পোস্টস

গল্প

সেই মেয়েটি

১০ জুন ২০২৪

মর্তুজা আহম্মেদ

সমীর কেবল কৈশোর অবস্থায় পদার্পণ করেছে । তার বয়স ১৩-১৪ বছর হবে এবার । নতুন ক্লাশে উঠেছে সে । নবম শ্রেণির নতুন নতুন বইগুলা পেয়ে সে অনেক আনন্দিত । কিন্তু সে তার গ্রুপ ভিত্তিক সাবজেক্ট বেছে নিতে পারছে না । সবার সাথে আলোচনা করে সে বিজ্ঞান বিভাগ বেছে নেবে বলে সিদ্ধান্ত নিল । যেহেতু তার অন্য সকল বন্ধুগুলো বিজ্ঞান বিভাগ নিচ্ছিল তাই সে বিজ্ঞান বিভাগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল । যেই কথা সেই কাজ । সে তার বিজ্ঞান বিভাগের বইগুলো সংগ্রহ করে আনল স্কুল থেকে । 

 

যেহেতু সমীর বেশি ঘুরাফেরা করতো , সেদিন চলার পথে তার এক বন্ধু নীল এর সাথে দেখা হলো । তাদের কথোপকথন হলো এরকমঃ


 

নীলঃ কিরে সমীর কেমন আছিস ? কই থেকে আসলি ?

সমীরঃ আরে বলিস না । স্কুলে গেছিলাম সাইন্সের বইগুলা নিয়ে আসলাম । তুই কোন বিভাগে ভর্তি হয়েছিস ?

নীলঃ আমিও সাইন্স নিয়েছি ? তুই কী টিউশনে যাওয়া সম্পর্কে কিছু চিন্তা করেছিস ?

সমীরঃ আপাতত না । তবে চিন্তা করছি এ বিষয়ে । তুই কোনো স্যার এর কাছে পড়বি বলে ঠিক করেছিস ?

নীলঃ শেখর ও সাইমন রা যেখানে পড়বে আমিও সেখানে যাবার ঠিক করেছি । তুইও আমাদের সাথে চলে আয় কাল সকালে ।

সমীরঃ ঠিক আছে । সকাল ক'টার সময় যেতে হবে রে ?

নীলঃ তুই সকাল ৬.৩০ মিনিটে রেডি থাকিস । ৭ টায় কিন্তু ক্লাস শুরু হবে ।


 


 

পরের দিন সকালে --

সমীরের রেডি হতে বেশি দেরি লাগলো না । সে কথামতো ৭ টার আগেই প্রস্তুত । এদিকে নীল এসে হাজির । সমীরদের বাসার দরজার সামনে এসে জোরে ডাক দিলো -- “ এ সমীর কই তুই , তোর কি মনে নেই ক্লাসের কথা ?" । 

সমীর শুনতে পেল কিনা বোঝা গেল না । তবে বাসার অন্য সদস্যরা কিন্তু ঠিক ই বিরক্ত হলো । একে তো শীতের সকাল তার মধ্যে মেইন গেট খোলার ঝামেলা কেউ কাধে নিতে চাইলো না । 


 

একটু পরে সমীর তার সাইকেলসহ মেইন গেট খুলে বের হয়ে এলো । তারপর তারা দু'জনে সাইকেলে চড়ে রওনা দিলো । 

সমীরের বাসা থেকে গন্তব্য স্থানের দূরত্ব প্রায় ৪ কিমি হবে । তাই তাদের যেতে ৩০ মিনিটের মতো লাগল । ৭.০৮ মিনিটে তারা পৌঁছে গেল । সেখানে শেখর ও সাইমন তাদের সাথে যোগদিলো । 

 

পৌঁছে দেখলো যে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে । শিক্ষক সকল শিক্ষার্থীদের পদার্থবিজ্ঞান বোঝাচ্ছেন । ব্ল্যাক বোর্ডে কতগুলো গতির সমীকরণ লিখে যাচ্ছেন । সেগুলো অন্য সকল শিক্ষার্থীরা খাতায় নোট করে যাচ্ছে । 

সমীর ও নীল ক্লাসের ফাঁকা জায়গা খুঁজে নিয়ে বসে পড়লো । তারাও সমীকরণগুলো না বুঝেই নোট করতে থাকল । 


 

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শুরুতে তাদের গ্রুপ সাবজেক্ট সম্পর্কে বেশি ধারণা রাখে না । তাই তাদের বুঝতে সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক । এক্ষেত্রে সমীরও ব্যতিক্রম নয় । সেও কিছুই বুঝতে পারছে না প্রথমে । নোট করতে করতে হঠাৎ তার চোখ পড়লো এক মেয়ে শিক্ষার্থীর চোখের উপর । ঠিক সে মুহূর্তে খাতায় সমীকরণ লেখার পরিবর্তে সে যেন চোখের সমীকরণের দিকে মনোযোগ দিলো । চোখের সৌন্দর্য যে এরূপ হতে পারে সে কখনও আগে ভেবে দেখে নি । মৃগনয়নী বালিকার চোখের সৌন্দর্যে

তার খাতার সমীকরণগুলো হ-য-ব-র-ল হয়ে গেল । ঠিক এ সময় পিছন থেকে এক হাত এসে সমীরের ঘাড়ে পড়ল । সমীর ঠিক পেছনে তাকিয়ে দেখল স্যার তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন । তাকে বলছেন , “তোমার নাম কী? তুমি কোন স্কুলে পড়ো ?”

সমীর উত্তর দিল – “আমার নাম সমীর । আমি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন ছাত্র ।" 

স্যার বললেন , “ শোন বাবা তুমি এখানে পড়াশুনা করতে এসেছো । ঠিক ? “ সমীর বললো --- “জ্বী স্যার"

স্যার বললেন , “দেখ বাবা পড়াশুনার ক্ষেত্রে প্রথম যেদিকে ফোকাস করতে হবে সেটি হচ্ছে তোমার লক্ষ্য । মেয়ে সহপাঠীর চোখের দিকে না ।"


 

এটি শুনে ক্লাশের সবাই হো হো করে হেসে উঠলো । সমীর খুব লজ্জায় পড়লো । লজ্জাতে তার মুখ লাল হয়ে গেল । কোনোমতে সে সেদিন ক্লাস হতে বের হয়ে বাসায় আসতে পারলে বেঁচে যায় । ক্লাস শেষে বের হয়ে শেখর , সাইমন ও নীল একে অপরের সাথে বলাবলি করতে লাগলো যে ক্লাস কেমন ছিল, কেউ সবকিছু বুঝতে পেরেছে কি না ইত্যাদি । কিন্তু সমীরের এদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই । সে প্রথম দিনে যে লজ্জাতে পরেছে তা কোনদিন ও ভূলতে পারবে না মনে হয় । এগুলো সে ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে এলো । বাসায় এসে তার সেই চোখের কথা মনে হতে লাগলো । মেয়েটিকে সে পুরোপুরি না দেখলেও তার চোখ সে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে । সে সেদিন সারা রাত সেই মেয়েটির কথাই ভাবতে লাগলো । 


 

পাঠকরা হয়তো ভাবতে পারেন কেন সমীর তার শুধু চোখের দিকেই তাকিয়ে ছিল ? তার মুখের দিকে কেন না ? 

কারণ মেয়েটি বোরকা পরিহিত অবস্থায় ছিল । তাই তার মুখমন্ডল সমীরের দৃষ্টিগোচর হয় নি । সমীর রাতে চিন্তা করতে থাকলো এ বিষয়ে । তার চিন্তার বিষয় হলো এরকম ----


 

“মেয়েটি কে ? কেমন ? তার চোখ এমন হলে তার রূপ কেমন হবে ?” আরো অনেক কিছু ।


 

এরকম চিন্তা করতে করতে সে ঘুমিয়ে পড়লো । পরদিন সকালে সে উপলব্ধি করল যে, সে সমুদ্রের তীরে বসে আছে এবং হঠাৎ করে সাগরের ঢেউ তার চোখে মুখে এসে পড়লো । যখন তার ঘুম ভেঙে গেল তখন সে নিজেকে তার বিছানাতে আবিষ্কার করল । তখন সে চোখ খুলতেই দেখল তার মা একটি পানি ভর্তি কাপ নিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । 


 

মাঃ " দেখ , বড় সাহেবের ঘুম এখনো ভাঙে নি । তো কখন সকাল হয়েছে খেয়াল আছে ?”


 

সমীরঃ " ধুর ! দিলে তো ঘুমের বারোটা বাজিয়ে । ক'টা বেজেছে ?”


 

মাঃ " আজকে রবিবার । তোর নাকি আজকে ইংরেজি ক্লাস আছে ?”


 

সমীরঃ " হ্যাঁ । আছে বৈ কি।"


 

মাঃ " তুই ঘড়ির দিকে খেয়াল করেছিস ? দেখ এখন সময় ৬.১৫ বাজে।"


 

সমীরঃ "হায়! আজকে নতুন ইংরেজি ক্লাসেও গতকালের মতো দেরি হয়ে যাবে। আমি তাড়াতাড়ি বের হয়ে পড়লাম তুমি বিছানা গুছিয়ে দিও ।"


 


 

সমীর তারপর ইংরেজি ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওনা হলো । তার বাসা থেকে ইংরেজি ক্লাসে যেতে বেশিক্ষণ লাগলো না । সে হেঁটেই চলে গেল । সেখানেও সে দেরি করে উপস্থিত হলো । স্যার তাকে জিজ্ঞেস করলেন , “তোমার সময় সম্পর্কে কোনো জ্ঞান আছে? তুমি যদি সময় মেনে চলতে না পারো তাহলে কী করে একজন ভালো ছাত্র হবে? প্রথম দিনই এ অবস্থা?”

সমীর উত্তর দিলো, “আমার ভুল হয়ে গেছে স্যার । পরবর্তীতে আমার এমনটা হবে না।" স্যার বললেন ঠিক আছে আপনি আপনার আসন গ্রহণ করুন । 


 

সমীরকে হয়তোবা একটু মশকরা করেই একথা বললেন স্যার । সমীর বিষয়টি বুঝতে পারলো । ঠিক এসময় সমীরের চোখ আবার সেই পরিচিত চোখের দিকে পড়লো । সমীরের বুঝতে বাকি রইলনা যে এই সেই গতকালের চোখ যার মায়ায় সে পড়েছে । কিন্তু সমীর এইবার আর সেই ভুল করলো না । সে চোখ থেকে তার চোখ তখনই সরিয়ে ফেললো । সে মনে মনে ভাবলো যে - “মেয়েটি কী মনে করছে ।।। মেয়েটি কী তার সম্পর্কে বাজে ধারণা পোষণ করছে?”


 

এগুলো ভাবতে ভাবতে সে ক্লাসটি শেষ করল । গতকালের মতো সে আজও ক্লাসে মনোযোগ স্থাপন করতে পারেনি । সে শুধু ঐ চোখ দুটির কথা ভাবতে থাকলো । তার মন তাকে বলতে লাগলো , “ঐ মায়া চোখে চোখ রাখলে ফিরে তাকানো বারণ।" কোনো মতে সে তার মন কে বুঝালো --- “দেখ ভাই তোর কাজ পড়াশুনা করা। এখানে সেই উদ্দেশ্যেই তুই এসেছিস । তুই কী করছিস ?”


 

মনকে বোঝানোর পর সে রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকলো । বাড়িতে পৌঁছে সে তার কাধে ঝুলানো ব্যাগটি টেবিলের উপর ফেলে দিলো । মা তার জন্য খাবার তৈরি করে রেখেছে । তাই সে হাত-মুখ ধুয়ে খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্যে খাওয়ার ঘরে উপস্থিত হলো । খাবার খাওয়ার পর সে স্কুলে যাবার জন্য তৈরি হতে থাকলো । 


 

স্কুলে উপস্থিত হবার পর দেখলো যে তার বন্ধু নীল আজকে আসে নি । সে তার বন্ধু নীলের সাথে বেশি সময় অতিবাহিত করতো । তাই সে স্কুল শেষে তার বন্ধুর খোঁজ নেবার জন্য তার বাসায় চলে গেল । 


 

নীলের বাসায় যাবার পর --


 

সমীরঃ "বাসায় কি নীল আছে ?”

নীলের মাঃ " কে? কে? এসেছে ?”


 

সমীরঃ " আন্টি আমি নীলের বন্ধু সমীর। নীল কি বাসায় আছে ?”


 

নীলের মাঃ " হ্যাঁ ওই নবাব তো আজকে বাসাতেই আছে । "


 

সমীরঃ "আমি কী ভিতরে আসতে পারি? আমার নীলের সাথে কথা আছে।"


 

নীলঃ " আরে সমীর ।। কী অবস্থা দোস্ত ? তুই কখন এলি ? আয় ভিতরে আয় ।”


 

সমীরঃ "এই মাত্র । তুই আজকে কেন স্কুলে যাস নি্? তুই তো স্কুল কামাই করার ব্যক্তি নয় । কারণ কী খুলে বল ।"


 

নীলঃ "আসলে আজকে আমার স্কুলে যাবার মন ছিলনা রে দোস্ত । তুই এ নিয়ে ভাবিস না । তুই বরং একটি কথা শোন ।"


 

" আরে ফিজিক্স ক্লাসে স্যার যে কারণে তোকে জ্ঞান দিয়েছিলো নাহ ? মনে আছে তোর ?”


 

সমীরঃ  "আর বলিস না । বলে আমাকে লজ্জা দিস না তুই ।"


 

নীলঃ  " দোস্ত সে মেয়ে কে আমার ভালো লেগেছে । আমি চিন্তা করতেছি ওকে আমি প্রপোজ করবো ।"


 


 

একথাগুলো শুনে সমীর একটু দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে গেল । কারণ সেও যে সেই মেয়ের চোখের মায়ায় পড়ে গেছে । সে তার বন্ধুকে কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে না । তাই সমীর নীলকে কিছুই বললো না । সে খুবই লজ্জিত বোধ করলো । 


 

হঠাৎ কোত্থেকে যেন আন্টি একটি ট্রেতে করে দুই কাপ কফি নিয়ে হাজির হলেন । সমীর এর কফি খুবই পছন্দ । তাই সে লোভ সামলাতে না পেরে বলেই বসলো যে আন্টি আমি কিন্তু চিনি খুবই কম খাই । খাই না বললেই চলে । আন্টি বললেন চিনি কাপের পাশে দেওয়া আছে তোমার পরিমাণমতো নিয়ে নাও আমার আবার অন্য কাজ আছে আমি রান্না ঘরে যাই । আন্টি চলে গেলেন । এদিকে গরম কফির ধোয়া সরিয়ে সমীর কফিতে চুমুক দিয়ে দিলো । নীল সমীরকে বললো, “দোস্ত! তুই তো পড়াশুনাতে ভালো আমি জানি । তুই আমার একটি উপকার করে দিতে পারবি ?


 

সমীর বললো, “বলে ফেল । তোর আর আমাকে তেল মাখাতে হবে না ।" 


 

‘শোন দোস্ত আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি যে ঐ মেয়েটির নাম ঐশিতা'

‘তো কী হইছে ? আমি জেনে কী করবো?’

‘অতো চেতিস কেন তুই? আগে আমাকে কথাগুলা শেষ করতে দে।'


 

ওর কথা শুনে সমীর বুঝলো যে ও কী বলতে চাচ্ছে । সে ঠিক এ কথাগুলো শুনতে চাচ্ছিলো না । কারণ সে ইতিমধ্যে মেয়েটিকে পছন্দ করে ফেলেছে । কিন্তু বাধ্য হয়ে সমীরের নীলের কথাগুলো শুনতে হচ্ছে । তাই সমীর তার ধোঁয়া উড়া কফির পাত্রে চুমুক দিতে দিতে বললো শুনছি বলে যা তোর কথাগুলা । নীল সমীরকে বললো, “তুই অষ্টম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলি না ? তারপর তুই আবার টিচারদের প্রিয় । তাই আমি বলতে চাচ্ছি যে তুই কিন্তু ঐ মেয়ে থেকে একটু দূরত্ব বজায় রেখে চলিস । ব্যাস , আমার এ উপকার করলেই আমি কৃতজ্ঞ থাকবো তোর কাছে ।"


 

সমীর ঠিক আগেই বুঝতে পেরেছিল ব্যাপারটা তাই সে তার কফি শেষ করার দিকে মনোযোগ স্থাপন করলো । এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো । আন্টি একটু পরে ঘরে প্রবেশ করলেন । আন্টি মনে হয় জাদু বিদ্যা জানেন নয়তো বা জ্বীন হবেন । কারণ তিনি কখন আসেন কখন যান তার হদিস নেই । আন্টি বললেন, “রাতের খাবার খেয়ে যেও কিন্তু সমীর।" সমীরের কালকের পড়া কমপ্লিট করতে হবে তাই সে দেরি না করে নীলের মাকে বললো, “আন্টি আজকে আর নয় । অন্য কোনোদিন দাওয়াত দিয়েন । এসে ভুরিভোজ করে যাব।" 

এটি বলে সমীর প্রস্থান করলো । নীল বলে উঠলো 'আমার ব্যাপারটা ভেবে দেখিস কিন্তু'।


 

সমীরের বাসাতে পৌঁছাতে একটু সময় লাগলো । ঠিক সন্ধ্যার পর সে বাসায় প্রবেশ করলো । সে অনেক ক্লান্তবোধ করছিল । সে তার পোষাক পরিবর্তন করে ফেললো । তার গান শুনার অভ্যাস রয়েছে । কোন সমস্যাতে পরলেই সেটি তা গান শোনার মাধ্যমে অনুভব করতে চায় । তাই তার রুমের জানালা-দরজা আটকে দিয়ে সাউন্ড বক্সে আরিজিৎ সিং এর মিউজিক লাউডে চালিয়ে দিল । বলে রাখা দরকার যে সে সময় আরিজিৎ সিং এর গান অনেক ট্রেন্ডিং এ ছিল । আবার একটি নতুন মুভি রিলিজ হয়েছিল । মুভিটির নাম ছিল 'আশিকি-২' । তাই সমীর সেই মুভিটির একটি গান শুনছিল । হঠাৎ তার রুমের দরজাতে তার ছোট ভাই কড়া নাড়লো । সে সমীরকে বললো, “ভাইয়া, আম্মু তোমাকে চা খেতে ডাকছে । তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এসো । আমি কিন্তু আর ডাকতে পারবো না তোমাকে ।" একথা শুনে সমীর গান শোনা বন্ধ করে চা পান করার উদ্দেশ্যে সিঁড়ি বেয়ে তার রুম থেকে নিচে চলে গেল । নিচে এসে জানতে পারলো তার ফুফি এসেছে তাদের বাসায় । সমীর তার ফুফিকে দেখে সালাম দিলো এবং বললো ফুফি কেমন আছেন? ফুফি বললেন, “আমি ভালো আছি বাবা । তুমি কেমন আছো । অনেকদিন হলো তোমার দেখা নাই । তোমার পড়াশুনার অবস্থা কেমন?”


 

সমীর একসাথে অনেকগুলো প্রশ্ন পেয়েছে । তাই সে প্রশ্নগুলোর উত্তর ধারাবাহিকভাবে দিতে শুরু করলো । ফুফি বললেন, “শুনলাম বাবা তুমি নাকি অনেক পড়াশুনা করতে শুরু করেছো ? রাত জেগে নাকি পড়ো? রাত জেগে পড়া কিন্তু ভালো না । শরীর খারাপ করবে যে । সেদিকে ও তো তোমার নজর দিতে হবে নাকি?” সমীর বলে উঠলো, “ফুফি আজকাল পড়াশুনাতে যে প্রতিযোগীতা ! বেশি না পড়াশুনা করলে ভালো রেজাল্ট করার চিন্তা বাদ দিতে হবে আমার । যেটি পরিবার ও আপনি কী মেনে নিতে পারবেন?” ফুফি তার উত্তরে বললেন, “সেটিও ঠিক । তবে তুমি যাই করো তোমার শরীর এর চিন্তা আগে করতে হবে । শরীর অসুস্থ হলে তো আর ভালো রেজাল্ট করা হবে না ।"

‘আমি এ কথা মাথায় রাখবো' - সমীর বললো । 


 

সমীর সিঁড়ি বেয়ে তার রুমে চলে গেল । স্যার অনেক পড়া দিয়ে দিয়েছেন তাই সমীর পড়া কমপ্লিট করার জন্য তার টেবিলে বসে পড়লো । সমীরের পড়াশুনাতে আজ যেন মন বসতে চাইছে না । 


 

তার শুধু মনে হচ্ছে বন্ধু নীলের কথা । সে কি তার বন্ধুর কথা রাখবে ? নাকি তার মনের কথা ? এ নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন হলো সে । সে ভাবতে থাকলো 'ঐশিতা' নামের মধ্যেই এক মাধুর্য লুকিয়ে আছে । তাই সে নামটির অর্থ খুঁজে বের করতে লাগলো । সে জানতে পারলো 'ঐশিতা' নামের অর্থ হলো 'পবিত্র জল' । তাই সে ভাবতে থাকলো সেই মেয়ে কী পবিত্র জলের মতোই ? আমি কী সেই পবিত্র জলের সন্ধান পেতে পারি ? আমি কি তার দেখা পাবো ? সে কি আমার হতে পারে ? 


 

আরো অনেক চিন্তা করতে করতে সে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো সে নিজেও টের পেলো না । সকালে চড়ুই পাখিগুলোর কোলাহলে তার ঘুম ভাঙলো । সে তাড়াতাড়ি করে প্রস্তুত হতে লাগলো । সেজন্য সে তার সকালের নাস্তা ঠিক করে খেতে পারলো না। সে আজ সময়মতো ইংরেজি ক্লাসে উপস্থিত হতে পেরেছে বলে তার নিজের আত্মবিশ্বাস একটু বেড়ে গেল । সে ক্লাসে আজ সেই চোখদুটিকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল । কিন্তু সে মেলাতে পারছিল না । ঠিক তখনই একটি মেয়ে ঐশিতা বলে ডাক দিলো । এ প্রথমবার সমীর ঐশিতাকে বোরকা ছাড়া দেখতে পেল । 


 

তার মুখ দেখে সমীরের মনের মধ্যে অটোমেটিক গান বেজে উঠলো - “ঐ চাঁদ মুখে যেন লাগে না গ্রহণ, জোছনায় ভরে থাক সারাটি জীবন"

আসলে ঐশিতার রূপের প্রশংসা করতেই হয় । 


 

কবি কাজী নজরুলের কবিতার কথা মনে পড়ে -----


 

"চোয়ো না সুনয়না

আর চেয়ো না এ নয়ন পানে

জানিতে নাইকো বাকি

সই ও আঁখি কি জাদু জানে ।।"


 

ঐশিতার মুখের রং ছিল পূর্ণিমার চাঁদের মতো । তার হালকা কোকড়ানো চুল যেন হালকা বাতাসে উড়ে চলা শুকনো পাতার মতো । তার চোখ হরিণের চোখের মতো । তার গোলাপী রঙের ঠোটে মায়াবী মধুর হাঁসি । একটু হেঁসেই যেন পরাতে পারে হাজারো গলায় ফাঁসি । তার মুখের একটি ছোট তিল যেন তার রূপকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে । সবমিলিয়ে যেন তার রূপ যে কাউকে তার প্রেমে পড়াতে বাধ্য করবে । 


 

ঠিক এ মুহূর্তে আরেকটি গান সমীরের মনে পড়ে গেল ---


 

“পড়েনা চোখের পলক

কী তোমার রূপের ঝলক।

দোহাই লাগে মুখটি তোমার

একটু আঁচলে ঢাকো ।

আমি জ্ঞান হারাবো, মরেই যাবো

বঁাচাতে পারবে নাকো ।।"


 

ঠিক এসময় তার বন্ধু নীল তাকে বললো, “ঐ তুই কোনদিকে তাকিয়ে আছিস রে? তুই তোর মনোযোগ কোথায় দিয়েছিস?”

সমীর বিড়ম্বনায় পড়ে গেল । সমীর বললো কিছুই না এমনই ও দিকে তাকিয়ে আছি । তখনই ঐশিতার মুখে মধুর দোল খেলানো হাসি খেলে গেলো । সমীরের মুখ বরাবরের মতো লাল হয়ে গেল । সমীর কোনমতে নিজেকে কন্ট্রোল করে নিল । ঐশিতা যখন হাসে তখন তার গালে টোল পড়ে । আর সমীরের টোল পড়া হাসি দেখতে অনেক ভালো লাগে । সে খেয়াল করল যে তার দিকে বেশ বিরক্ত চেহারা নিয়ে তাকিয়ে আছে তার বন্ধু নীল । নীল তার দিকে তাকিয়ে বললো, “মানুষ তো বায়োস্কোপের মধ্যেও এভাবে চোখ ডুবিয়ে দেয় না, তুই ঐশিতার দিকে যেভাবে ডুব দিয়েছিস।"


 

ওর কথা শুনে সমীরের সংবিৎ ফিরল । সমীর নীলকে বললো, “ আমার হয়েছে এক সমস্যা । সবখানে আমি আজকাল সাহিত্য খুঁজে বেড়াই।

খোদার সৃষ্টি যে কী অপরূপ হতে পারে আমি আগে জানতাম না ।" নীল বললো, “ঠিক আছে ঠিক আছে আর তোমাকে কথাসাহিত্যিক হতে হবে না। তুমি বরং তোমার কমপ্লিটিং সেন্টেন্স এর দিকে মনোযোগ দাও । আর ঐ বিষয়টি আমার ওপর ছেড়ে দাও ।" সমীর তার কোনো কথার উত্তর দিলো না ; সে তার গ্রামারটিক্যাল প্রবলেমের দিকে মনোযোগ দিলো । 


 

ক্লাস শেষ হয়ে গেল । ইংরেজি ক্লাসের পর রসায়ন ক্লাস আছে । তাই ইংরেজি ক্লাস শেষ হওয়া মাত্রই সমীর ও নীল দু'জনেই রসায়ন ক্লাসের জন্য রওনা দিলো । সমীর যেখানে রসায়ন পড়তে যেত সেখানে অবশ্য ঐশিতা পড়তো না । তো রসায়ন ক্লাসে স্যার কিছু বিক্রিয়া ও রাসায়নিক বন্ধন বোঝাচ্ছিলেন । ক্লাসে কেউ মনোযোগ দিচ্ছে কেউ দিচ্ছে না । কেউ আবার লুকিয়ে লুকিয়ে বেঞ্চের নিচে ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপলোড দিচ্ছে । কেউ আবার চূড়ান্ত মনোযোগের সাথে বুঝছে । সমীর তৃতীয় নম্বর দলের লোক । তার পড়াশুনা করতে বরাবরই ভালো লাগে । কিন্তু কোত্থেকে যে কি হয়ে গেল । এখন তার মনে ও মাথায় শুধু 'ঐশিতা' । ম্যালওয়্যার এর মতো ঢুকে তার মাথায় পোক্ত অবস্থান করে নিয়েছে ।


 

স্যার যখন রাসায়নিক বন্ধন বোঝাচ্ছিলেন তখন বোঝানোর জন্য একটি চমৎকার উদাহরণ দিয়ে দিলেন । তিনি বললেন, “রাসায়নিক বন্ধন গুলোর আচরণ অনেক সময় প্রেমিক-প্রেমিকার আচরণের মতো হয়ে থাকে।" ক্লাসের ছাত্র মাজেদিন বলে উঠলো, “ স্যার কীভাবে একটু বুঝিয়ে বলেন।" স্যার বললেন, ‘তুমি দেখি বেঞ্চের নিচে ফেসবুক চালাও কোনো মনোযোগ নেই, আর যেই প্রেম শব্দ উল্লেখ করা হলো সেই মনোযোগ বাড়ল নাকি?’ মাজেদিন বললো, ‘স্যার আপনি ওদিকে না গিয়ে ঘটনাটি পরিষ্কার করে বলুন।'


 

স্যার বললেন, ‘আসলে তোমাদের জেনারেশনের প্রবলেম । তোমরা যেটি ভালো সেটি বুঝতে চাও না, বরং না বুঝে অনেক কিছুই করে ফেলো।'


 

স্যার আরও বললেন, ‘রাসায়নিক বন্ধনের মতো প্রেমিক – প্রেমিকার মধ্যে তীব্রতার পার্থক্য থাকে' । কথাটি বলার পর সবাই হেসে উঠলো । 

সমীরের মাথার মধ্যে কথাটি গেথে গেল । সে ভাবলো, ‘আমিই শুধু তার কথা ভেবে চলেছি। এক্ষেত্রে আমার দিকটি বেশি তীব্র । সে কী আমার কথা মোটেও ভাববে ?’ দেখতে দেখতে ক্লাসের সময় শেষ হয়ে এলো । রসায়ন ক্লাস শেষে সমীর, নীল ও মাজেদিন একটি মার্কেটের সামনে আড্ডা দিচ্ছিল । তাদের আড্ডার বিষয় বস্তু ছিলো 'মোবাইল ফোন' । তারা একে অপরে বলা বলি করতে লাগলো যে, কার কোন ব্র্যান্ডের ফোন, কে কোন অ্যানড্রয়েড ব্যবহার করে ইত্যাদি ইত্যাদি । আড্ডা দিতে দিতে প্রচন্ড খিদেয় তাদের নাড়িভুঁড়ি হজম হয়ে যাওয়ার জোগাড় । 


 

শীতের তীব্র বাতাসে তাদের শরীরে প্রচন্ড কাঁপুনি ধরিয়ে দিলো । একটু পর তারা খাবার খাওয়ার জন্য মার্কেট থেকে একটু দূরে খাবারের হোটেলে চলে গেল । খাবারের হোটেল ছিল খোলা জায়গায় । অল্প দূরের বস্তুগুলোও তখন ভারী কুয়াশায় আচ্ছন্ন । শীতের তীব্রতায় যেখানে ঘরে টেকা দায়, সেখানে তারা এ রকম খোলা পরিবেশে খাবারের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে পারছে সেটাই ঢের আশ্চর্যের । তারা ঠিক করলো পিঠা খাবে । তাই হোটেল থেকে বের হয়ে পড়লো । রাস্তার ধারে শীতকালীন পিঠা পাওয়া যায় । ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা ইত্যাদি । মাটির ঢেলার একটি চুলা বানিয়ে মহিলারা এসব পিঠা বানায় আর পথচারীরা কিনে খায়। চালের গুড়া ও খেজুরের গুড়ের ভাপা পিঠা খেতে ভারি মজাদার । 


 

এ সময় লাল ড্রেস, লাল টুপি, লাল হাতমোজা পরিহিত এক মেয়ের আগমন ঘটলো । হ্যাঁ , ঐশিতার আগমন ঘটেছে । তার ব্যবহৃত সুগন্ধির সুবাসে এক মাদকতা আছে সেটি শুধু সমীর ই উপলব্ধি করতে পারলো । মনে হয় প্রেমে পড়লে এ রকম ই হয় । তার হার্টবিট ও স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেল । কেন এমন হচ্ছে ? কী কারণে এমন হচ্ছে ? সমীর মনে মনে ভাবলো । ঠিক তখনই ঐশিতা সমীরকে বললো , ‘কেমন আছো ? তুমি কী কালকের এসাইনমেন্ট কমপ্লিট করেছো ?’ সমীর কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না । সমীর বললো, ‘হ্যাঁ আমি করেছি'।

ঐশিতা বললো, ‘তাহলে তুমি আমাকে সেটি দিতে পারবে ? আমার অর্ধেক হয়েছে আর অর্ধেক বুঝতে পারছি না ।' সমীর বললো, ‘ সমস্যা নেই আমি বুঝিয়ে দেবো।'


 

মাজেদিন বলে বসলো, ‘ওহে ওহে মামা কেয়া বাত কেয়া বাত' । সমীর তার কথার টপিক চেঞ্জ করে ফেললো । ঐশিতা বললো, ‘ঠিক আছে সমীর কালকে ইংরেজি ক্লাসে আমাকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলবে। তুমি স্যারের মনোযোগী স্টুডেন্ট , তাই আমি কথাটি তোমাকে বললাম । ওহ ! আমার এখন যেতে হবে । পরে কথা হবে । আমি এখন আসি ।' ঐশিতা চলে গেল । সমীর মাজেদিনকে বললো, ‘তোর কখন কী বলতে হয় সেই জ্ঞান নেই ? দিলিতো সময়টার বারো বাজিয়ে । ও তো কিছু বলতে চেয়েছিল । তোর জন্য বলা হলো না ।'


 

মাজেদিন তার তৈরি কমন ডায়ালগ ছেড়ে বললো, ‘এটি কোনো ব্যাপার হলো দোস্ত? আমি তোর সাথে ওই মেয়ের সেটিং এর ব্যবস্থা করে দিবো নি।' নীল বললো, ‘আরে না না ও তো একটি এলিয়েন রোবট ও কি এসবের মধ্যে যাবে ? ও তো সারাক্ষণ পড়াশুনায় মশগুল থাকে । তার চেয়ে ভালো হবে যদি আমার কথা চিন্তা করিস। আমি সমীরকে এ বিষয়ে আগেই বলে দিয়েছি ।' 


 

মাজেদিনের এসব শুনতে বেশ উৎসুক আর উৎফুল্ল বলে মনে হচ্ছে । মাজেদিন অনেক ভালো ফটো তুলতে পারে । তাই সে সমীরকে বললো, ‘দোস্ত আমি কিন্তু তোর একটি ফেসবুক একাউন্ট এখনই খুলে দিচ্ছি। এ যুগে ফেসবুকে না থাকলে  হয় ? তোকে আপডেট হতে হবে না? ‘

এটি বলেই সে তার ব্যাগে থাকা ক্যামেরাটি বের করে সমীরের একটি সুন্দর ছবি তুলে নিল । তারপর সেটি তৈরি করা নতুন আইডিতে আপলোড দিয়ে দিলো । 'আরে আরে খুলতে না খুলতেই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট চলে এসেছে দোস্ত । আরে বাহঃ ঐশিতা পাঠিয়েছে রে । মনে হয় সে তোকে লাইক করে ।।। হা হা হা' - মাজেদিন বললো । 


 

'ধুর! তোরা যে কি বলিস । বাদ দে তো '

‘ফটোগ্রাফারদের বন-জঙ্গল, পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র-অরণ্য চষে বেড়িয়ে প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর রূপ আর মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দী করতে হয় । তুই সেগুলো না করে পড়ে আছিস আমার ছবি নিয়ে । '

‘এগুলো বিষয়ে তোর পাশে তো তোর দোস্তরাই থাকবে নাকি? নাকি তোর বাবা-মা ? হা হা হা' 

মাজেদিনের হাসি যেন থামছেই না এসব কথা বলতে বলতে ।


 

নীলের এগুলা মশকরা ভালো লাগছিল না । তাই সে টপিক এড়িয়ে গেল এবং বললো, ‘তোদের জন্য পিঠাটাও ভালো ভাবে খেতে পারছি না । তোরা কি পিঠা ভালো মতো খেতে দিবি না?’ সমীর বললো, ‘নীল তুই ঠিকই বলেছিস । খেতে এলাম পিঠা আর খাচ্ছি কী ? মাজেদিনের কথা ।' মাজেদিন বলে উঠলো, ‘আরে তোরা এতো স্লো কেন? আমার তো খাওয়া প্রায় শেষ । চল এবার একটু চায়ে চুমুক দেওয়া যাক । শুনেছি জিম ভাইয়ের দোকানে নাকি অনেক ভালো চা পাওয়া যায় ।'


 

নীল বললো, ‘হুম । চল চায়ের দোকানের দিকে যাওয়া যাক । বিল কিন্তু তুই দিস সমীর ।' সমীর বিল পরিশোধ করার পর সবাই মিলে জিম ভাইয়ের চায়ের দোকানে চলে গেল । 


 

জিম ভাইয়ের চায়ের দোকান । কথিত আছে, তিনি নাকি গ্রামে থাকাবস্থায় কোনো এক পরীর সাথে প্রেম করতেন । দীর্ঘ দুই বছরের প্রেমে ইতি ঘটে, যখন জিম ভাই চায়ের দোকান নিয়ে বসে । জিম ভাই চা বিক্রি করছেন, এটি জানতে পেরেই নাকি পরী জিম ভাইয়ের সাথে ব্রেকআপ করে । একটি পরীর বয়ফ্রেন্ড সামান্য চ-বিক্রেতা, এটি সম্ভবত জ্বীন সমাজে বেশ অপমানজনক ব্যাপার । এজন্যেই পরীটি জিম ভাইকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যায় । 


 

সমীর জিম ভাইকে বললো, ‘তা জিম ভাই, তোমার পরী কি পরে আর আসছিল?’


 

জিম ভাই বেশ নরম সুরে বললেন, ‘না। আর আসপে কিসোক । ওরি আর হামাক দিয়া কাম কী কও ?’


 

‘কোনো চিঠিপত্রও পাঠায় নি?’


 

এবারও জিম ভাই 'না-সূচক' উত্তর দিলেন বললেন, ‘তোমাদের কি আদা চা-ই দিমু?’


 

সমীর বললো, ‘তোরা কী চা খাবি বল? আমি কিন্তু আদা-চা ই খাবো ভাবছি । ‌' নীল বললো, ‘ চায়ের বিল কিন্তু এবার আমি দিব ।' তারা সন্তর্পণে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে তার কথায় মনোযোগ দিলো । নীল গলা খাঁকারি দিয়ে বললো, ‘দোস্ত ঐশিতাকে কিন্তু আমার পছন্দ হয়েছে । এখন আমার কী করার আছে যদি আমাকে কিছু পরামর্শ দিতি তোরা তো খুবই ভালো হতো ।' কথাটি শুনে সমীরের মনে হিংসের ছোট কণা উদয়ন হলো । যদিও সে কাউকে বুঝতে দিলো না । মাজেদিন বললো, ‘দোস্ত , আমি তোর জন্য কিছু একটা করবো বলে ভেবেছি । দেখি কোনো ব্যবস্থা করা যায় নাকি । তারপর তোকে ফেসবুকে টেক্সট করে জানিয়ে দিবো।'


 

সমীর সেদিনের মতো আড্ডা শেষে বাড়ি চলে আসে । তার মাথায় চিন্তা ঘুরতে থাকে, ‘ সে কোন বিষয় বুঝে নিতে চায় ? তাকে কি সঠিকভাবে আমি বোঝাতে পারবো ? আমি যদি সঠিকভাবে বোঝাতে না পারি , তাহলে সে কী মনে করবে?’


 

সমীর সেদিন আর হেঁটে ক্লাসে যায় না। সে একটু তাড়াতাড়ি যাবার জন্য সিএনজি নিয়ে নেয়। দুই মিনিট লাগে পৌঁছাতে । সে ঐশিতার সাথে কথা বলার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে । ঐশিতা ও তার বান্ধবী কিরণ উপস্থিত হলো । কিরণ বললো, ‘কিরে ঐশিতা, তুই কি তোর এসাইনমেন্ট করেছিস? করলে আমাকে দে তো ।'


 

ঐশিতা বলে, ‘আরে নাহ! ঐ যে সমীর আছে না ওর কাছে থেকে বিষয়টি আমি বুঝিয়ে নিবো ভাবছি ।' 

এদিকে তাদের কথাবার্তা শুনে সমীর তার হাতে রাখা ইংরেজি বই টি দিয়ে নিজের মুখ আড়াল করে রাখলো । হয়তো বা একটু ভাব দেখানোর জন্যই । সে মুহূর্তে কিছু বোঝা গেল না । ঐশিতা বললো, ‘ মুখের ওপর এরকম ছাতা টেনে রাখলে কথা বলা যায় ?’ 


 

‘ ইয়ে মানে না না, ছাতা কেন টেনে রাখবো?আমি একটু বই পড়ছিলাম '

‘ আরে ! দেখ দেখ কিরণ, এ ছেলে লজ্জা পাচ্ছে ।'

‘আমার কাছে লজ্জা পাবার কারণ নেই । আমরা তো একই ক্লাসে পড়ি নাকি? মানে আমরা তো ক্লাসমেইট ।'

‘ হুম । '


 

সমীর খুব লজ্জা পাচ্ছিল । কারণ সে যতই সবার সাথে কথাবার্তা গুছিয়ে বলুক না কেন, যখন সে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলে তখন সে কথাগুলো গুছিয়ে বলতে পারে না । এজন্যই হয়তো বা সে কথা বলার সময় মুখ ঢাকার জন্য বইয়ের আশ্রয় নিয়েছে । সমীরের হার্টবিট বাড়তে শুরু করেছে । সে কোনো মতে নিজেকে সামলে নিলো । তারপর ঐশিতাকে বিষয়টি বুঝিয়ে দিল । বোঝানোর সময় সমীর ভালোভাবে গুছিয়ে বলতে পারেনি । 'আমি তো কিছুই বুঝলাম নাহ।',ঐশিতা বললো । তারপর সমীর আবার তাকে বুঝিয়ে দিল । এবারে ঐশিতা বললো, ‘ওহ আই সী।' 


 

‘বিষয়টি তো আমি এভাবে ভেবে দেখিনি'


 

‘বিষয়টি এভাবে করলে আরো সহজ হয়ে যায় । থ্যাংক ইউ সমীর ।'


 

সমীর বললো, ‘ইউর ওয়েলকাম'


 

সমীর ঐশিতার সাথে কথা বলতে পেরেছে দেখে তার অনেক খুশি লাগছে । সে তো এটির জন্যই অপেক্ষা করছিল । ঐশিতা সমীরকে বললো, ‘আমি তোমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি । অ্যাকসেপ্ট করে নিও ।' সমীর বলে , ‘ আচ্ছা ঠিক আছে ।'


 

সমীর ঐশিতাকে বললো , ‘ তোমাকে দেখে মনে হয় ঠান্ডা লেগেছে । তোমার কন্ঠস্বর অন্যরকম শোনাচ্ছে । যা ঠান্ডা পড়ছে আজকাল । একটু সাবধানে থেকো ।' ‘তোমাকে ধন্যবাদ',বলে ঐশিতা তার জায়গাতে চলে গেল । 


 

সমীর সেদিন ঐশিতার কাধে একটি তিল লক্ষ্য করেছিল । যেটিতে ঐশিতাকে চরম মনমুগ্ধকর লাগছিল । এতো নিখুত ভাবে হয়তো কোনো স্বর্ণকার স্বর্ণের ওজন করে না যতটা নিখুতভাবে সমীর ঐশিতাকে দেখে চলেছে । ঐশিতার প্রতে্যক শ্বাস-প্রশ্বাস যেন সমীর গুনে চলেছে । হয়তো বা গুনতে গুনতে সে বলে দিতে পারতো যে তার কোনো সমস্যা আছে কিনা । হয়তো বা ঐশিতা এগুলা লক্ষ্য করছিল । কিন্তু সে কিছুই বলে নি । ছেলেরা মেয়েদের দিকে তাকাক মেয়েরা বিষয়টি খুব উপভোগ করে । তাদের বিষয়গুলো ভালো লাগে বলেই হয়তো তৎক্ষণাত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায় না । তাই ঐশিতা ও সেদিন কোনো প্রতিক্রিয়া জানায় নি । 


 

কয়েকমাস কেটে গেল । ঐশিতার প্রতি সমীরের আকর্ষণ বৃদ্ধি পেল । সমীর তার সাথে ঐশিতার এক অপূর্ব মিল খুঁজে পায় । সে যে কী রকম মিল সে বুঝতে পারে না । তাই তো সমীর ঐশিতার দিকে চোখে চোখ রেখে তাকাতে পারে না । ঐশিতা এ বিষয়ে জানে কিনা তা সমীরের জানা নেই । 


 

তবে ঐশিতা এ বিষয়ে খানিকটা আন্দাজ করতে পেরেছিল । কিন্তু সে ও সমীরকে কিছু বলে নি । 


 

অনেকদিন পর নীলের সাথে দেখা । সে এসেই তার ফোকলা দাঁতগুলো বের করে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘ কেমন আছিস ?’


 

‘ ভালো '

‘চল চা খাই'

‘ না আমার তাড়া আছে ।'

‘রোবটের মতো উত্তর দিচ্ছিস কেন?’


 

সমীরের মন চাচ্ছে ওর সামনে থেকে দৌড়ে পালাতে । কারণ সে ঐশিতার পেছনে লেগে আছে । ওর প্রশ্নের এখনো যে রোবটিক গলায় সমীর উত্তর দিচ্ছে সেটিই তো বড় ব্যাপার । নীল সমীরের হাত ধরে বললো, ‘চল চা খাবো । কতদিন তোর সাথে চা খাই না।'


 

চোখে মুখে মহাবিরক্তি নিয়ে সমীর তার পাশে হাঁটতে শুরু করলো । চেষ্টা করে ও তার অনুরোধ ফেলতে পারলো না । নীল বললো, ‘তুই আমাকে অপছন্দ করিস, তাই না?’

এই মুহূর্তে যদি তার মুখের ওপরেই বলতে পারতো, ‘আমি তোকে একেবারেই অপছন্দ করি । আর কোনোদিন আমার সাথে কথা বলবি না । ' তাহলে বেশ হতো ; কিন্তু পৃথিবীতে মন চাইলেই সবকিছু বলা বা করা যায় না। সে ও বলতে পারলো না । কেবল তার প্রশ্নের প্রতি উত্তরে নকল একটি হাসি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করল – সে তাকে অপছন্দ করে না । 


 

জিম ভাইয়ের দোকানে এসে চা এর অর্ডার দেওয়া হলো । চায়ে চুমুক দিয়ে নীল বলতে লাগলো, ‘ শোন, সমীর তুই কী সত্যিই ঐশিতাকে পছন্দ করিস ? করলে আমাকে বলতে পারিস। ঐশিতার জন্য তোর আর আমার সম্পর্ক নষ্ট হোক আমি তা চাইনা । হাজার হোক আমি তো তোর বন্ধু নাকি ?’


 

জিম ভাই বললেন, ‘হামার মতো তোমাকেরও কি পরী আছে নাকি ? দেকপিন ওই যেন চলা না যায় । ' বলেই হেসে িদলেন।


 

চা শেষ করে সমীর বললো, ‘না সে রকম কিছুই না । শুধু তোরাই বাড়িয়ে বলছিস ।'


 

এটি শুনে নীল কী মনে করলো জানা গেল না । তবে খালি বললো , ‘ঠিক আছে' । বলেই চায়ের বিল পরিশোধ করে প্রস্থান করলো ।

এরপর অনেকদিন তারা কথা বলে নি ।


 


 

বছর ঘুরে শরৎকাল চলে এলো । রাতের আকাশে তারার মেলা । আকাশে চাঁদ উঠেছে । ঠিকরে পড়ছে জোছনা । 

ঠিক এসময় সমীরের মনে পড়ে গেল কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার দু'টো লাইন -


 

ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়;

পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।


 


 

চাঁদকে নিয়ে যে কতো কবিতা রচনা করে হয়েছে তার ঠিক নেই । তাই সমীর ও ঐশিতাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে একটি কবিতা বানিয়ে ফেললো -


 

ওগো তোমার প্রতীক্ষায় পূর্ণিমার রাতে আছি একা বসে

হয়তোবা তোমার হাতটা রেখে আমার পাশে 

বলবে তুমি, ‘নেই কী তোমার সময় সম্পর্কে কোনো ধারণা ?’

‘তুমি তোমার সম্পর্কে ভেবো আমার সম্পর্কে আর ভেবো না ।'

বলবো আমি ,'এই পূর্ণিমার চাঁদকে রেখে করছি শপথ

তোমার মাতাল করা চোখের দিকে তাকিয়ে পার করে দিতে পারি মহাকালের পথ ।'


 

প্রেমে পড়লে যে মানুষ কবি ও হয়ে যায় সমীরের আচরণে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে । 


 

আরেকদিনের কথা । একদিন বিকালের ক্লাস শেষ করতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল । প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল । সমীর, নীল ও হাশেম তিনজন বসে ছিল বাগানে পুকুর পাড়ে । হঠাৎ তাদের উপর আকাশ থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঢিল এসে পড়লো । কোত্থেকে যে ঢিল পড়লো কেউ কিছু আন্দাজ করতে পারলো না । সমীর খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিল । কারণ তার আবার ভূত বা জ্বীন এ বিশ্বাস আছে । সে যে কী এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল । হাশেম তো রীতিমতো ভূতদের গালাগালি করতে শুরু করেছিল । তা দেখে নীল হা হা করে হাসতে শুরু করলো । তারা যতো সম্ভব ঐ স্থান ত্যাগ করে দূরে দৌড়ে পালালো । 


 

পরে সমীর জানতে পারে ঐ ঢিলগুলো ঐশিতা ও তার বান্ধবীরা ছুড়ে ছিল তাদের ভয় দেখানোর জন্য । তাদের মধ্যে একজনের নাম তিশা । অনেকে তাকে আন্টি বলে ডাকে । আন্টি বলে ডাকার কারণ হলো সে ছিল ঐশিতাদের চেয়ে সিনিয়র ব্যাচের । কিন্তু এসএসসি পরীক্ষাতে ফেইল করার কারণে সে এবার ঐশিতাদের সাথে পরীক্ষাতে অংশগ্রহণ করবে । 


 

দেখতে দেখতে ঐশিতার সাথে সমীরের সখ্যতা গড়ে উঠলো । কিন্তু তখন ও সমীর তাকে তার মনের কথা বলতে পারে নি । ঐশিতা অবশ্য জানতো যে সমীর তাকে অনেক পছন্দ করে । তাই ঐশিতা সমীরের সাথে দূরত্ব বজায় রেখেই কথা বলে থাকে ।


 

ঐশিতা গার্লস স্কুলে পড়াশুনা করতো । ঐ গার্লস স্কুল থেকে সমীরদের স্কুল বেশিদূর নয় । তাই স্কুল ছুটির পর তাদের প্রায় দেখা হতো । 


 

সমীরের আচরণে স্পষ্ট যে সে ঐশিতার প্রতি দূর্বল । একদিন তো তিশা বলেই বসলো, ‘তাকাবি তো তাকিয়ে থাকবি তো এতো ভয় কিসের ? যাব প্যায়ার কিয়া তো ডারনা কিয়া ।' কি এক অস্বস্থিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিলো সেদিন। কয়েক মাস পর এসএসসি পরীক্ষা ঘনিয়ে এলো । তাই সকল কোচিং সেন্টার গুলাতে বিদায়ের ঘনঘটা । ঐশিতা ও সমীর যে কোচিং সেন্টারে পড়তো সেখানেও বিদায়ের দিন উপস্থিত হলো । সবাই মিলে স্যারকে গিফট দিবে বলে ঠিক করলো । সমীরকেও বিদায়ের দিন-তারিখ জানিয়ে দেওয়া হলো । সমীর যথাসময় সেদিন একটি নীল রং এর গেঞ্জি পরে নিজেকে সাজিয়ে উপস্থিত হলো । সবাই নিজ নিজ সাজে সুন্দর পোষাক পরিধান করে এসেছে । 

সমীর তার আরেক কোচিং থেকে অলরেডি বিদায় নিয়ে এসেছে । হাতে তার লাল গোলাপ ফুল । সেটি ঐশিতাকে দিয়ে কথাটি বলেই দিবে বলে ঠিক করলো । বিদায় ভাষণ দেওয়া শেষ । সমীর দেখতে পেল যে ঐশিতা ও তার বান্ধবীরা কি যেন নিয়ে পরস্পরের মধ্যে আলোচনা করছে। সমীর কিছু বোঝার আগেই ঐশিতা সমীরকে ডাকদিলো । সমীরের তো এদিকে অবস্থা খারাপ অন্যদিকে ঐশিতা নিজে ডেকেছে তাই সে একটু আনইজি ফিল করলো । তার কাছে সেই গোলাপ ফুল হাতেই ছিল । ঐশিতা বললো, ‘ দেখ সমীর আমি তোমাকে আমার ভালো বন্ধু বলে মনে করতাম । কিন্তু তুমিই যে আমাকে পছন্দ করবে আমি ভাবতেই পারিনি । যাই হোক তোমার পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমন ? আরে আমি ও বোকা যে তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি । তোমার প্রস্তুতি ভালোই হবে আমি জানি । ভালো থেকো সমীর । তুমি আমার একজন ভালো বন্ধু ছিলে এবং থাকবে । '


 

এসব কথা শুনার পর , সমীর আর তাকে তার মনের কথা বলতে পারে না । তার হাতের গোলাপ নিঃশব্দে মাটিতে ঝরে পড়ে যায় । এ প্রথম তার হৃদয় ভেঙে যায় । 


 

সমীর শুধু ঐশিতাকে বলে , ‘তুমি যেখানে থেকো ভালো থেকো । আমার যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে তবে যদি পারো ক্ষমা করে দিও । '

ঐশিতা বললো, ‘আমার ও যদি কোনো ভূল হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমা করে দিও ।'


 

এটি বলে ঐশিতা ধোঁয়ার মতো হারিয়ে গেল ।


 

সমীরদের পরীক্ষা শেষ । তাই সে এখন রেজাল্টের অপেক্ষায় । রেজাল্ট এর দিন ঘনিয়ে এলো । রেজাল্টের চিন্তায় সে সেদিন সকাল থেকে কিছু খায় নি । চিন্তা করেছে রেজাল্ট হওয়ার পর সে খাবার গ্রহণ করবে । রেজাল্ট ওয়েবসাইটে দিয়ে দিলো । সমীর GPA-5 পেয়ে উত্তীর্ণ হলো ।


 

সে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো ঐশিতাও GPA-5 পেয়েছে । JSC পরীক্ষাতেও তাদের দু'জনের একই রেজাল্ট ছিল । 


 

সমীর শুধু চিন্তা করলো, ‘তার আর আমার মধ্যে কি মনের মিল থাকতে পারতো নাহ?’


 

টুপ করে দু'ফোটা চোখের জল নিচে গড়িয়ে পড়ল ।


 

সময় চলে যায় । কিছু স্মৃতি , স্মৃতি থেকে যায় । অনেক সময় পার হয়ে গেছে । সবকিছু বদলে গেছে । 


 

সমীর এখন পড়তে ও পড়াতে ভালোবাসে । মাঝে মাঝেই এখন সমীর তার স্টুডেন্টদের এসব বিষয়ে লেকচার দিয়ে দেয় । 


 

সমীর তার স্টুডেন্টদের বলে, 

 

সমু্দ্রের গভীরে প্রথম বিশ মিটারে যেকোনো কিছুকে লাল দেখায়।

পরের বিশ মিটারে হলুদ, এরপরে নীল, তার পরে সবুজ ।

তবে রঙের আধিপত্য দু'শো মিটার পর্যন্তই 

দু'শো মিটারের ঘরে সব রঙ ফিকে হয়ে যায় ।

ঠিক একই ভাবে মানুষ ও দিন দিন পাল্টায় । এক সময় মৃত্যু বরণ করে ।


 

সমীর আরো বলে, ‘ সমুদ্রের গভীরতা যত বেশি , পানির চাপ তত বেশি। ঠিক এমনই যার ভালোবাসা যত বেশি তার কষ্টও তত বেশি ।'


 

সমীরের একটি বিশেষ ব্যাচে চারজন স্টুডেন্ট রাকা, ঊর্মি, অহনা ও কলি পড়তো । 


 

তাদের মধ্যে অহনা একটু বেশিই হাসতো । সে তার স্যারের কথা শুনে তো হি-হি-হি-হি করে হেসেই দেয় ।


 

সমীর হাসির কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বলে,


 

“জন্মের সময় আমি খুব কেঁদেছিলাম ।

এখন আমার সবকিছুতেই হাসি পায় । "


 

কথাগুলো শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো । সমীর সবার উদ্দেশ্যে বললো, ‘তোমাদেরও সময় আসছে ,যেমনটি এসেছিল আমার সময় সেই মেয়েটি!’