পোস্টস

গল্প

ভিন্ন গন্তব্য

৭ মার্চ ২০২৪

ঈফতেখার ঈশপ

মূল লেখক ঈফতেখার ঈশপ

ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত সড়ক। বাস আসে আর যায়। প্রচুর ভীড়,কিছুতেই উঠা যাচ্ছে না। প্রায় ৪৫ মিনিট অপেক্ষার পর একটা বৃদ্ধ বাস আসতেই অন্যান্য যাত্রীদের সাথে পাল্লা দিয়ে উঠে পড়ে অশ্রুত। রোজকার ক্লান্তি পিঠে অসহ্য জীবনের ভারবাহী পা দু'টো রাখার কোনরকম সুযোগ পেয়ে আনন্দিত সে।অতঃপর নিজেকে গুছিয়ে দৃষ্টি ফেরাতেই বাসের গ্যালারিতে সে প্রভাতী'কে দেখতে পায়, চোখাচোখিও হয় পরস্পরের। অশ্রুত চোখের বিশ্বাস হারায়,চিমটি
খেয়ে দেখে স্বপ্ন নাকি বাস্তব? দুজনের চোখে-মুখে নস্টালজিক ঘোর। বারে বারে দৃষ্টিবিনিময় চলছে অথচ কারো মুখে কোন কথা নেই। থেমে থেমে  চলছে কালুরঘাট লোকাল  আর অশ্রুত'র চোখে ভাসতে থাকে বিগত বসন্তের হাত ফসকে পড়ে যাওয়া গোলাপের দিনগুলো।

অশ্রুত জানে,সময় প্রিয়মুখকে হত্যা করে বিষাদ
আনে। কিন্তু প্রিয়মুখের নিরবতায় সময় যে থেমে যায় তা জানতো না। ধীরে ধীরে অশ্রুত ডুবতে থাকে রোদচশমার নির্গত তাপে। প্রভাতীর সবই অপরিচিত অশ্রুতের। আগের চপলতা প্রভাতীতে নেই,চোখে তার পাওয়ার গ্লাস। বেণী আছে কিনা দেখা যাচ্ছে না,অবগুন্ঠনে ঢাকা পড়েছে চুলেরা। সে এখন কোন ব্রান্ডের পারফিউমে যুবক মাতায়,কোন হাতে বন্ধক রাখে অপরাজিতার বাগান, কিছুই জানা নেই অশ্রুতের। কেউ কাউকে না চেনার এই খেলাটা একদিকে যেমন উত্তেজনাকর অপরদিকে বহুগুণ যন্ত্রণার। অশ্রুতের মনে পড়ছে,প্রভাতীদের বারান্দার পাশে যে বৈঠকখানা আছে,তাতে এক সময় তুমুল কথার ঝড় উঠতো কাঁপা কাঁপা দু'জোড়া ঠোঁটে কিংবা প্রভাতীদের বাগান বাড়িতে দাবা খেলায় প্রভাতীকে জিতিয়ে উল্লাসের কথা।প্লাস্টিকের গোলাপেরা কেন সুবাস ছড়ায় না,সে এখনো জানে না।হারুন মামার কটেজে জন্মদিনের বিকেল উপহারের কোন ব্যাখ্যা অশ্রুত আজও পায় নি।হেলপার ভাড়া চাইতেই বিস্মৃতির অতলে হারানো অশ্রুত সংবিৎ নিজেকে ফিরে পায়। অবশেষে স্টপেজ আসে, বাস থামে। যে যার মতো নেমে যায় সকল যাত্রী।রাস্তার দুপাশে হাঁটছে দুজন। দুজনেই দুজনের নাম জানে,কেউ কাউকে ডাকে না। দুজনেই দুজনের চোখ
বুঝে,কেউ কারো দিকে তাকায় না। কবেকার একই গন্তব্যের দু'জন দু'দিকে ক্রমে সরে সরে যাচ্ছে,ভিন্ন গন্তব্যে।

শেষবার পেছনে তাকিয়ে চোখাচোখির সময় হয়তো দুজনেরই চোখে জল ছিলো অথবা কারো চোখই ছিলো না.......