পোস্টস

গল্প

ইচ্ছে কথা

১০ জুন ২০২৪

শুভ্র সুনজিত

নলছিটি রিসোর্টে বন্ধুদের আড্ডায় ফাঁকে হঠাৎ শরৎ পাশেই একটু দূরে ডেকে নিলো সুপর্ণাকে।

 

প্লেটোনিক লাভ বুঝিস?
হঠাৎ এ প্রশ্ন শুনে হতভম্ব হয়েগেল সুপর্ণা।
মানে? 
আরে নিষ্কাম ভালোবাসা। প্রেম আছে, মন আছে কিন্তু শরীর নেই?

এটা আবার কি?
প্লেটনিক লাভ বা নিষ্কাম ভালোবাসা এক শুদ্ধতম ভালোবাসা যাতে কামনা বাসনার এক বিন্দুও  স্থান থাকে না। মুখস্থের মতো অনর্গল বলে চলে শরৎ।

সকল ভালোবাসাইতো রোমান্টিক। কাম ছাড়া প্রেম হয়?
আরে থাম তো। পুরো ব্যাখাটি শোন। তারপর মন্তব্য কর।
আচ্ছা বল।
বিরক্ত হচ্ছিস?
কিছুটা তো হচ্ছিই। সবাই আড্ডায়। তুই আমাকে প্লেটোনিজমের ক্লাস নিচ্ছিস। বিরাট প্রফেসর অফ প্লেটোনিজম। বল তাড়াতাড়ি। বিরক্তি নিয়ে বলে সুপর্ণা।

শোন, একটা মানুষ আরেকটি মানুষকে তার সকল সত্ত্বা দিয়ে ভালোবাসবে, অনুভব করবে আত্মিক পর্যায়ে কিন্তু তাকে নিজের করে, নিজের ঘরে চাইবে না।

শুনলাম। এখন বল এর মাজেজা কি?
আছে। আছে। এতো অধৈর্য হচ্ছিস কেন।
আমি গেলাম।
প্লিজ আর দশ মিনিট সময় দে।
আরে দ্রুত বকবকানি শেষ করনা প্লিজ। আর এসব আমাকে বলে তোর কি লাভ?
আছে আছে, লাভ আছে। আয়াম ইন লাভ উইথ ইউ। বলেই মাথা নিচু বসে রইলো শরৎ।

 

সুপর্ণা এ কথা ঘুণাক্ষরেও ভাবে নি। সে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সে হকচকিয়ে গেলো। মুখটা কালো হয়ে গেলো। বৃষ্টিভেজা আকাশের মতো। ওরা বন্ধু। জাস্ট এই। এর বাইরে তার মনে কল্পনায়ও ছিলো না এমন কিছু।

 

কবে। কখন। কিভাবে? কেন?
অনেকদিন আগে থেকেই। ধর ৪/৫ বছর।
কই তোর চেহারায় তো কখনো দেখিনি?
দেখিস নি। কারন দেখাই নি। ওই যে প্লেটোনিক।
আমি মন খারাপ করলাম।
কেনো?
তুই জানিস এটা অসম্ভব। আমার দ্বারা এটা কখনোই পসিবল না।
আমি জানি। পসিবল না। কিন্তু...
আরে রাখতো। আমার সাথে নিশ্চয়ই প্রাংক করছিস! 
আরে প্রাংক না। সিরিয়াস। 
সত্যি?
সত্যি।
আমার দ্বারা অসম্ভব। 
আমি তোকে সম্ভব করতে বলছি না।

তুই কি চাচ্ছিস ক্লিয়ারলি বল।
আমরা বন্ধু হিসেবে থাকবো আজীবন। আরে অমিত-কেতকীর নয়। আমার ভালোবাসা হবে অমিত-লাবণ্যর মতো নিষ্কাম। আত্মিক।  কেউ জানবে না। শুধু মনের গহীনে একটি দিঘি। স্বচ্ছ জল। হিমেল হাওয়া। মাঝেমাঝে ডুব সাঁতার।

আমি পারবো না। 
তোর পারার প্রয়োজন নেই। আমারটা রইলো আমার মনে। নিরস্ত্র অনুভূতি। তোকে আঘাত করতে যাবে না। ক্ষতি করতে চাইবে না।

এটা হয় না। আমি মেনে নিবো না।
আমার ভালোবাসা তোর মেনে নেয়া লাগবে না, মনেও নেয়া লাগবে না। জাস্ট আমাকে আমার মতো ভালবাসতে দে। আমারটা আমার হৃদয়ে থাকবে আজীবন। অধিকার নিয়ে পথে নামবো না। শুধু মনে মনেমনে নীরবে ছায়ার মতো ভালোবেসে যাবো চিরকাল।

বন্ধ কর প্লিজ। জাস্ট স্টপ। আমি সত্যি কষ্ট পাচ্ছি। 

তোর কাছে চাইনি কিছু কোনোদিন। চাইবোও না কিছু কোনো দিন। শুধু একটা দাবী রাখবি? 

কি! 
আমি তোর দুঃখকষ্টের নীরব সাথী হিসেবে থাকতে চাই আজীবন। সুখগুলো সব তোর নিজের থাকুক।

আমি গেলাম।
পৃথিবীর যেখানেই থাকিস, যেভাবেই থাকিস, গহীন মনের অন্ধকারে যখন একাকী দাঁড়াবি বারান্দায়। মনে রাখবি কেউ একজন আছে তোর ছায়া হয়ে দুখ: শেয়ারার।

 

সুপর্ণা অনেকটা মন খারাপ করে চেয়ার ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শরৎ।

সে ভাবছে, মনের গহীনে পাঁচ বছর ধরে বয়ে বেড়ানো জগদ্দল পাথরটি আজ নেমে গেছে। কিছুটা হালকা লাগছে আজ। তার চোখজুড়ে শুধুই আনন্দাশ্রু। ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারার আনন্দ। সে অনুচ্চস্বরে বলে, আমার অনুভূতি তুই। আমার অনুভূতি শুধুই আমার। কেমনে পাল্টাবি আমার অনুভব। যেখানেই থাকিস, যেভাবেই থাকিস, বন্ধু ভালো থাকিস আজীবন।