সাবেক ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক মনসুর আলি খান পতৌদি একবার মির্জা গালিবের কবিতাকে নিজের বলে চালিয়ে দিয়েছিলেন। তৎকালীন বলিউড তারকা এবং স্ত্রী শর্মিলা ঠাকুরকে খুশি করার জন্য তিনি এই মিথ্যা কথা বলেছিলেন। অবশ্য পরবর্তীকালে শর্মিলা ঠাকুর জানতে পারেন, ‘দিল-ই-নাদান তুঝে হুয়া ক্যায়া হ্যায়’ কবিতাটি পতৌদি নন বরং গালিব লিখেছিলেন। এটিই মির্জা গালিবের বিশাল সাহিত্যকর্মের সৌন্দর্য। গালিবের কবিতা এতই সুন্দর যে মানুষ তাদের প্রিয়জনকে আকৃষ্ট করার জন্য এটি নিজের বলে চালিয়ে দিতেও দ্বিধা করে না।
মির্জা গালিব হচ্ছেন এমন একজন কবি যার কবিতা জীবনের প্রায় সমস্ত পরিস্থিতিতেই উদ্ধৃত করা যায়। ভারতের ইতিহাসে তার মত প্রভাবশালী কবি খুব কমই দেখা যায়।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) গালিবের ২২৬ তম জন্মবার্ষিকী ছিল। ১৭৯৭ সালে ভারতের আগ্রায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মুঘল সাম্রাজ্যের এই শেষ মহান কবির জীবন সম্পর্কে ইন্টারেস্টিং কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক।
১. তার আসল নাম মির্জা আসাদুল্লাহ বেগ খান। লেখালেখির ক্ষেত্রে তিনি গালিব নামটি ব্যবহার করতেন। উর্দু ভাষায় গালিব অর্থ বিজয়ী, প্রভাবশালী।
২. মাত্র ১৩ বছর বয়সে বিয়ে করেন তিনি। তার স্ত্রীর নাম উমরাও বেগম। কথিত আছে, তার ৭টি সন্তান হয়েছিল কিন্তু সবাই অল্প বয়সে মারা যায়।
৩. শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর তাকে ‘দবির-উল-মূলক’, ‘নাজম-উদ-দৌলা’, ‘মির্জা নোশা’ খেতাব দিয়েছিলেন।
৪. মির্জা গালিব রাজপরিবারের একজন কবি শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। এছাড়া তিনি মুঘল দরবারের একজন রাজকীয় ঐতিহাসিক হিসেবেও নিয়োগ পেয়েছিলেন।
৫. গালিব জীবিকার জন্য কখনো কোন কাজ করেননি। তিনি মুঘল সম্রাটদের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং বন্ধুদের সাহায্যে চলতেন।
৬. মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি প্রথম কবিতা লেখেন। তিনি উর্দু, ফার্সি এবং তুর্কি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন।
৭. সিপাহী বিদ্রোহের সময় গালিব তার চিন্তাভাবনাগুলো ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলেন। এগুলোই পরবর্তীতে বই আকারে প্রকাশ করেন তিনি। 'দাস্তাম্বু' নামের বইটি সিপাহী বিদ্রোহের ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও বইটিতে ব্রিটিশদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেছেন তিনি।
৮. ১৮৬৯ সালে তিনি ‘গালিব কি হাভেলি’ নামে পরিচিত বাড়িতে মারা যান। ৩০০ বছরের পুরনো এই বাড়িটিকে বর্তমানে গালিব মেমোরিয়ালে পরিণত করা হয়েছে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস