পোস্টস

প্রবন্ধ

অমাবস্যার চাঁদ

১০ জুন ২০২৪

শ্রাবন দেবনাথ

মূল লেখক শ্রাবন দেবনাথ

ভাবনা! মানুষের অন্যান্য কিছু বৈশিষ্ট্যের মতো সে যে ভাবতে পারে এটাও একটি বৈশিষ্ট্য। এই ভাবনাতেই সে রাজা,এখানেই সে পরাজিত প্রহরী। তার অবকাশে থাকে না এক মুঠো স্বস্তিও যখন ভাবনা তাকে গ্রাস করে।
মানুষ দুটো শব্দ শোনে একটা হলো, ''echo'', যা নিজের ভেতরকার শব্দ।আরেকটি হলো, ''noise'', যা সমাজ বলে। আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কোনটি শুনবেন।সংস্কৃতে একটি শ্লোক রয়েছে, ''চিন্তা চিতা সমঃ''।
অর্থাৎ, চিন্তা আর চিতা সমান।তাই, শুধু শুধু কেনইবা চিন্তার আগুনে পোড়াচ্ছেন নিজেকে।

জীবনে অনেক পরাজয় আসে।জীবন মানেই যে যুদ্ধ, সেটি আমরা কমবেশি সবাই ঢেড় ভালো জানি।তবে নতুন কি? যা জানি তাই যে ভুল।জীবন যে কতটা বিচিত্র পাঁচদশ জনকে না অবজারভ্ করলে সেটি বুঝবেন না।আচ্ছা, আপনিই বলুন না, যে আপনি কবে তীর-তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধ করেছেন, আবার তাতে আপনার জীবনে বিজয়ও এসেছে।ভেবে বলুন।

জীবন যে যুদ্ধ নয়, সেটি যেমন ঢেড় বেশি সত্য।ঠিক তেমনি, বেঁচে থাকতে নিজের সাথেই নিজের লড়তে হয়, এইটেও সত্যি।এটিকে ভুল বলবো ওমন সাহস আমার নেই বৈকি।জীবনের সংঙ্গা কি হতে পারে! সেটি কি প্রাণীদের শেষ দিন অবধি বেঁচে থাকার যাত্রা নাকি দু-এক দৃশ্যে ভরপুর স্বল্প দৃষ্টিতে চোখের সামনে হাতড়িয়ে বেড়ানো নিজের চাওয়া-পাওয়া গুলো।

জীবনকে যুদ্ধ মনে করে জন্মের পরপরই ঢাল-তলোয়ার হাতে যারা নেমে পড়েন যুদ্ধে, তারা আর যাই হোক,কোমল পরশে সিক্ত হতে পারে না।''Life is merely as your thoughts .জীবনকে ঠিক যেমনটি মনে করবেন,জীবন আপনার কাছে ঠিক তার সেই রূপটিই দেখাবে।কসাইয়ের কাছে জীবন, মা হরিণ কিভাবে তার সন্তানকে আগলে রাখে সেটি দেখাবে না, সে দেখাবে কিভাবে বাঘ মা হরিণকে খাবলে খাচ্ছে।

জীবন কোনো যুদ্ধ নয়, জীবন হলো একটি রাস্তার মোড়। যে তার জীবনে থেমে আছে, সে আসলে সেই মোড় পার হচ্ছে, আর যাকে আমরা চলতে দেখছি সে আসলে সেই মোড় পেরিয়ে এসেছে।এমন অনেক মোড়ে জীবনের রাস্তাটি সাজানো।প্রত্যেক মোড়ের পরেই থাকে একটি নতুন চমক, থাকে একটি নতুন দরজা যা ভাবনার শিকলগুলোকে চূর্ণবিচূর্ণ করে সেই পরমাত্মার নামে চালিয়ে নেয় আমাদের।

নজরুলের আত্মসত্য বা লালনের সাম্যের গানই হোক না কেন,প্রজন্ম প্রজন্মে তা আজও আমাদের মনে আছে কি?,  প্রশ্ন করুন নিজেকে।নিজেকে জানাই যে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য, সেটি আত্মসত্য উপলব্ধি ব্যতিত কিঞ্চিৎ বোধগম্য হবে না বৈকি।

বেঁচে থাকতে গেলে অনেক সমস্যা আসে।কখনো বা কঠোর পরিশ্রম, কখনো বা কঠোর বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের প্রয়োজন পড়ে।চৌকশ তারুণ্যের পরিচয় দিতে হয়,নিজের কাছেই নিজেকে।কিন্তু মনের আবেগ সময় মতো সামলে নিলে দেখবেন দিনশেষে সব সফলতা আপনার হাতে লেখা ডায়েরিতে জড়ো হয়ে এসেছে।

পরাজয়! শব্দটি কতবার শুনেছেন? কতবার শুনেছেন আপনি কোনো কাজেরই না, কতবার মনে হয়েছে আর নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবেন না? আত্মহত্যার সব পাপ-পূণ্যের হিসাব সেরে কতবার পাপী হতে চেয়েছেন?
হয়তো অসংখ্য, অগণিতবার।

কিন্তু, সময়!সময়!সময়! 
ধরুন,আপনার খুব জ্বর করেছে।আপনার মুমূর্ষু অবস্থা।তখন দেখছেন আপনার মা আপনার পাশে বসে আছেন,বসে আছেন আপনার আরো কত প্রিয় মানুষগুলো।

আপনি সেরে ওঠার সাহস পাবেন।একদিনে সারবেন না,সময় লাগবে।কিন্তু মা যে আছেন, সে থাকতে আপনার সুস্থ হয়ে ওঠা অনিবার্য। তাকে ফাঁকি দিবে ওমন সাধ্যি কার?!!
নিজেকে সময় দিতে হয়,নিজেকে কারো জন্য বাঁচিয়ে রাখতে হয়।

জীবন একটাই। পৃথিবীতে এসেছেন নিজের নাম রেখে যাবেন না ???

মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায়,কারণ সে নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করে।সে ভালো জিনিসগুলো তুলনা করেও কষ্ট পায়।নিজের সমস্যাগুলোকে সেই অন্যের থেকে বড় মনে করেও কষ্ট পায়।স্যাডনেস এর যেন ইন্সুইরেন্স করানো।সে যেন সুখে থাকতেই চায় না।

আমরা নিজেদের সান্ত্বনা দেই এটা বলে, ''Exception is not an example. ''
কিন্তু নিজেকে এটা বলে সাহস দেই না যে,
'' Exception can be an instance. ''
ব্যতিক্রমই দৃষ্টান্ত তৈরি করে।উদাহরণ নয়।
উদাহরণ হয় '' in general '', কিন্তু আপনি কি হতে পারবেন না,  '' Beyond general. ''???