বইটা আমি তেমন কোনো ত্রুটি বা অসঙ্গতি খুঁজে পাইনি। তবে একটা বিশেষ মতামত হলো, যদি বইটিতে বিতর্কের কয়েকটি নমুনা শিরোনাম দেওয়া থাকতো, তবে শিক্ষার্থীরা সেগুলো চর্চা করতে পারতো বলে মনে করি। আশা করি, পরবর্তীতে কোন এক সংস্করণে এই ক্ষুদ্র পরিবর্তনটুকু দেখতে পাবো। 

 

Comments

    Please login to post comment. Login