৪ হাজার ৩০০ বছর আগে প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতায় এনহেদুয়ান্না নামের একজন রাজকন্যা ছিলেন। তিনিই ছিলেন বিশ্বের প্রথম কবি। আক্কাদীয় রাজা সারগনের কন্যা ছিলেন তিনি।
মেসোপটেমিয়ার দক্ষিণে (ইরাক) উর শহরে বাস করতেন এনহেদুয়ান্না। তিনি মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ছিলেন। তার আগে কোনো নারী প্রধান পুরোহিত হওয়ার সুযোগ পাননি। নিজের যোগ্যতাবলে তিনি এই পদে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। সুমেরীয় চাঁদের দেবী নান্না এবং যুদ্ধের দেবী ইনান্নার উপাসক ছিলেন এই কবি।
এনহেদুয়ান্না দেবী ইনান্নাকে নিয়ে শ্লোক লিখেছিলেন। তিনি ৪২টি প্রার্থনা সঙ্গীতও লিখেছিলেন। এছাড়া কবিতাও রচনা করেছিলেন তিনি। এগুলো এখনো রক্ষিত আছে। তিনি রাজবংশের নারীদের কবিতা লিখতে উৎসাহিত করেছিলেন।
প্রাচীনকালে ধর্মীয় শ্লোক রচনার ক্ষেত্রে পুরুষদের আধিপত্য ছিল কিন্তু এনহেদুয়ান্না সেই ঐতিহ্য ভঙ্গ করেন। তার কাজগুলো মেসোপটেমিয়ার সমৃদ্ধ সাহিত্যের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
এনহেদুয়ান্নার কাজগুলো কিউনিফর্মে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। কিউনিফর্ম সুমেরীয়দের তৈরি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন লিপি। আনুমানিক ৩২০০ খ্রিষ্টপূর্বে ব্যবহৃত এই লিপির আকৃতি কীলকের মত হওয়ায় এগুলোকে কীলক লিপিও বলা হয়। কাদামাটি দিয়ে তৈরি চারকোণাবিশিষ্ট পাতে লেখার পর আগুনে পুড়িয়ে একে স্থায়ী করা হতো।
ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ স্যার লিওনার্ড উলি ১৯২৭ সালে সুমেরের উর শহরে খননকার্য পরিচালনা করেন। সে সময় তিনি কিছু মন্দিরের সন্ধান পান। পাথরের গায়ে খোদাই করা কবিতার নীচে এনহেদুয়ান্নার স্বাক্ষর পাওয়া গিয়েছিল। এর ফলে প্রথমবার প্রাচীন এই কবি সম্বন্ধে বিশ্ববাসী জানতে পারে।
নক্ষত্রমন্ডল সম্বন্ধে তার বর্ণনাকে সম্ভাব্য প্রাথমিক বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ হিসেবে ধারণা করা হয়। এজন্য তার প্রতি সম্মান জানাতে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন ২০১৫ সালে বুধ গ্রহের একটি গহ্বরের নাম ‘এনহেদুয়ান্না’ রাখে।
সূত্র: দ্য কনভারসেশন, দ্য টেমপেস্ট