পোস্টস

গল্প

অদ্ভুত সুন্দর এক বিকেলের গল্প

১১ জুন ২০২৪

আসিফ রিফাত

ইদের ছুটি শেষ হয়েছে। ঢাকা ফিরতে হবে, কিন্তু বাসের টিকিট পাইনি। অগত্যা কাটা-লাইনে যেতে হবে। নির্দিষ্ট দিনে এসে একটা লোকাল বাসে উঠে পড়লাম। গরমের তীব্রতা আর হকারদের যন্ত্রণা, সব মিলিয়ে বিরক্তি চরমে পৌঁছেছে। সাধারণত এসব ক্ষেত্রে সানগ্লাস ও ক্যাপ পরে থাকি, যাতে বোঝানো যায়, এই ঝামেলা কোনো ব্যাপার না। কিন্তু ভিতরে ভিতরে খুব বিরক্ত হচ্ছি।

বাসে আমার সিটের পাশে কোনো মেয়ের সিট সাধারণত পড়েনা। এবারও যে পড়বে সেই আশাও করিনি। কিন্তু এবার আমার ঠিক সামনের সিটে একটা মেয়ে এসে বসল। মেয়েটা অদ্ভুত দেখতে—অনেক সুন্দর না, কিন্তু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হলো, এই চোখে তাকালে, চোখ ফিরিয়ে নেয়া মুশকিল।

 

আমি মেয়েটাকে দেখছি কিন্তু আশেপাশের মানুষকে বুঝাতে চাইছি দেখছিনা।  কিছু সময় পরে খেয়াল করলাম, মেয়েটাও আমাকে নোটিশ করছে। তার সাথে তার ভাগ্নী/ভাইজি সম্পর্কের কেউ ছিলো, যে সিটের উপর দাঁড়িয়ে আছে। মনে হলো মেয়েটার ইচ্ছেতেই পিচ্চিটাকে বাসের সিটে দাঁড় করিয়ে রেখেছে , পিচ্চিটা দাঁড়ানোর ফলে, অদ্ভুত সুন্দর কিন্তু অনেক সুন্দর না, মেয়েটা তখন আমার মুখোমুখি বসা। আমি তাকে দেখছি, সে ও আমাকে দেখছে।

 

জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যাবে, কি করে ইত্যাদি ইত্যাদি। জানলাম। আমাদের গল্প হতে থাকলো। কি অদ্ভুত! লোকাল বাসের গরম, অনেক মানুষের ঠেলাঠেলি, কোনো কিছুই খারাপ লাগছে না। আমি দারুণ সময় কাটাচ্ছি।

 

এরই মধ্যে লঞ্চ ঘাট পৌঁছে গেলাম। লঞ্চের টিকিট করতে হবে। আমি একটা সিগারেটের সন্ধানে চায়ের দোকানে যাচ্ছি, হঠাৎ মেয়েটা পিছন থেকে ডেকে জানালো, বেশি দেরি যেন না করি, কারণ সাথে তার বোন ও বোন জামাই আছে। অবাক হলাম। অদ্ভুত সুন্দর মেয়েটার সাহস আছে বটে।

 

চা-সিগারেট শেষ করে এসে টিকিটের লাইনে দাঁড়াইছি মাত্র। পাশ থেকে একজন ডাক দিলো, “এই হ্যালো", তাকিয়ে দেখলাম মেয়েটা আমাকে ডাকছে। জানালো আমার জন্যও টিকিট করেছে। বেশ ভালো লাগলো এটা ভেবে যে আরও কিছু সময় একসাথে কাটাতে পারবো।

 

টিকিট নিয়ে লঞ্চে উঠবো। দেখলাম মেয়েটার কাছে ভারি ব্যাগ। আমি তার থেকে ব্যাগটা চেয়ে নিলাম। আমি সাধারণত ভারি ব্যাগ পছন্দ করি না, পেইন লাগে। কিন্তু এখন দেখছি আমার ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি মেয়েটার মনে একটু জায়গা পাওয়ার সুযোগ।

 

আমরা একসাথে লঞ্চের দ্বিতীয় তলায় গেলাম। বেশ সুন্দর। খোলা জানালা দিয়ে পদ্মার হাওয়া গায়ে লাগে, সে হাওয়ায় মন জুড়িয়ে যায়। কিন্তু আজ আমার দারুণ প্রশান্তি লাগছে। কারণ আমার পাশে তখনও অদ্ভুত সুন্দর মেয়েটি দাঁড়ানো। হঠাৎ তার বোন জামাই জানালো। তারা নিচের ডেকে যাবে, কারণ তাদের বাচ্চাদের খাওয়ানো দরকার। মেয়েটা বিদায় নিয়ে চলে গেলো।

আমি চাইলে যেতে পারতাম। কিন্তু যাইনি। হয়তো চাইনি। কিংবা ভেবেছি এটুকু সুখ ভালো, এর বেশি কি দরকার! এই নিয়েই কত অলস বিকেল কাটিয়ে দেয়া যায়।