Posts

গল্প

দাদু (ছোট গল্প)

June 10, 2024

TUHIN MIAH

194
View

বাড়ির একমাত্র ছেলে হওয়ায় ছোট বেলা থেকেই সবার চোখে চোখে থেকেছি। আর চার-পাচঁ টা ছেলেদের মতো আমার ছোটবেলায় ছোটুছুটি হই হোল্লোর, খেলাদুলা করা হয়নি, না আমি এগুলো করতে অক্ষম বা সামর্থহীন ছিলাম না, আমার দাদুর চার ছেলে বড় ছেলে মানে আমার জেঠুর ঘরে এক এক করে তিন মেয়ে আর আমার বাবার এক মেয়ের পর আমার জন্ম তাই ছোট বেলা থেকেই আমার দাদু আমায় খুব ভালোবাসতেন। কিন্তু কথায় আছে অতিরিক্ত কিছুই ভালো না তাই তার এ ভালোবাসা আমার কাছে অসস্থির মতো লাগতো। প্রতিদিন স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার পর যখন আমার সকল সহপাঠি বন্ধুরা মাঠে খেলা করতো আমি তখন বাসায় থাকতাম, কারন দাদু বলতো খেলতে যাবার দরকার নেই বল এসে চোখে মুখে লাগবে। তাকে আমাদের বাড়ির সবাই ভয় পেত , দাদু একটু রাগি স্বভাবের ছিল, তার কথাই শেষ কথা। ১২ই নভেম্বর ২০০৫ আমার ক্লাস ফাইবের বার্ষিক পরিক্ষা শেষ । সকল ছেলেরা দলবেধে সাইকেল চালাতে যাবে আমাদের বাড়ি থেকে দুরের একটা মাঠে, আমি এসে বাসায় অনুমতি চাইলাম, মা বলল যা তর দাদুকে যেয়ে বল, আমি ভয়ে ভয়ে যেয়ে বলা মাত্রই বলে উঠল “সাইকেল চালিয়ে এক্সিডেন্ট করার দরকার নেই রাস্তঘাটের অবস্থা ভালো নয় আর এখন তো গ্রামের রাস্তায় ও ট্রাক চলে অহরহ“ তার কথা শুনে মনে মনে অনেক রাগ হলো আমি মনে মনে ভাবলাম হয়তো অন্য কোথাও জন্মালে ভালো হতো। এমন করে আমি আমার শৈবব কাটালাম সবার থেকে ভিন্ন। স্কুল ছুটি শেষ তার সাথে আমার প্রাইমারির গন্ডিপেরিয়ে এবার হাই স্কুলে যাবার পালা মনে মনে আনন্দ লাগছে। পরের দিন দাদু আমায় নিয়ে চলল হাইস্কুলে ভর্তির জন্য আমি মহা খুশি কারন প্রাইমারি স্কুল বাড়ির পাশে হওয়ায় অন্যসবার মতো টিফিন পলাতে, মিথ্যে বলে ছুটি কাটাতে , দুষ্টমি করতে পারিনি এখন একটু জিবন উপভোগ করা যাবে কিন্তু তা আর হলো না, হাই ইস্কুলের আমার ক্লাস টিচার ছিল আমার দাদুর দূর সম্পর্কের মামা । দাদু আমায় পরিচয় করিয়ে দিয়ে আর তার মামাকে বলে আসলো দেখে রাইখেন। তার পর এইভাবেই কেটে গেল আমার অনেক টা বছর আমি এখন কলেজে পড়ি, দাদু এখন আগের মতো নেই এখন তার শরির আগের থেকে অনেকটা দূর্বল হয়ে গেছে এখন হাটার জন্যে সে লাঠি ব্যবহার করে। তার পরেও সে আমায় আগের মতই আগলিয়ে রাখার চেষ্টা করে কিন্তু আমি একন কলেজ ছাত্র টগবগে যুবক আমি কারো শ্বাসন বারনের ধার ধারি না। দাদু এখন আর আগের মতো চলাফেরা করেনা তাই সকালে উঠে নামাজ পরে সে উঠানের  এককোনে বসে থাকে আর কাউকে দেখলে তার হাল হাকিকতের খবর নেয়। আমি ঘর থেকে বাহির হলে আমায় দেখলে জিজ্ঞাসা করে কোথায় যাও দাদু? আমি মাঝে মাঝে শুনেও না শুনার ভান ধরে চলে যাই, আবার কখন “এখানেই যাই ‘“ বলতে বলতে বেড়িয়ে যােই। এখন আমি আমার ইচ্ছে মত চলাফেরা করি বেশ স্বধিন। এখন কারো বাধা ছাড়াই আমি যা ইচ্ছে তাই করি। এর মধ্যে কলেজের বন্ধুরা মিলে একটা ট্যুরের ব্যাবস্থা করি  আর সেই মোতাবেক ট্যুরে চলে যাই, ফিরে এসে সুনি দাদুর শরির অনেক অসুস্থ দাদুকে নিয়ে বাবা আর কাকারা হাসপাতাল গেছে।

২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ আজ দাদুর সামনে দিয়ে অনেকবার বাড়ির বাইরে গেলাম আসলাম দাদু একবারো জিঙ্গেস করল না কোথায় যাও দাদু?

তার নিথর দেহ পরে আছে আমার সামনে , আজ আমার তার প্রতি সকল অভিযোগ  যেন কোথায় বিলিন হয়ে গেল জানিনা । 

হয়তো আমি দাদু হওয়ার পর তার আবেগ বুঝতে পারবো।

Comments

    Please login to post comment. Login