পোস্টস

গল্প

এলোমেলো

১০ জুন ২০২৪

Shafayat Shahriar

-জনাব

মেসেঞ্জারের টুকুং শব্দে চিন্তায় ছেদ পড়লো সাবিতের। অফিসে লাঞ্চ টাইম এখন,  কিন্তু অঝরে বৃষ্টি পড়ছে বলে নিজের টেবিলেই একমনে বসে ছিল। পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো রূপার মেসেজ। হঠাৎ মন টা পুলকে শিহরিত হল। কি উত্তর দিবে বুঝতে পারছে না সে। এই ধরনের একটা শব্দের মধ্যে যে কি সুখ !  তড়িঘড়ি করে উত্তর দিল,

- এই তো! 
- কি করছেন?
- অফিসে বসে আছি, লাঞ্চে যাব, কিন্তু বৃষ্টি পড়ছে খুব।
- ও!  আপনাকে মিস করছি।

এবার যেন পুরো পৃথিবীর সমস্ত সুখ এসে ছুঁয়ে গেল সাবিতের। টেলিপ্যাথির কথা শুনেছে সে ,কিন্তু এবার মনে হয় সত্যিই সেটাই হল। সাবিতও রূপার কথাই ভাবছিল। কিন্তু এই মুহুর্তে সেটা বলতে পারল না। যদি রূপা এটাকে পাম মনে করে। কোন রকম উত্তর দিল,

- এই বৃষ্টিতে? 
- হুম।
- নীল শাড়ি ,হাত ধরাধরি, গাছের ছাতার নিচে ফাঁকা পাকা রাস্তায় হাটাহাটি।
- (খুশিতে রূপা <3 react দিল।) আমার তো অনেক ঠান্ডা লাগে।
- উষ্ণতা তো সাথেই আছে।
- আমার বুকের ভিতরে।
- আমাকে আপনার বুকের ভিতর জড়িয়ে রাখবেন?

শিহরণ বেড়ে গেছে সাবিতের। কি বলে এই মেয়ে!  এটা কি আসলেই রূপা? কিন্তু ওর তো এভাবে বলার কথা না। সাবিতই বরং এভাবে বলেছে অনেকবার। কিন্তু রূপা হেসেই উড়িয়ে দিয়েছে এসব। তবে কি রূপাও অনুভব করে সাবিতকে?

- হুম।
- তারপর? 
- এখন বলব না।
- কখন বলবেন?
- গোধুলীর রঙিন আভায় অথবা ভোরের শিশির ভেজা ঘাসের চাদরে হাঁটতে হাঁটতে ।
- (আবার <3 react) আপনাকে miss করি। 
- এত মিস কর কেন?
- জানি না
- জানো না কেন?
- তাও জানি না। আপনার কাছে আসতে ইচ্ছা করছে। 
- তোমার ইচ্ছে গুলো অসময়ে প্রকাশ পায় কেন?
- জানি না তো। ইচ্ছার কি সময় অসময় আছে?
- থাকা উচিৎ তো!
আর ২ বছর আগে প্রকাশ হলে এই বিরহে পড়তে হত না!
- কেন? দুই বছর আগে হলে কি হত?  
- তখন আমার অফুরন্ত সময় ছিল, ইচ্ছে হলেই চলে যেতাম তোমার কাছে।  আর এখন কর্মজীবন আমার রোমান্টিক সময় খেয়ে ফেলছে!  😞
- তখন হয়তো সময় ছিল, কিন্তু এই ব্যস্ততা তো একদিন আসতই।ব্যস্ততা তো থাকবেই

সাবিতের খুব ভাল লাগছে যে রূপা ওকে এখন বুঝতে পারছে।
- মানছো? 
- মানছি। কিন্তু আপনিও তো কখনো আপনাকে প্রকাশ করেননি। দুই বছর আগে আপনি বললে কি হত?

সাবিতের মনে পড়ে প্রায় ৪ বছর আগে রূপার সাথে তার পরিচয় একটা অনুষ্ঠানে। সাবিতের কাজিনের বান্ধবি রূপা। উচ্চ মাধ্যমিক দিবে। খুব হাসি খুশি মেয়ে। একটা মায়া আছে ওর চেহারায়। কাজিনই পরিচয় করিয়ে দেয়।  একদিন ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দেয় রূপা। এভাবেই বন্ধুত্বের সূচনা। রূপা একদিন জানায় যে ওরা বন্ধুরা মিলে বানিজ্য মেলায় যাবে। সাবিতও যেন যায় ওদের সাথে। সাবিত কখনো এভাবে কোনদিন কোথাও যায় না। তাও রাজী হয়ে গেল। এভাবে কথা, বন্ধুত্ব চলতে থাকে। বেশির ভাগ সময় ফেবুতেই কথা হত।মাঝে মাঝে ঝগড়াও হত। আসলে দুজনেরই ইগো একই রকম। রূপার রাগ হলেই  ব্লক করে দিত সাবিতকে। সাবিতও আর যোগাযোগ করত না। আবার অনেক দিন পর হঠাৎ করে যোগাযোগ শুরু হত। ভালোলাগার কথা টা তাই হয়তো বলা হয়নি কারোরই।

-আমি কিভাবে করব?পারিনা তো প্রকাশ করতে
-তাহলে?  সব দোষ কি আমার? 
- তখন তো পাইনি তোমাকে
- পাননি মানে?  কই ছিলাম আমি? 
- হারায়ে ফেলেছি বারবার!
- ঠিক করে খুঁজলে ঠিকই পেতেন।

সাবিত মনে মনে বলে, কিভাবে যে খুঁজতে হয় তাইই তো জানি না। কিভাবে খুঁজব তোমায়। একবার  তো সাহস করে বলেই ফেলেছিল সাবিত। কিন্তু রূপা হয়তো সাবিতের অন্য সব fun গুলোর মত এটাকেও fun মনে করেছিল।

-একবার অবশ্য চেষ্টা করেছিলাম!
কিন্তু, তুমি বললে যে আমি নিশ্চয়  মজা করছি।
- কবে?  
- তা তো মনে নেই।
- থাক আপনার মনে করা লাগবে না!  

সাবিতের মনের মধ্যে আবার শংকা হল। রূপা কি আবার রাগ করল নাকি অভিমান !  এই মেয়েকে নিয়ে পারা যাচ্ছে না, কখন রাগ করে আর কখন অভিমান করে কিছুই বোঝা যায় না। অফলাইনে চলে গেছে মেয়েটা। নিজের উপরই এখন রাগ হচ্ছে সাবিতের।  কি দরকার ছিল ওকে এসব পুরোনো কথা বলার!  আবার রূপার উপরও অভিমান হচ্ছে, মেয়েটা আজও বুঝল না সাবিতকে। এখন আবার রূপার অভিমান ভাঙাতে হবে। এর মধ্যে লাঞ্চ টাইমও শেষ।  অফিসে যেতেও দেরী হয়ে গেছে। বসের ঝাড়ি খেতে হবে। উভয় সংকট !