পোস্টস

গল্প

কর্ণফুলীর জেলে।

১০ জুন ২০২৪

ওয়ালিউর রহমান

ও মাঝি ভাই,খালি নাও ভাসাইয়া এতরাতে কই যাও?
তোমার নায়ে তো বাত্তিও নাই, তুমি কি ঠিকঠাক দেখতে পাও!
—'মিয়া ভাই,চান্দের আলো-ই আমগো বাত্তি, আল্লাহ দুইডা চক্ষু দিছে,তার ইচ্ছায় কর্ণফুলীরে ঠিকঠাক দেখতে পাই।প্রয়োজন হইলে আলো জ্বালাই।একটা ছোট্ট মোবাইল আছে লগে।'

নদীর ওপাশে তীরজুড়ে গড়ে ওঠা কিছু স্থাপনায় বিদ্যুৎবাতি জ্বলছে,সে আলো এপাশে পৌঁছার আগেই চাঁদের আলোর কাছে ধরাশায়ী হচ্ছে। যদিও আমাবস্যায় তাদের দাপট থাকে বিস্তর।জলের মধ্যে সাঁতার কেটে বিশালদেহী এক জাহাজ ছুটছে,ধাতব সেই দানবকে জায়গা ছেড়ে অনেক জল হামাগুড়ি দিয়ে আছড়ে পড়ছে কিনারে।চাঁদের আলো সে জ্বলে ফুটিয়ে তুলছে রুপালি রং।
কিছুদূর এগিয়ে মাঝি নৌকার গতি তীর বরাবর রেখে বৈঠা বাইছে দেখে আমিও অপেক্ষা করলাম। মাঝি তার নৌকা তীরের কাঁদায় তুলে দিয়ে নৌকার গলুইতে এসে দাঁড়ালো।আমি চাঁদের জোছনায় স্পষ্ট মাঝির হতাশ মুখখানি দেখতে পাচ্ছি।ঘাটে এসেছি কিছুক্ষণ, একটা কাঠের চৌকিতে বসেছি।মশার আধিপত্য ঠিক বসতে দিচ্ছে না।দেখলাম মাঝির হাতে ছোট্র একটা আলো জ্বলে উঠলো,এতোক্ষণ যে আলোর প্রয়োজন বোধ করেনি সে, সেটা জ্বলতে দেখে অবাক হলাম।একহাতে আলোর নিয়ন্ত্রণ রেখে আরেক হাতে মাছের বাছাইপর্ব চলছে।নদীর মাঝে জাল ফেলেছে মাঝি। সেখান থেকেই কিছু মাছ নিয়ে কূলে ফিরে এসেছে। বুঝলাম এ মাঝির পরিচয় দুটো জেলে ও মাঝি। মধ্যরাতে যখন পারাপারের ইন্জিন নৌকাগুলো চলে না। তখন সে পারাপারেও মানুষকে সাহায্য করে।তাতে তার বাড়তি কিছু আয় হয়।অভাব মানুষকে পরিশ্রমী হতে বাধ্য করে।

পিঠে লালবাতি জ্বালিয়ে নিশ্চুপ নদীকে জাগিয়ে 
কর্কশ কন্ঠে এগিয়ে যাচ্ছে  একটি নৌকা।ফিরছে হয়তো আপন ঠিকানায়, ব্যস্ততাও তাড়া তার আওয়াজ ও চলনে।সে আওয়াজ থামতেই মাঝিকে প্রশ্ন করলাম,
মাছ কেমন পেলেন?

—'নারে ভাই,ভালা না।এইখানে মাছ তেমন পাওন যায় না।ভাবছি সমুদ্রে যামু বড় নৌকায়।সেইখানে অনেক মাছ পাওন যায়।
এভাবে সংসার চালাতে বড় কষ্ট হয়।চারজনের মুখে কোনোরকম দানাপানি পড়ে। মহাজনের কাছেও অনেক ঋণ জমছে।'

—সারারাত কী মাছ ধরবেন?
—জ্বি ভাইজান।

তার চেহারা দেখে বড় মায়া লাগলো।কী কষ্টের জীবন!
সমুদ্রমুখী একটা নৌকা বিরাট ডেটয়ে তার ছোট্ট নাও কাপিয়ে দেয়।সে নৌকায় বেশকিছু মানুষের মাথা দেখা যায় অন্ধকারেও।তারাও জেলে। সমুদ্রে ছুটছে মাছ শিকারে। তাদের  দিকে আনমনা হয়ে তাকিয়ে থাকে মাঝি।তার কথা থেমে যায় ভাবনায়।কী যেন ভাবে কিছুক্ষণ নিজমনে।
একটু পরে বলে ওঠে—'ভাই, আমি যাই নদীর মাঝখানে, দেখি কিছু মাছ জালে আটকা পড়ছে কি না।'
ইচ্ছে হচ্ছিল,তীরের নরম কাঁদায় পা ডুবিয়ে এগিয়ে গিয়ে নৌকায় উঠি। তার সাথে মাছ ধরি সারারাত।আর গল্প করি জীবনের,জীবন্ত বাস্তবতার।