পোস্টস

চিন্তা

মহাতারকা

১২ জুন ২০২৪

মুহাম্মদ আসিফ উল ইসলাম

মূল লেখক মুহাম্মদ আসিফ উল ইসলাম

সে সকল আজিকার কথা নহে। সাত সমুদ্র আর তেরো নদী পেরিয়ে, একটা দেশ ছিলো। সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা সেই দেশ।

 

তবে কালের বিবর্তনে দেশের অর্থনীতি, এক পা ভেঙে আরেকটা পা-ও ভেঙে পড়ার অপেক্ষায় দিনাতিপাত করছিলো। বাজারে নিয়ন্ত্রণ নেই, দেশের মানুষ ইচ্ছেমতো রাস্তাঘাটে চলাফেরাও করতে পারতো না পাছে কোনো চোর, ছিনতাইকারী বা মার্ডারারের সামনে পড়ে যায়। কথাও ঠিকমতো বলতে পারতো না, যদি অন্য কেউ রাগ করে পিছনে লেগে যায়।

 

অবশ্য এসব নিয়ে সে দেশের মানুষের বিশেষ মাথাব্যথা ছিলো না। সবকিছু সৃষ্টিকর্তার সাথে হাতে সঁপে দিয়ে ভালোই চলছিলো তাদের জীবন।

 

এদিকে সে দেশেই ছিলেন একজন ম্যাজিশিয়ান। যিনি শত অন্ধকারেও দেশের সকল শ্রেণির মানুষকে নিজের জাদু দিয়ে আনন্দ রাখতেন। রাখার চেষ্টা করতেন। পনেরো বছর ধরে একা পুরো জাতিকে বুঁদ করে রেখেছিলেন নিজের জাদু দিয়ে। দেশের সবাই এতো কষ্টের মধ্যেও সেই ম্যাজিশিয়ানের ম্যাজিক দেখে আবার বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে পেতো।

কালের বিবর্তনে ম্যাজিশিয়ানও বুড়ো হলেন। আস্তে আস্তে তারও জাদুর কলাকৌশল দেখানোয়, বয়সের ভার প্রতীয়মান হলো। সবকিছু আগের মতো পারেন না। কিন্তু দেশের মানুষের তো ম্যাজিক আর আনন্দ পাওয়ার জো ছিলো না। দেশের অবস্থাও তো ঠিক আগের মতোই।

 

অবশ্য অর্থনীতি, আইন, শাসন বিভাগের মতো ছোটখাটো বিষয় নিয়ে দেশের মানুষের মাথা ঘামানোর বিশেষ সময় এখনো নেই। তবে ম্যাজিশিয়ান বুড়ো বয়সে এসে কেনো ম্যাজিক দেখাতে পারছিলেন না, সেই গুরুতর অপরাধে রাস্তাঘাটে তার দেখা পেলেই 'ভুয়া, ভুয়া' রব তুলে সপরিবারে ম্যাজিশিয়ানকে দেশ ছাড়ার হুমকি দিতে লাগলেন। কারণ ম্যাজিশিয়ান এখন তাদের দু' চোখের বিষ।

 

তবে ম্যাজিশিয়ান অবশ্য এখনও হাল ছাড়েননি। তিনি জানেন, তার শেষ ম্যাজিক দেখানোর সময় এখনও আসেনি। দেশের মানুষ তার ওপর আস্থা হারালেও, তিনি তাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য সর্বদা প্রস্তুত। সময় আসবে, যখন তার জাদু আবারো মানুষের মন জয় করবে এবং সবাই বুঝবে, ম্যাজিশিয়ান বুড়ো হয়ে যায়, কিন্তু ম্যাজিক রয়ে যায়।