পোস্টস

গল্প

অপেক্ষায়

১২ জুন ২০২৪

সাফি আল মেহেদী

আনিস শান্তিপুর স্টেশনে প্লাটফর্মে বসে আছে। তার পাশেই একটা ছোট্ট ছেলে পাতলা একটা কম্বল গায়ে দিয়ে গুটি শুটি মেরে ঘুমাচ্ছে। তার মুখটা দেখা যাচ্ছে, কি নিষ্পাপ সুন্দর মুখ। আনিস হটাত করেই ছেলেটার জন্য মনে গভীর মায়া অনুভব করছে। মাঘ মাসের কনকনে ঠান্ডা, আনিসের কাশ্মীরি শাল আর সোয়েটার ভেদ করে যেন বুকের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। তবুও সে শালটা খুলে ঘুমন্ত ছেলেটার গায়ে দিয়ে দিল। সে যেন একটু নড়েচড়ে উঠল, চোখ একবার খুলে আবার কম্বলের ভেতর ঢুকে গেল। প্লাটফর্মে খুব বেশি মানুষ নেই, ঘরহীন মানুষেরা শোবার আয়োজন করছে, আর  কিছুক্ষণ পর শেষ ট্রেনটা আসবে বলে অল্প কিছু মানুষ অপেক্ষার প্রহর গুণছে। আনিস ও অপেক্ষারত মানুষগুলোরই একজন। চট্টগ্রাম থেকে দুপুর তিনটার দিকে রওনা দিয়েছে সুপ্রভা। চিঠিতে লিখে দিয়েছে ফিরতে রাত হবে, আনিস যেন আগে থেকেই স্টেশনে থাকে। আনিস বিকেল পাঁচটার সময় এসে বসে আছে, যদি আজ ট্রেন ঠিক টাইমে চলে আসে, আর সুপ্রভা আনিসকে স্টেশনে না পায় মন খারাপ করবে। মেয়েটা আবার সহজেই রেগে যায়। একবার কলেজের প্রিটেস্টে রসায়ন ২য় পত্র পরীক্ষায়, আনিসকে ঠিক ২ ঘন্টা পর টয়লেটের নাম করে বের হতে বলেছিল, যেহেতু আনিস কেমিস্ট্রির বস, তাই অবজেক্টিভ দাগিয়ে নিতে চেয়েছিল সে, কিন্তু স্যার কে ম্যানেজ করতে ৭মিনিট দেরী করে ফেলে আনিস, ওমনি রেগে মেগে ফায়ার হয়েছিল সুপ্রভা। সেই রাগ আকাশ থেকে মাটিতে আনতে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল আনিসের। দূরে হলুদ আলো দেখা যাচ্ছে, ওইত ট্রেন আসছে। আনিস ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে গেল। সবাই ধীরে ধীরে ট্রেন থেকে নেমে গেল। হন্য হয়ে আনিস সুপ্রভাকে খুঁজছে। কোথাও সুপ্রভাকে দেখা যাচ্ছে না। আনিসের মনের অস্থিরতা বাড়তে লাগল। ট্রেন ষ্টেশন থেকে চলে গেল, মানুষগুলোও সবাই একে একে অদৃশ্য হয়ে গেল। তবু সুপ্রভার দেখা পেল না আনিস। পাঁচ বছর ধরে একই ঘটনাই ঘটছে। তবুও আশা ছাড়ে না আনিস, হয়ত কোন একদিন হুট করে ট্রেন থেকে নামবে সুপ্রভা। স্বাভাবিক ভাবে আনিসকে বলবে গাধার মত দাঁড়িয়ে আছো কেন ব্যাগ ধর। আর বলো না রহনবাগ এসে রেল ক্রসিং এর জন্য এত লেট হয়ে গেল। চল তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরা যাক, অনেক রাত হয়ে গেছে বলে খপ করে আনিসের হাত ধরে ফেলবে, এর থেকে সুন্দর দৃশ্য কি শান্তিপুর ষ্টেশনে কোনদিন ঘটেছে! সেদিনের অপেক্ষাতেই অনন্তকাল কাটিয়ে দিতে পারে আনিস, তার অপেক্ষা কি ফুরোবে, কে জানে ফুরোতেও পারে, হয়ত সৃষ্টিকর্তা কোন ষ্টেশনে জীবন মৃত্যুর ক্রসিং করিয়ে দেবেন, তিনি চাইলে কি না করতে পারেন??