নিশীথ ছিলো গ্রামের এক নির্জন প্রান্তের ছেলে। বাবা-মা হারিয়েছে শৈশবে। তাই দাদু-ঠাকুমার সাথেই বড় হয়ে উঠেছে। নিশীথের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা ছিলো গ্রামের সেই পুরনো পুকুরপাড়, যেখানে বসে সে গল্পের বই পড়তো আর তার কল্পনার জগতে হারিয়ে যেতো।
একদিন বিকেলে, যখন আকাশে সোনালী আলো ঝিলমিল করছিল, নিশীথ সেই পুকুরপাড়ে বসে একটি রহস্যময় গল্পের বই পড়ছিলো। বইটির নাম ছিল "নিশীথের পাতা"। বইটি ছিলো অনেক পুরনো, দাদুর পুরনো আলমারি থেকে পাওয়া। প্রতিটি পাতায় ছিলো অদ্ভুত রহস্যময়তা।
হঠাৎ করেই একটি পাতায় এসে নিশীথ থেমে গেলো। পাতা খুলতেই একটি আলোকিত দরজা তার সামনে উদ্ভাসিত হলো। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। দরজা পার হয়েই সে দেখলো এক নতুন জগৎ। এখানে সবকিছুই স্বপ্নময়, যেখানে গাছেরা কথা বলে, নদীর স্রোত গান গায়, আর পাখিরা মানুষের মতোই গল্প শোনায়।
নিশীথ ধীরে ধীরে এগিয়ে চললো। কিছু দূর যেতেই সে দেখলো একটি সুন্দর পাখি, নাম বললো ঝিনুক। ঝিনুক তাকে বললো, "তুমি এখানে কীভাবে এলে, নিশীথ?"
নিশীথ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, "তুমি কি আমার নাম জানো?"
ঝিনুক মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো, "এই জগৎ তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলো, নিশীথ। তুমি আমাদের গল্পের নায়ক। এখানে তোমার কল্পনার সবকিছুই সত্যি হতে পারে।"
নিশীথের চোখে আনন্দের ঝিলিক ফুটে উঠলো। সে বুঝতে পারলো, এই জগৎ তার কল্পনার জগৎ। সে এখানে যা চায় তাই করতে পারে। সারা দিন ধরে নিশীথ ঝিনুকের সাথে ঘুরে বেড়ালো। অনেক অদ্ভুত আর মজার অভিজ্ঞতা হলো তার।
শেষে, সন্ধ্যা হয়ে এলে ঝিনুক বললো, "তোমার সময় শেষ নিশীথ। ফিরে যাও। তবে মনে রেখো, তোমার কল্পনার শক্তি অসীম। তোমার ভালোবাসা আর সাহস তোমাকে সবসময় সাহায্য করবে।"
নিশীথের মন খারাপ হলো, কিন্তু সে জানতো যে তাকে ফিরে যেতেই হবে। দরজা দিয়ে ফিরে এসে সে নিজেকে আবার পুকুরপাড়ে বসে থাকতে দেখলো। তার হাতে ছিলো সেই পুরনো বইটি, কিন্তু এখন তা আর রহস্যময় নয়। পাতাগুলো খালি।
নিশীথ বুঝতে পারলো, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই একটি গল্প লুকিয়ে থাকে। আর সেই গল্পের নায়ক সে নিজেই। তার জীবনে আরেকটি নতুন অধ্যায় শুরু হলো, যেখানে সে কল্পনার ডানায় ভর করে জীবনের সব চ্যালেঞ্জকে জয় করতে প্রস্তুত।