সময় রাত ১০:৩০ মিনিট বাসা থেকে বের হতে হবে।সময়টা বড় অস্থির যেতে হবে ঢাকা থেকে লক্ষীপুর পেট্রল বোমা হামলার জন্য সরকারি নির্দেশে রাত ৯ টার পরে মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ। বিকল্প চাঁদপুর হয়ে লঞ্চ এ যাওয়া সেখান থেকে লক্ষীপুর। এই অস্থির সময়ে জীবন চলে মরনের হুমকি মাথায় রেখে।
দুপুরবেলা খবর আসে পদ্মায় লঞ্চডুবির হালকা চিন্তা মাথায় রেখেই বাসা থেকে বের হওয়া। নীচে দেখা এক জটলা মানুষ খবর কি, লঞ্চডুবির দুইজন এই বাসার ই! তাদের লাশ আসছে আসছে খাটিয়া,পারিনা সাতার নিজেরাও যাচ্ছি লঞ্চে, ভয়ের শীতল স্রোত শীড়দাড়া বেয়ে নেমে আসে........
তবু শংকা নিয়েই সিএনজি নিয়ে রওনা দেই সদরঘাটের উদ্দেশ্যে সময় রাত ১১ টা টার্গেট ১২ টার চাঁদপুর গামি লঞ্চ ধরা। লঞ্চে ঊঠে কালো বুড়িগংগা নদীর পানি দেখে কলজে শুকিয়ে কাঠ মুখ পাংশুটে, সাতার ত পারিনা কিছুক্ষন আগের লাশের ছবি ভেসে ওঠে অজানা শংকা আবার জেকে বসে!
রাত ৪:০০ টা,চাঁদপুর টার্মিনালে লঞ্চ ভিড়ল। শেয়ার সিএনজি চালকদের হাকডাক। কিছুটা দোলাচাল এত রাতে ঊঠব নাকি ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষা করব, রাস্তায় চলছে অবরোধের পেট্রোল বোমার হাতছানি। চাঁদপুর লক্ষীপুর মহাসড়কে একটি পাব্লিক বাসও নেই নেই ট্রাক শুধুই বিচ্ছিন্ন কিছু সিএনজি চলছে।
শংকা নিয়েই শেয়ারে চড়ে বসলাম অপরিচিত দের সাথে যাত্রাপথেই মনে হল কি ভুলটাই না করলাম, কি ঘন কুয়াশা,হেডলাইট টিম টিমে, শীতে জবুথুবু, রাস্তা দেখাই যায় না, উইন্ড শীল্ড কুয়াশায় ঘোলা হয়ে যাচ্ছে আর অন্ধকারে পেট্রোল বোমা আর অন্ধকারের অজানা শংকা ত আছেই। আল্লাহ আল্লাহ করে অনেক টেনশন নিয়ে লক্ষীপুর!
ভোর ৫:৩০ স্থান লক্ষীপুর সদর হাসপাতাল, ইমার্জেন্সি ডাক্তারের রুমে বসে আছি, হন্তদন্ত হয়ে জনা চারেক লোকের প্রবেশ সাথে ১ দুধের শিশু নিস্তেজ আর এক মহিলা। ডাক্তারকে ঘুম থেকে জাগানো হল চেকের পর ডাক্তার জানাল শিশুটি আর বেচে নেই। কি সব বিড়বিড় করে মা ছাড়া বাবা ও ফুপু পরিচয় দানকারী মহিলাটি সেই শিশুকে নিয়েই আবার দ্রুত প্রস্থান! ঘটনাক্রমে উপস্থিত আমাদের বিস্ময়ের ঘোর কাটে না মৃত্যুর মিছিলও শেষ হয় না।
বিকেল ৪:০০ একটি ঢাকাগামী বাসে উঠলাম,আজকে সারাদিনে এই একটি বাসই টার্মিনালে আছে! পেট্রোল বোমার শংকা নিয়েই রাস্তায় এই একটি বাসই আছে। হয়ত ইজি টার্গেট, পেটের দায় বড় দায় তা ভুলে গেলেও যে চলে না।
সময় সন্ধ্যা ৬:৩০, হাইওয়ের পাশের এক ছোট্ট মসজিদে বাস থামল উদ্দেশ্য মাগরিব নামাজ আদায়। মসজিদ থেকে ভেসে আসছে "হাইয়ায়ালাস সালা.... হাইয়া আলাল ফালা..... আল্লাহু আকবার....
আবার যাত্রা শুরু ওই দুরে সুর্য অস্তগামী, পাড়ি দিতে হবে পেট্রোল বোমা হামলার সবচে ভয়ংকর রাস্তা কুমিল্লা অংশ। সাঝের মায়া নামে, সাথে গুটিগুটি পায়ে পায়ে শংকাও, এ শংকা মৃত্তুর, সময়ের বহু আগেই! .....