পোস্টস

গল্প

অদ্ভুৎ হাসি

১২ জুন ২০২৪

Md Assik

মূল লেখক মো:আশিক

গল্পঃ অদ্ভুৎ হাসি
লেখকঃ মো: আশিক
একটু আগে আমাকে অফিস থেকে চুরির অপবাদ দিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে..কারন ম্যানেজারের দুই নম্বরি কাজের কথা আমি জেনে গিয়েছিলাম..

তাই ম্যানেজার ষড়যন্ত্র করে বসকে দিয়ে আমাকে বের করিয়ে দিয়েছে।

অফিসের একজন মুরব্বি কলিগ আমার জন্য বসের কাছে সুপারিশ ও করেছিলো,কিন্তু কোনো কাজ হয় নি..বসের একটাই কথা আমি আর কিছু শুনতে চাই না ।

আমাকে কলিগরা বলল ..আজাদ ভাই আপনি চুপ থাকলেন কেনো?আমি জবাবে শুধু সাভাবিক হাসি দিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে এলাম ।।
কেউ কেউ তো বলেই বসল অদ্ভুৎ লোক নাকি আমি আর হাসিটাও ।।
কিছুক্ষণ পর আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড জুবায়ের আমাকে একটা কফিসপে দেখা করতে বলল।
আমি সেখানে গিয়ে দেখলাম আমার হবু বউ জুবায়েরের সাথে বসে আছে।
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম,কিরে তোরা দুজন দুজনকে চিনিস নাকি?

জবাবে আমার হবু বউ নীলা বলল..আসলে আপনাকে কথাটা আগেই বলা উচিৎ ছিলো যে আমি জুবায়েরকে ভালোবাসি আর জুবায়েরও আমাকে ভালোবাসে।আমাদেরকে বাসা থেকেও এখন মেনে নিয়েছে তাই আপনার সাথে আমার বিয়েটা ক্যান্সেল করতে এসেছি আমরা দুজন ।
আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে জবাবে আমার স্বভাবমতো একটা হাসি দিয়ে বললাম,,,আমাকে কিন্তু বিয়েতে স্পেশালভাবে দাওয়াত দিতে হবে।

কথাটা শুনে নীলা আর জুবায়ের আমার দিকে অদ্ভুৎভাবে তাকালো,,
আমার মুখে হাসিটা এখনো লেগে আছে।।এরপর আমি বললাম আজকের মত উঠি তাহলে!
ওরা দুজনেই বাকরুদ্ধ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে শুধু হু বলল।আমি কফিসপ থেকে বেরিয়ে হেটেই বাসার দিকে রওনা হলাম ..অনেকদিন এভাবে হাটা হয় না।রাত হয়ে গেছে এখনো বাসায় যাইনি,রাতের প্রকৃতিকে দেখতে থাকলাম মুগ্ধ হয়ে।
আকাশে চাদটা মেঘে ঢেকে গেছে আজকে তাও তো রাতের মুগ্ধতা এখনো অটুট আছে।
একা একা হাটছি আর আজকের দিনে আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মনে করে আনমনে হাসছি ..এইবার আমি নিজেকেই প্রশ্ন করলাম
.....

আজাদ তুই হাসছিস কেনো?এরকম যদি আজকে অন্য কারো সাথে হতো সে তো এতক্ষণ দুঃখে কষ্টে মুষড়ে যেতো ..ভেঙে পড়তো,অনেকে তো আত্মহত্যার পথ বেছে নিতো বা দেবদাস হয়ে ঘুরে বেড়াতো।। আর তুই হাসছিস!!

আমি নিজেই নিজের প্রশ্নের জবাব দিয়ে বললাম,,আরে আমি কষ্ট পাবো কেনো?আমি তো সুখের রাজা..


এরপর আমি মনে মনে হাসতে হাসতে বাসায় চলে আসব ঠিক তখনি ভাবলাম না থাক আজ আর বাসায় যাবো না,আজকে এই জনশুন্য রাস্তার সঙ্গী হয়ে থেকে যাই ,নির্জন রাতের কোলে মাথা রেখে একটু ঘুমাই,বাতাসকে বলব গান শোনাতে,আর তারপর মাটির ছেলে মাটির বুকে ঘুমিয়ে গেলাম মাথার উপর নীল আকাশের বিশালতাকে উপোভোগ করতে করতে ।।

খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম.তখন মাত্র লোকজন রাস্তায় আসা যাওয়া শুরু করেছে,অনেকেই আমাকে এভাবে রাস্তায় শুয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে চলে যায়..

আমি উঠে বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু বসলাম তখনি কলিংবেলের আওয়াজে দরজা খুলে দেখি বাড়ীয়ালা চাচা..উনাকে ভিতরে বসতে বলতেই উনি চিৎকার করে বলেন আজাদ তোমার তিন মাসের বাসা ভাড়া বাকি,আজকে টাকা দিবা নাহলে বাসা ছেড়ে দিবা..
আমি নাকি ছোটোলোক,ছ্যাচড়া
,আরো অনেক কথা শোনালেন আমাকে..

আমি তো অবাক হয়ে ভাবতেছি যে পরশুদিনই তো পাশের বাসার সাহেদের কাছে টাকাটা দিয়ে বলছিলাম যেনো বাড়িওয়ালাকে দিয়ে দেয়..আমি ব্যাস্ত ছিলাম তাই নিজে দিতে পারিনি..পরে সাহেদ আমাকে বলছিলো যে ও টাকাটা দিয়ে দিছে..তাহলে?

এই কথাটা যখনি বাড়ীওয়ালাকে বলতে যাবো তখনি কোথা থেকে সাহেদ এসে আমাকে কথাটা বলতে না দিয়ে ও বাড়ীওয়ালাকে বলল চাচা আপনি আজাদ ভাইকে এতো রাগারাগি কইরেন না,আজাদ ভাই মনে হয় এখোনো বেতন পায়নি,বেতন পাইলেই আপনার টাকাটা দিয়ে দিবে,তাইনা আজাদ ভাই?বলে আমার দিকে তাকালো,,

আমি অবাক হলাম কিন্তু কিছু না বলে ঘর থেকে নয় হাজার টাকা এনে বাড়ীওয়ালাকে দিয়ে দেই..যেই টাকাটা কালকে একজনের কাছ থেকে ধার নিছিলাম এই মাসটা চলার জন্য ওটাই দিয়ে দিলাম...

বাড়ীওয়ালা কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেলেন..হয়তো উনি আসল ব্যাপারটা কিছুটা আচ করার চেষ্টা করছিলেন..বাড়ীওয়ালা চলে যেতেই সাহেদ আমাকে বললো আজাদ ভাই আমাকে মাফ করে দেন,আমারো তিন মাসের বাসা ভাড়া বাকি ছিলো কিন্তু আমার কাছে কোনো টাকা ছিলো না তাই আপনার টাকাটা আমার বলে বাড়ীওয়ালাকে দিয়ে দিছিলাম...আমি সাহেদ কে আর কিছু বললাম না...

শুধু জবাবে আমার স্বভাবমত সেই হাসিটা দিয়ে ঘরে চলে গেলাম ...

আর ওদিকে দরজার বাহিরে দাড়িয়ে সাহেদ ভাবছে লোকটা কত অদ্ভুৎ! আমার কারনে বাড়ীওয়ালার কাছে এতো অপমানিত হলো তবুও আমাকে কিছুই বললো না?অবাক করে দিয়ে শুধু একটা অদ্ভুৎ হাসি দিলো?

আর আমি আবারো ঘরের ভিতর একা একা মনে মনে আবার হেসে উঠলাম...,
চলবে...

---------------------------------

 

 

গল্পঃ অদ্ভুৎ হাসি
লেখকঃমো:আশিক
পর্বঃ ২ ।।

পর্বের নাম (ছেড়া লাগাম)।


প্রথম পর্বের পর থেকে ....

 

এরকম দুঃখজনক ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটে আমার সাথে ..কিন্তু আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই নিজেকে দেখে..আবার নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি মাঝে মাঝে... কষ্ট পাই না কেন আমি আগের মত?
এইতো সেদিনকার ঘটনা... রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম তখন একটা ছেলে এসে আমার জামার কলার ধরল,তারপর ঠাসস ঠাসস করে কসে দুটো চড় মারলো,আমি অবাক হয়ে যাই যে আমি কি করেছি যে ছেলেটা আমাকে চড় মারলো? চড় দুটো মেরে ছেলেটা থেমে গেলো তারপর আবার যখন কলার ধরতে যাবে ঠিক তখনই আমার দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে বলল ভাই আসলে আমার ভুল হয়ে গেছে,,আমি যাকে ভেবে আপনাকে মেরেছি সে তো আপনি না ...ছেলেটা বলল একটা ছেলে দেখতে আপনার মত কিছুক্ষণ আগে আমার পকেট মেরে এখান থেক দৌড় দিলো ,আর আমি ভূল করে আপনাকে.....আমি তখন ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললাম ভুল তো মানুষই করে ..তারপর হাসলাম ,তখনও সবার মত ছেলেটাও আমার দিকে তাকিয়ে বলল শুধু বলল অদ্ভুৎ! আমি সেখান থেক চলে আসলাম ।।এরকম মাঝে মাঝেই ঘটে আমার সাথে ,শুধু আমি না প্রায় সবার সাথেই এমনটা ঘটে কিন্তু অনেকেই এগুলোকে মেনে নিতে চায় না,,আমিও মানিনি একটা সময়,ইটের বদলে পাটকেল মারতাম


চলেন এবার আপনাদের কে আমার জীবনের ছেড়া লাগামে নিয়ে যাই.....আমি আজাদ.. বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে..যখন যেটা চাই সেটাই পাই..কোনো অভাব নেই পরিবারে..অভাব ছিলো শুধু আমার আত্মতৃপ্তির।। খুবই বিলাশীতা পছন্দ করতাম আমি..সময়টা ছিলো কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা দিচ্ছিলাম সবেমাত্র..স্বাভাবিকভাবেই শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন এর সময় সেটা..কিন্তু আমার আত্তায় যে অতৃপ্তি ছিলো সেটাই আমাকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিলো ।।

যখন যেটা মনে চাইতো সেটাই করতাম ,কারো কথাই শুনতাম না..মারামারি,ইভটিজিং,নেতাগিরি,চুরি,কারো উপর রাগ হলে প্রতিশোধ নেয়া,কি করিনি,সবই করতাম ,যেটাই মনে চাইতো করতাম ।।যখন এসব আমার এসব কুকর্মের জন্য আর বাবা হাত খরচ দিতে চাইতো না তখন বাবার সাথে কত খারাপ ব্যাবহার করতাম ।। এরপর একদিন স্কুলে একটা ছেলেকে পিটিয়ে দাত ভেঙে ফেলছিলাম আমার জায়গায় বসে ছিলো সেজন্য ।।এরকম কুকর্ম ছিলো প্রতিদিনের রুটিন ।। কিছুদিন পর একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে কিছুটা কুকর্ম কমে গেছিলো ,কিন্তু কখনো ওকে বলিনি ।।তারপর এক সময় ঠান্ডা হয়ে গেলাম,,আর আমার কুকর্মের জন্য প্রথম থেকেই কেঊ আমাকে পছন্দ করতো না..আমার বন্ধুরা,পরিবার,সমাজ কেউই না ।।একটা সময় ভাবলাম ভালো হয়ে যাই ।

তারপর থেকে ভালো হতে শুরু করলাম।।কিন্তু ঐযে আমার অতৃপ্ত আত্তা সে আমার পিছু ছাড়েনি ।।সে আবার আমাকে অন্ধকারে নিয়ে গেলো ..

কিভাবে?

হ্যা বলছি...এরপর..যখন ভালো হতে শুরু করি তারপর আবার যখন সবাই আমাকে ভালোবাসতে শুরু করল তখন আমি সবসময় বাবা মাকে সবসময় প্রেসারে রাখতাম এটা চাই ওটা চাই বলে।।কখনো বাবা মা কে বুঝার চেষ্টা করতাম না ,তাদের কথা শুনতাম না ,আমার যা মনে চাইতো তাই করতাম ।। বাবা মা আমার উপর অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলো ..

আমার এমন অধঃপতনের কারনে আব্বুর সাথে প্রায়ই ঝগড়া হতো ...আব্বু আম্মু অনেক বুঝাতো ,সবাই বুঝাতো আমাকে,কিন্তু আমি কারো কথাই শুনতাম না ...এরপর অবস্থা এমন হলো যে কেউ যদি আমার খোজ খবর নিতো তাহলেও আমি সহ্য করতে পারতাম না ...মোটকথা আমার ইচ্ছার মনমত কেঊ কিছু না করতে পারলে তার সাথে আমার আর ভালো সম্পর্ক থাকতো না ।।একারনে এক সময় সবাই আবার আমার থেকে দুরে সরে যায় ।।আর আমি এবার একা একা হয়ে যাই ।।সারাদিন দরজা বন্ধ করে ঘরে বসে থাকি আর ভাবতে থাকি এভাবে থাকলে মনে হয় ভালো লাগবে।। সবাই আমাকে নিয়ে অনেক চিন্তিত হয়ে পড়ে।।কিন্তু এটাও আমার অসহ্য লাগতো ..কারন আমার আত্থা তো অতৃপ্ত ।।এরপর একসময় নিজের জীবনের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে যাই ।।আর কেউ আমাকে পরামর্শ দিলেও আমার মনে হতো আমাকে মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে ।।এরপর একদিন পরিবারের সবাই মিলে আমাকে ভালো পরামর্শ দিচ্ছিলো আর আমাকে তুলনা করে বলতেছিলো যে দেখো ওমুক ছেলেটা কত ভদ্র ,ওমুক জীবনে এটা করছে ওটা করছে,ওমুক কে সবাই কত ভালোবাসে কারন সে কত ভালো ..ইত্যাদি ইত্যাদি .তখন ওগুলো শুনে মেজাজ টা চরম পরিমান খারাপ হয়ে গেলো ।।নিজেই নিজেকে আর সহ্য করতে পারতেছিলাম না .....

 

গল্পঃ অদ্ভুৎ হাসি
লেখকঃ মো:আশিক
3rd part


সবাই যখন এতোই ভালো তাহলে তাদেরকে নিয়ে থাকুক সবাই..খুব অভিমান হলো,কিন্তু অভিমানটা সেদিন কার উপর হয়েছিলো পরিবার নাকি নিজের উপর?সেটা আমি আজও জানি না..তারপর আমি ঠিক করি যে অনেক দুরে চলে যাবো যেখানে আমি আমার মত থাকবো,কেউ আমাকে ডিস্টার্ব করবেনা যেখানে..এরপর গভীর রাতে ঘর থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা নিয়ে চলে গেলাম দিনাজপুর..সেখানে একদিন ঘুরলাম,তারপর দেখলাম যে কোনো একটা কাজ খুজতে হবে নাহলে টাকা শেষ হয়ে গেলে আর চলতে পারব না..এরপর একটা কাজ খুজতে থাকলাম ,কিন্তু একটাও কাজ পেলাম না ,এমনকি একটা চায়ের দোকানে পর্যন্ত কাজ পেলাম না..আর এদিকে টাকাও শেষ হয়ে এসেছে প্রায়..বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ভেবেছিলাম যেভাবেই হোক একটা কাজ পেয়ে যাবো, কিন্তু বাস্তবতা কতটা কঠিন সেটা তখন বুঝতে পারলাম।। এরপর যখন টাকা শেষ হয়ে গেলো তখন দুইদিন পর্যন্ত এভাবেই চলে গেলো ,শুধু পানি ছাড়া একদানা খাবারও জুটে নাই পেটে..অবশেষে আমি দুর্বল হয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিলাম ।।একবার ভাবলাম যে বাড়ি ফিরে যাই, কিন্তু আমার আত্মঅহংকার আমাকে যেতে দিলো না..তারপর আমি আত্মহত্যা করার জন্য একটা বড় বিল্ডিং এর ছাদে উঠলাম..তখন কেউ একজন পিছন
থেকে আমাকে ডাকছিলো, কিন্তু আমি ইচ্ছা করেই ডাক শুনলাম না...অনেক্ষণ ধরে ছাদের কিনারে দাড়িয়ে ছিলাম ,লাফ দেওয়ার সাহস পাচ্ছিলাম না।।তারপর যখন চোখ বন্ধ করে লাফ দিতে যাবো তখনি পিছন থেকে কেউ এসে আমার হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে আমাকে সরিয়ে আনে,আর আমি প্রচন্ড রাগে পিছনে ঘুরেই ভালোমত না দেখে একটা চড় কসে দেই লোকটার গালে...একটু পর যখন রাগ কমে হুশে এলাম তখন দেখলাম যে একটা সাদা দাড়িওয়ালা লোক ।।তখন আমার খারাপ লাগল কারন আমি কখনো মুরব্বিদের গায়ে হাত তুলিনি ।।কিন্তু একটু পরেই আমি বিব্রতকর অবস্থাতে পড়ে যাই,দেখলাম লোকটা অদ্ভুৎ,,কারন লোকটা হাসতেছে প্রাণ খুলে হাসতেছে...আমি তাকে জিগেস করলাম আপনি এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে হাসতেছেন ?লোকটা বলল সেটা সময় বলবে..এরপর উনি বললেন তুমি আত্মহত্যা করো কিন্তু তুমি আমার একটা অনুরোধ রাখো ।।
আমি বললাম ইচ্ছা হলে রাখবো...তখন তিনি আমাকে কিছু টাকা দিয়ে বলেন যে যাও করুন পরিস্থিতির মানুষগুলোর জীবন দেখে আসো ।।
তারপর আমি হাটতে থাকলাম ,এক পর্যায়ে একটা পার্কের সামনে থেকে দশ টাকার আচার কিনলাম খাওয়ার জন্য ,মাত্র একটুখানি আচার মুখে দিছি ঠিক তখনি একটা কাক আমার পাশ দিয়ে উড়ে গেলো আর সেই বাতাস লাগলো আচারে...আর আমি

তখন ঘৃণায় আচারটুকু প্যাকেটসহ ছুড়ে দিলাম,সেটা পড়ল রাস্তার পাশে ডাস্টবিনে,আর তখনি একটা ৭_৮ বছরের ছেলে দৌড়ে এসে আচারটা ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে নিলো,যার পরনে শুধু প্রচুর ময়লাযুক্ত একটা হাফপ্যান্ট আর কোনো কাপড় নেই শরীরে ।।গায়ের হাড্ডিগুলো যেনো চামড়ার সাথে লেগে আছে..আমি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছি তখন ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে খুশিতে একটু হেসে দিলো আর ছেলেটার দিকে তাকাতে পারলাম না ,ওখান থেকে চলে আসলাম আর ভাবতে থাকলাম এতো ছোটো একটা ছেলে ঐটুকু খাবার পেয়ে কতো খুশি হলো আর আমি অতি সামান্য কারনে খাবারটা ফেলে দিলাম?বুকের ভিতরে মোচড় দিয়া উঠলো আমার এটা ভেবে।।তারপর আনমনে হাটতে হাটতে একটা ভাঙা কাচের টুকরো ঢুকে গেলো পায়ে,আমি ভাবলাম ইনফেকশন হতে পারে তাই একটা হসপিটালে চলে গেলাম ড্রেসিং করাতে,সেখানে ঢুকতেই দেখলাম একজন রোগীকে আনা হচ্ছে ট্রেতে করে,সম্ভবত কোনো ট্রাক অথবা বাসের সাথে মারাত্মক ভাবে এ্যাক্সিডেন্ট করেছে লোকটা,মাথার খুলি ফেটে ঘিলু দেখা যাচ্ছে,একটা পা একেবারে গুড়িয়ে গেছে,চোখগুলো বেরিয়ে এসেছে,শরীর প্রত্যেক জায়াগার হাড় ভেঙে গেছে,তবুও লোকটা বাচার জন্য লড়াই করতেছে,অপারেশন থিয়েটার থেকে লোকটাকে আই সি ইউ তে রাখা হয়েছে,এযাত্রায় বেচে গেছে

লোকটা,তারপর দেখলাম লোকটা হাসতে পারছে না তবুও অনেক কষ্টে হাসলো,বেচে থাকার আনন্দে ,তখনি আমার আত্মহত্যার কথাটা ভেবে আবারো বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো.....

 

এরপর পায়ের ড্রেসিংটা করিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে হাটতে থাকলাম,সারাদিন হাটতে হাটতে আর আজকের ঘটনাগুলো মনে করতে করতে শরীর আর মন ভীষণ ক্লান্ত হয়ে গেছে,হাটার শক্তি নেই শরীরে,তবুও কোনোরকমে হেটে একটা রেলস্টেশনের এক কোনায় এসে পড়ে গেলাম আর উঠতে ইচ্ছা করলো না শরীরে শক্তিও নেই,ঐভাবেই ঘুমিয়ে গেলাম ওখানে,সকালে ঘুম ভাঙার পর উঠে বসলাম,তখন মনে হলো কালকে রাতের ঘুমটা জীবনের সবচেয়ে শান্তির ঘুম ছিলো,এবার খেয়াল করলাম আমার গায়ে একটা গামছা দেওয়া,হয়তো রাতে একটু ঠান্ডা ছিলো তাই কেউ দিয়েছে,কিন্তু কে?তখনি দেখলাম একটা ১৪-১৫ বছরের ছেলে আমার পাশে শুয়ে আছে,দেখলাম তার পরনে একটা ছেড়া ট্রাউজার আর গায়ে ছেড়া একটা স্যান্ডো গেন্জি,আমি ছেলেটাকে জিগেস করলাম যে গামছাটা কার?
তখন ছেলেটা বলল আপনাকে আগে তো এখানে দেখি নি,কাল রাতে দেখলাম মেঝেতে শুয়ে ঠান্ডায় কাপছিলেন তাই গামছাটা আপনার গায়ে দিছিলাম।।আমার অভ্যাস হয়ে গেছে তাই আপনারে দিছিলাম গামছাটা,বলেই ছেলেটা হেসে দিলো,আমি তখনি অনুভব করলাম অদ্ভুৎ হাসিটা..এই হাসিটা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ হাসি,এটাই সেই অমৃত যার খোজে মানুষ কত কি করে!কিন্তু কেউ আসল জায়গায় এটা খুজতে জানে না।।

 

বিঃদ্রঃ অদ্ভুৎ হাসিটা কিন্তু শুধু অদ্ভুৎ সময়ে হাসার কারনে অদ্ভুৎ বলা হচ্ছে..এ হাসি স্বাভাবিক,এতে কোনো আতঙ্ক নেই ।।গল্পের শেষ পর্যন্ত পড়লেই বুঝতে পারবেন এর মর্ম..

জানি না লেখাটা কেমন হচ্ছে বা হবে,,, আমি তো সুখের রাজা হতে চাই ,হতে চাই দুঃখের বিজেতা ।।অবাক পৃথিবী দেখুক আমার অদ্ভুৎ হাসি কতটা তৃপ্তিময়।।