রাত গভীর হতে চলেছে। গ্রামের শেষ প্রান্তে একটা ছোট্ট কুঁড়েঘর। ঘরের মধ্যে শুধু একটা মোমবাতি জ্বলছে। ঘরের এক কোণে বসে আছে ১২ বছর বয়সী আরিফ। তার চোখে ভয় আর কৌতূহল, কারণ আজ রাতটা তার জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।
আরিফের বাবা-মা কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। সে গ্রামের বৃদ্ধ কবির সাহেবের কাছে থাকে। কবির সাহেব ছিলেন একজন বিখ্যাত গল্পকার, যার গল্পগুলো শুধু আরিফের মনেই নয়, পুরো গ্রামের মানুষের মনেও জায়গা করে নিয়েছিল।
কিন্তু আজ রাতে কিছু একটা ভিন্ন। কবির সাহেব আরিফকে বললেন, "আরিফ, আজ রাতে তুমি একটা বিশেষ কাজ করতে যাচ্ছ। এই ঘরের পেছনের জঙ্গলে এক পুরনো কুয়ো আছে। সেখানে একটা প্রাচীন পুঁথি লুকানো আছে। পুঁথিটা আনতে হবে, কিন্তু সাবধান! সেই কুয়োর রক্ষক কিন্তু অনেক বিপজ্জনক।"
আরিফ জানে এই কাজ সহজ হবে না। তার হাত-পা কাঁপছে, কিন্তু সে সাহস সঞ্চয় করে জঙ্গলের দিকে পা বাড়াল। রাতের অন্ধকারে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ সে কুয়োটা দেখতে পেল। কুয়োর পাশে একটা পুরনো মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। মূর্তিটার চোখ দুটো যেন জীবন্ত হয়ে উঠল।
আরিফ মোমবাতি জ্বালিয়ে মূর্তিটার দিকে এগিয়ে গেল। মূর্তির চোখে ভয় নেই, বরং যেন একটা চ্যালেঞ্জ। আরিফ মূর্তিকে বলল, "আমি সেই পুঁথি আনতে এসেছি, দয়া করে আমাকে যেতে দিন।"
মূর্তির চোখে হঠাৎ এক অদ্ভুত ঝিলিক দেখা গেল। আরিফ সাহস করে কুয়োর মধ্যে হাত বাড়াল এবং পুঁথিটা বের করে আনল। সেই মুহূর্তে মূর্তিটা হেসে উঠল এবং ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেল।
আরিফ দ্রুত ঘরে ফিরে এল। কবির সাহেব তার হাত থেকে পুঁথিটা নিয়ে মৃদু হাসলেন। "তুমি সফল হয়েছো, আরিফ। এই পুঁথিতে গ্রামবাসীর সকল সমস্যার সমাধান আছে। তুমি আজ সত্যিকারের নায়ক হয়ে উঠেছো।"
আরিফের চোখে আনন্দের অশ্রু। এই রাতের অভিজ্ঞতা তাকে সাহসী এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করে তুলল। গ্রামের সবাই যখন জানতে পারল আরিফের কীর্তি, তখন তারা তাকে সম্মান আর ভালবাসায় ভরিয়ে দিল। সেই রাতটা আরিফের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল, তাকে এক সাহসী এবং বুদ্ধিমান ছেলেতে পরিণত করল।