পোস্টস

গল্প

বেগুনি শাড়ি

১২ জুন ২০২৪

সাফি আল মেহেদী

শুভ্রের সামনে রুপা দাঁড়িয়ে। পরনে বেগুনী শাড়ি, চোখে কাজল, কপালে ছোট্ট একটা টিপ, চুল-গুলো খোলা, বাতাসে উড়ে তার মুখে এসে পড়ছে, আর বারবার সে সেগুলো সড়িয়ে নিচ্ছে। সন্ধ্যার কনে দেখা আলোয় তাকে তুলনার অযোগ্য এক রুপবতী মহামানবীর মত লাগছে।


-রূপা, তুমি এত সুন্দর কেন?
-তোমার চোখটা আমায় সুন্দর দেখানোর জন্য বলে।
-এতদিন কোথায় ছিলে?
-তোমার খুব কাছেই ছিলাম, এত কাছে যে আলাদা করে আমায় খুঁজে পাও নি
-আমি তোমায় অসীম ভালবাসি রুপা
-পৃথিবীতে অসীম কিছুই নেই শুভ্র। সবই নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বিস্তৃত
-সীমার মাঝেই অসীম তুমি, প্রার্থনায় তোমার ছায়া চুমি, আমার মাঝে নেই আমি, পুরোটা জুড়ে শুধুই তুমি।
-কবিতা এখনও লেখ দেখছি!
-এতদিন লেখিনি,  তোমায় পেয়ে, আজ লিখলাম
-এত ভালবাসো কেন?
-জানি না। এ মায়া কাটে না।
-মানুষ যাকে বেশি ভালবাসে তাকে কখনও পায় না
-আমি তোমার আর হারাতে দেব না
-আমায় পেলে তো তুমি হারাবে!
-এইত তোমায় পেয়েছি
-এটা নিছক তোমার কল্পনা
-হয়ত। কল্পনায় তুমি আমার।
-বাস্তবে আমি অন্য কারো
-তাতে কি যায় আসে
-আর কতদিন এমন পাগলামি করবে?
-যতদিন নিশ্বাস নিব
-এখনও তোমার নিঃশ্বাস আমি?
-তোমার নাম্বার টা আজও সেই নামেই সেভ করা আছে
-পাগল একটা
-তোমার জন্য
 


সন্ধ্যার এই সময়টাতে শুভ্র মেন্টাল হসপিটালের পশ্চিম দিকটার করিডরে ঘুরাঘুরি করে আর এইভাবে একাই বিরবির করে। এই ওয়ার্ডের কর্মকর্তারা সবাই গত ১৭ বছর ধরে ব্যাপারটাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।এর মাঝে রুপা তার হাজবেন্ড কে নিয়ে শুভ্রকে দেখতে এসেছিল, শুভ্র তাকে চিনতে পারে নি।তার রুপা আর এই রুপার কোন মিল খুঁজে পায় নি হয়ত। রুপা মাঝে মাঝেই শুভ্র নামের এই পাগলের গল্প করে তার ছেলেটার কাছে।আর প্রচুর হাসে। এক পাগলের গল্প এতবার কেন শোনাতে হবে, তার ১৬ বছরের ছেলে শুভ্র, তা বুঝতে পারে না। আর তার মা যে প্রতিরাতে বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে অঝোরে কেন কান্না করে তাও বোঝে না। পৃথিবী বড়ই অদ্ভুত। কতশত রকম পাগলের কারখানা। 
 


আকাশে জোছনা উঠেছে। আজ বড়ই সুন্দর রজনী। শুভ্র আজই অনুপ্রভাকে তার মনের কথা বলে দেবে ভেবেছে। অনুপ্রভা তার সামনে দাঁড়িয়ে। পরনে বেগুনী শাড়ি, চোখে কাজল, কপালে ছোট্ট একটা টিপ, চুলগুলো খোলা, বাতাসে উড়ে তার মুখে এসে পড়ছে, আর বার বার সে সেগুলো সরিয়ে নিচ্ছে।