Posts

গল্প

শুভ্রের চশমা

June 12, 2024

সাফি আল মেহেদী

রুপার লাশ দেখে মিসির আলি বড় ধরনের একটা শক খেলেন। রুপার সারা শরীরে যেন কেউ ব্লেড দিয়ে অসংখ্য বার পোচ দিয়েছে। রুপার চোখ দুটোও ব্লেড দিয়ে খোচা দিয়ে গেলে দেয়া হয়েছে। জীবিত অবস্থায় যতটা সুন্দর ছিল রুপা, মৃত অবস্থায় তাকে ততটাই বিভৎস দেখাচ্ছে।

অটোপ্সির রিপোর্ট অনুযায়ী ভিক্টিমকে প্রথমে বিষ খাওয়ানো হয়েছিল। সেই বিষক্রিয়ায় সে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। আর অপর দিকে তার শরীরকে সার্জিকাল ব্লেড দিয়ে জীবিত অবস্থাতেই কাটা হয়েছে।

মোটিভ খুব সিম্পল। শুভ্র, হিমু আর রুপা তিন জন ফ্রেন্ড। শুভ্র আর হিমু দুজনেই রুপাকে পছন্দ করে। কিন্তু রুপা পছন্দ করে শুভ্রকেই। তাই হিমু ইর্শার বশবর্তী হয়ে খুন করেছে রুপাকে। আর ঘটনার দিন রুপাদের বাসার সিসি টিভি ফুটেজে হিমুকে দেখা গেছে রুপাদের বাসায় আসতে এবং বের হতে। আর খুন এর সময় টাও একই সময়ের মধ্যে।

তবুও মিসির আলি সাহেব কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত কেইস টা নিয়ে। তার দ্বিধার আগুনে ঘি পড়ল যখন মুনা নামের আরেকটি মেয়ের লাশ পাওয়া গেল ঘটনার দুই দিন পড়েই। আর খুনের ধরন হুবহু রুপার মতই। কিন্তু হিমু তো এই কাজ করতে পারে না, সে তো পুলিশ পাহাড়াতে নিজের বাড়িতেই ছিল। তাহলে খুনটা করল কে?

এদিকে রুপা যেই রুমে খুন হয়েছিল। সেই রুমের ফিঙ্গার প্রিন্ট কালেক্ট করে, ডিএনএ  টেস্ট করে যে স্যাম্পল পাওয়া গেছে। তার মধ্যে একটি ফিঙার প্রিন্ট রমনা থানার লিস্টে থাকা এক দাগী আসামীর ফিঙার প্রিন্টের সাথে মিলে গেছে। একই ফিঙার প্রিন্ট মুনার রুমেও পাওয়া গেছে। আসামীর নাম বাকের।

বাকের কে খুঁজে পেতে সমস্যা হয় নি। তাকে তার নিজের ঘরেই পাওয়া গেছে। সে নিজেই জবান বন্দী দিয়েছে। এই দুই মেয়েকে সেই খুন করেছে। কারণ এই দুই জনকেই সে পছন্দ করত কিন্তু কেউ তাকে পাত্তা দেয় নি। তাই রাগ করে তাদের সে খুন করেছে।

খুব বেশি ঝামেলা ছাড়াই বাকেরের ফাসির রায় হয়ে গেল। যদিও মিসির আলি সাহেব এর মন কেমন যেন খচ খচ করছিল। তবুও তার কিছু করার ছিল না। বাকের কে ফাসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হল।

যেই মাত্র বাকেরকে ফাসির মঞ্চে দাড়া করিয়ে নিচের ঢাকনা খুলে দেওয়া হল। তখনি মৃন্ময়ীর ঘুম ভেঙে গেল। সে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল। তার বুক এখনো ধক ধক করছে। সারাক্ষণ হুমায়ুন আহমেদের বই পড়ার ফল। ঘুমানোর আগেও সে "কোথাও কেউ নেই" পড়ছিল। তার বুকের ধুক পুকানি যেন থামছেই না। সে টেবিল ল্যাম্প জ্বালালো। টেবিল এ থাকা পানির গ্লাস থেকে এক গ্লাস পানি খেয়ে। গ্লাস রাখতে নিল। তখন ই তার চোখ পড়ল বাম পাশের দরজার দিকে। তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এল। দরজার সামনে শুভ্র দাঁড়িয়ে। তার হাতে একটা সার্জিকাল ব্লেড। টেবিল ল্যাম্পের আলোয় শুভ্রের চশমা আর সেই ব্লেড যেন চকচক করছে।

Comments

    Please login to post comment. Login