পোস্টস

গল্প

শহরের বৃষ্টিস্নাত রাত

১০ জুন ২০২৪

মো. হাবিবুল

রাত্রিতে নিজ ঘর হইতে দূরে অবস্থান কালে পথিমধ্যে হঠাৎ বৃষ্টির আগমন হইলে,গৃহে ফেরার ভাবনায় মানুষ একটু উদবিগ্ন হইয়া ওঠে।কিন্তু রজনীর সে বৃষ্টিপাতকে আনন্দের সাথে  আলিঙ্গন করিবে আমার তৃষ্ণার্ত হৃদয়।আনন্দের বেগ ভারি করিতে আরও ঘোর বৃষ্টিবিন্দুর প্রার্থনা করিব, যাহাতে সমস্ত মানুষ শীঘ্রই আপন কাজ ছাড়িয়া বাড়ি ফিরিয়া যায়।এতে শহরের রাস্তা হইবে লোকশূন্য। বাদলের  প্রচণ্ড ধারায় শহরের প্রসস্থ রাস্তার দুপাশে থাকিবে না কোনো মানবসৃষ্ট আওয়াজ,থাকিবে না অর্থকড়ি বিনিময়ের কোলাহল,থাকিবে না প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বাজানো মটরগাড়ির হর্ণের বিশ্রী শব্দ,থাকিবে শুধু আকাশ থেকে ভেসে এসে কংক্রিটের উপর আছড়ে পড়া কাঙ্ক্ষিত সেই বৃষ্টিমুখর আওয়াজ (Imagine)।

 বৃষ্টির সেই আওয়াজই আমার কানে বাজিবে কোনো এক অনন্ত কালে প্রিয়ার কোলে মাথা রাখিয়া শোনা গানের সুরে।জলের প্রতিটি ফোঁটা বস্ত্র ভেদ করিয়া শরীরে বিঁধিবে প্রেয়সীর দেওয়া আচমকা চিমটির মতোই। আমার এ উন্মাদ অবস্থায় ঝড় অপেক্ষা করিয়া রুজির সন্ধানে বাহির হওয়া কোনো এক রিকশাওয়ালা মামা বৃষ্টিস্নাত হইয়া প্রাঞ্জল হাসিতে বলিবে, "মামা কোথায় যাবেন?" আমি অন্তরের সমস্ত বিনয় একত্রে সহাস্য মুখে তাঁহাকে বলিব, "ক্ষমা করিবেন,আজ কোনো বাহনে নয়, দুপায়ে হাঁটিয়া ফিরিব ঘরে।"   

রাস্তার দুপাশের  কৃত্রিম আলোকসজ্জায় সজ্জিত হইয়া গগন ভেদ করিয়া নামা প্রতিটি বৃষ্টির ফোটা আজ দেখিব।দেখিব, কীভাবে বৃষ্টি শহরের লোকালয়ে মুহূর্তেই  নিস্তব্ধতা নামিয়া আনে,দেখিব বৃষ্টিতে মৃতপ্রায় শুকনো লতাপাতা কীভাবে ত্বরিত গতিতে জীবনানন্দের চিরসবুজ রং ধারণ করে।আরও দেখিব,যুবক যুবতী বহুতল ভবনের চূড়ায় দুহাত আকাশের পানে প্রস্তুত করিয়া কতটা উচ্ছ্বাসে এ বৃষ্টিকে আলিঙ্গন করার মধ্যে দিয়ে তাঁর প্রিয়/প্রিয়াকে কামনা করে।   অতঃপর হঠাৎই বৃষ্টি থেমে যাবে,আর তাতে আমার হৃদয়ে নেমে আসবে পৃথিবী থেকে পাওয়া পূর্বের সেই ঘোর অন্ধকার।যে অন্ধকার থেকে বৃষ্টি আমাকে নিয়ে গিয়াছিল অচেনা এক স্বর্গসুখে ।তাই শহরের বুকে প্রতিনিয়ত নামিয়া আসুক ভুবনভুলানো সেই বৃষ্টি আর তাতে ধুয়েমুছে যাক হাজারো হৃদয়ের অন্ধকার।