পোস্টস

নিউজ

ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনি কবি রেফাত আলারিরের প্রতি সম্মান জানাতে বহু ভাষায় অনূদিত হচ্ছে তার কবিতা

১০ ডিসেম্বর ২০২৩

নিউজ ফ্যাক্টরি

Featured Image
ফিলিস্তিনি কবি, লেখক, সাহিত্যের অধ্যাপক এবং অ্যাক্টিভিস্ট রেফাত আলারির ৭ ডিসেম্বর ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজা উপত্যকায় নিহত হয়েছেন। এই হামলায় তার ভাই, বোন এবং বোনের চার সন্তানও প্রাণ হারিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা ফিলিস্তিনি এই কবির লেখা একটি কবিতা তাদের মাতৃভাষায় অনুবাদ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।         

রেফাত আলারিরকে ‘গাজার কণ্ঠস্বর’ হিসাবে বর্ণনা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার সাহিত্যকর্ম নিয়ে প্রশংসার বন্যা বয়ে যাচ্ছে। তিনি শিক্ষা, কবিতা, সৃজনশীল লেখা, অনুবাদ এবং অ্যাক্টিভিজমের প্রতি তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি ছিলেন ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের নৃশংস দখলদারিত্বের অবসানের একজন সক্রিয় কণ্ঠস্বর। 

‘ইফ আই মাস্ট ডাই’ নামের কবিতাটি মৃত্যুর মাত্র এক মাস আগে লিখেছিলেন তিনি। এটি তার লেখা শেষ কবিতাগুলোর মধ্যে একটি ছিল। এই কবিতায় ইসরায়েলি হামলায় তার মৃত্যুর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। 

ইংরেজিতে লেখা এই কবিতার শেষ লাইনে তিনি লিখেছেন, ‘যদি আমাকে মরতে হয়, তবে এটি আশা নিয়ে আসুক। এটা একটি গল্প হোক।' 

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে একজন ব্যবহারকারী জানিয়েছেন, আলারির মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা জানার পর তার কবিতা চীনা ভাষায় অনুবাদ করতে আগ্রহী হয়েছেন তিনি।  

এক্সে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘কয়েকদিন আগে রেফাত আলারির কবিতা ইফ আই মাস্ট ডাই আমার চোখে পড়েছিল। কবিতাটি পড়ে আমি কেঁদেছিলাম। তার অনুমতি ছাড়াই তাৎক্ষণিকভাবে চীনা ভাষায় অনুবাদ করেছিলাম। অথচ এখন জানতে পারলাম তিনি আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গেছেন।'  

এরপর অন্যান্য ব্যবহারকারীরা তা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদের মাতৃভাষায় কবিতাটি অনুবাদ করে এক্সে পোস্ট করেন। এর ফলে ম্যাসেডোনিয়ান, আইরিশ, স্প্যানিশ, ইতালীয়, বসনিয়ান, জাপানি, হিন্দিসহ আরও অনেক ভাষায় এই কবিতার অনুবাদ দেখতে পাওয়া গেছে।  

একজন ব্যবহারকারী ইফ আই মাস্ট ডাই এর জাপানি অনুবাদ করে লিখেছেন, ‘এটা আমার জাপানি অনুবাদ। আমাদের পথ দেখানোর জন্য ধন্যবাদ, রেফাত। আরআইপি।‘     

আরেকজন এক্স ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘রেফাত এই কবিতাটি ইংরেজিতে লিখেছেন, যাতে বিশ্ববাসী এটা পড়তে পারে। তবে রেফাতের মাতৃভাষা আরবীতেও কবিতাটি বেঁচে থাকুক।‘    

পাকিস্তানি নিউজ চ্যানেল ডন টিভির একজন রিপোর্টার উসাত উল্লাহ খানও নিহত কবির স্মরণে একটি লাইভ সম্প্রচারের সময় কবিতাটির উর্দু অনুবাদ আবৃত্তি করেছিলেন। সাংবাদিক সানা সাঈদ এক্সে একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘রেফাতের কবিতার উর্দু অনুবাদ আমাকে আপ্লুত করেছে। আমি চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি।‘  

আলারির বন্ধুরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী টেলিফোনে তাকে হুমকি দিয়েছিল। তারা তার অবস্থান জানে বলে উল্লেখ করেছিল। এরপর তিনি নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে তার বোনের কাছে চলে যান। কিন্তু সেখানে গিয়েও ইসরায়েলি হামলা থেকে রক্ষা পাননি ফিলিস্তিনি এই কবি।

উল্লেখ্য, রেফাত আলারির ১৯৭৯ সালে গাজা উপত্যকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে লিটারেচার এন্ড ক্রিয়েটিভ রাইটিং এর  অধ্যাপক ছিলেন। ২০০৭ সাল থেকে তিনি এই  বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন। তিনি ‘গাজা আনসাইলেন্সড’ বইয়ের সহ-সম্পাদক ছিলেন। তিনি ‘গাজা রাইটস ব্যাক: শর্ট স্টোরিজ ফ্রম ইয়াং রাইটার্স ইন গাজা, প্যালেস্টাইন’ বইয়ের সম্পাদক ছিলেন। আলারির ‘উই আর নট নাম্বারস’ এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে একজন ছিলেন। ২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলের হামলার পর অলাভজনক এই  সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি এই সংস্থার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি লেখক ও চিন্তাবিদদের একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি করতে চেয়েছিলেন।

তার এক্স একাউন্ট ‘রেফাত ইন গাজা’ এর মাধ্যমে তিনি ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনী দ্বারা সংঘটিত চলমান নৃশংসতার পাশাপাশি মার্কিন প্রশাসনেরও কঠোর নিন্দা করেছেন।   

এদিকে ফিলিস্তিনি এই কবির মৃত্যুতে তার বন্ধু, সহকর্মী, সাবেক ছাত্র এবং অনুসারীদের মধ্যে শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। 

সূত্র: দ্য নিউ আরব, লিটহাব