পোস্টস

গল্প

শুভ্র কদম

১২ জুন ২০২৪

সাফি আল মেহেদী

শুভ্রঃ আমি তোমায় কতটা ভালবাসি, তুমি হয়ত জানো, কিন্তু বোঝ না। কোন দিন বুঝবেও না।
মৃণ্ময়ীঃ বোঝার প্রয়োজনও বোধ করছি না।
শুভ্রঃ আমি হারিয়ে গেলে কি তুমি একটুও কষ্ট পাবে না!
মৃণ্ময়ীঃ অভালবাসার মানুষ হারালে কি কেউ কষ্ট পায়?
শুভ্রঃ আসলেই আমি তো তোমার মন্দবাসার মানুষ, কষ্ট পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
মৃণ্ময়ীঃ তবে তুমি হারিয়ে গেলে কিঞ্চিৎ সুখ লাভের সম্ভাবনা আছে, আর তোমার বিরক্তিকর কার্যক্রম সহ্য করতে হবে না।
শুভ্রঃ আজকের পর আর বিরক্ত করব না।
মৃণ্ময়ীঃ এই কথা গত দুইবছর থেকে শুনে আসছি।
শুভ্রঃ আমার প্রতি কি তোমার কোন অনুভুতি কাজ করে না?
মৃণ্ময়ীঃ এই প্রশ্নের উত্তর ও অনেকবার দিয়েছি, না কাজ করে না। কোন অনুভুতিই কাজ করে না।
শুভ্রঃ সময়ের সাথে তো অনুভূতি বদলায়।
মৃণ্ময়ীঃ জোর করে ভালবাসা হয় না শুভ্র, আগেও বলছি আবার বলি। জোর করে কারো ওপর অনুভুতি ও আসে না।
শুভ্রঃ একসময় তো ছিল ভালবাসা। ছিল অনুভুতির অতলে দুজনের হারিয়ে যাওয়া।
মৃণ্ময়ীঃ তা ভালবাসা ছিল না ভুল ছিল।মানুষ মাত্রই ভুল। আমিও করেছিলাম কনফিউশনে পড়ে। তার জন্য দুঃখিত।
শুভ্র: তাই বলে ভালোবাসার মত ভুল!
মৃন্ময়ী: না, না সেই কনফিউশন কে ভালোবাসা বললে ভালোবাসার অপমান করা হবে। তুমি কেন বুঝতে চাও না, শুভ্র!
শুভ্রঃ আচ্ছা সরি। আমি আসি। তুমি ভালো থেকো।
 


মৃণ্ময়ীর ভাল থাকা খুব বেশি দিন স্থায়ী হয় নি। শুভ্রকে হারিয়ে ফেলার পরেই সে শুভ্রের মর্ম বুঝতে পেরেছিল। আর না চাইতেও শুভ্র সত্যি সত্যিই হারিয়ে গেছে গল্পের পাতা থেকে। সেদিন থেকে কয়েকদিন পর, রাস্তা দিয়ে হাটার সময়, মিছিলের মধ্যে পড়ে যায় সে। মিছিলে ছোড়া পুলিশের এলোপাথাড়ি গুলির একটা তার মাথায় এসে লাগে হঠাত। সেখান থেকেই পৃথিবীর গোলক ধাধা থেকে অনন্তের পথে পাড়ি জমায় সে। প্রকৃতি তার অভাব কাউকে বুঝতে দেয়নি, খবরের কাগজে তাকে ছোট্ট একটু জায়গা দিয়ে, সব আগের মতই চালিয়ে নিচ্ছে। কেবল মৃন্ময়ী সে অভাব মেনে নেয় নি, পূরণ ও করে নি। অবশ্য সেদিনের খবরের কাগজ না পড়াতে, এই অভাবের খবরটা যে সে জানতেও পারেনি। আজও হণ্য হয়ে খুঁজে বেড়ায় সে শুভ্র নামের সে পরিচয় আর ঠিকানা বিহীন সেই বালককে। সে ভাবে সত্যিই হয়ত শুভ্র কোথাও হারিয়ে গেছে, অভিমান করে। অভিমান কমলেই সে ফিরে আসবে, ঝুম বর্ষায় ভিজতে ভিজতে, একগুচ্ছ শুভ্র কদম ফুল হাতে। সে জানেও না, শুভ্র দের হারিয়ে ফেললে তারা আর দ্বিতীয় বার ফিরে আসে না। তবুও মৃণ্ময়ীরা অপেক্ষায় থাকে। বৃষ্টির জলে অশ্রু মিশিয়ে একাকার করে তোলে। এই অপেক্ষাই কি ভালবাসা??