Posts

প্রবন্ধ

মস্তিষ্কে চিপ স্থাপন প্রযুক্তি || বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি নাকি বাস্তবতা

June 12, 2024

জেমাম আহমদ

159
View

মস্তিষ্কের চিপ ইমপ্লান্টেশনের ক্ষেত্রটি সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখেছে এবং এটিকে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি থেকে সম্ভাবনার রাজ্যে নিয়ে যাচ্ছে। এই প্রযুক্তির সম্ভাবনা আশ্চর্যজনক, তবুও এর সঙ্গে কিছু ঝুঁকি জড়িত। নিউরাল ইমপ্লান্ট, সাধারণত ব্রেন চিপস নামে পরিচিত, মস্তিষ্কের সঙ্গে একটি ইলেকট্রনিক সংযোগ স্থাপন করে। এগুলো বিভিন্ন আকারে এবং আকৃতিতে আসে এবং বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।

মস্তিষ্কের চিপ স্থাপন প্রযুক্তি পক্ষাঘাত, স্মৃতিভ্রংশ, পার্কিনসন রোগ এবং মৃগীরোগের মতো বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া জ্ঞান, স্মৃতি এবং মনোযোগ উন্নত করতে এই প্রযুক্তির ব্যবহারকে অভাবনীয় হিসেবে গ্রহণ করা হয়। টেলিপ্যাথি এবং অন্যান্য উন্নত যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেবে বলে বিজ্ঞানীরা আশা প্রকাশ করেছেন। প্রযুক্তি বিশ্বের কয়েকটি কোম্পানি এ বিষয়ে গবেষণা ও উন্নয়নের অনুমোদন পেয়েছে। মানুষের মস্তিষ্কে এক প্রকার স্পাইক আকৃতির ব্রেন চিপ স্থাপনের মাধ্যমে এই প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নিউরালিংক।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের মতে, স্পাইকস নিউরনগুলোর কার্যকলাপের প্রতিনিধিত্ব করে এবং নিউরন হলো এমন কোষ, যা বৈদ্যুতিক এবং রাসায়নিক সংকেতের মাধ্যমে মস্তিষ্ক এবং শরীরের তথ্য যোগাযোগ করে। মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন ২০২৩ সালে নিউরালিংককে মানুষের ওপর চিপ ইমপ্লান্ট পরীক্ষা করার জন্য অনুমোদন দিয়েছিল, যা রোগীদের পক্ষাঘাত এবং স্নায়ুতন্ত্রের নানা অবস্থার কাছে পেরিয়ে উঠতে সাহায্য করতে গবেষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে ওঠে। নিউরালিংকের ভাষায়, একটি রোবট ব্যবহার করে মস্তিষ্ক-কম্পিউটার ইন্টারফেস (ইঈও) ইমপ্লান্টটিকে মস্তিষ্কের এমন একটি অঞ্চলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে স্থাপন করা হয়, যা চলাচলের ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং তার প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে লোকজনকে শুধু তাদের চিন্তা ব্যবহার করে কম্পিউটার কার্সার বা কিবোর্ড নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম করা। ইমপ্লান্টের ‘অতি-মসৃণ’ থ্রেডগুলো অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কে সংকেত প্রেরণে সাহায্য করে।

নিউরালিংক ব্রেন-চিপ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা এলন মাস্ক ২৯ জানুয়ারি জানান, কোম্পানির প্রথম মানব রোগীকে ব্রেন-চিপ ইমপ্লান্ট করা হয়েছে এবং তিনি ভালো অবস্থায় রয়েছেন। তার পরদিনই এলন মাস্ক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরম এক্সে একটি পোস্টে বলেন, ‘প্রাথমিক ফলাফলে নিউরনের স্পাইক শনাক্তকরণে উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।’ অর্থাৎ এই প্রযুক্তি বিশ্ববাজারে অতি দ্রুতই খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা যেতে পারে। ইলন মাস্ক এক্সে একটি পৃথক পোস্টে বলেছেন, নিউরালিংকের প্রথম পণ্যটিকে টেলিপ্যাথি বলা হবে। উন্নয়নের পাশাপাশি এই প্রযুক্তির ঝুঁকি নিয়েও বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন। মস্তিষ্কের চিপ হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিতে থাকতে পারে, যা ব্যবহারকারীর মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহৃত হতে পারে। এ ছাড়া ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন হওয়ার দৃঢ় সম্ভাবনা তৈরি হয়।

ইতিমধ্যেই নিউরালিংক তার নিরাপত্তা প্রোটোকল সম্পর্কে নজরদারির আহ্বানের মুখোমুখি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স জানুয়ারির শুরুতে একটি রিপোর্টে বলেছিল, এই কোম্পানিকে বিপজ্জনক পদার্থের গতিবিধি সম্পর্কিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন বিভাগের (উঙঞ) নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০২৩ সালের জুন মাসে নিউরালিংকের মূল্যমান ছিল প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার, কিন্তু নভেম্বরের শেষের দিকে চারজন আইনপ্রণেতা মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে অনুরোধন করেছিলেন নিউরালিংকের প্রযুক্তির নিরাপত্তা সম্পর্কে মাস্ক বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করেছেন কি না, তা তদন্ত করার জন্য। কারণ পশুচিকিৎসার রেকর্ডে বানরের ইমপ্লান্টের সঙ্গে পক্ষাঘাত, জখম এবং মস্তিষ্ক ফোলার মতো সমস্যা দেখা গেছে। যদিও ইলন মাস্ক গত সেপ্টেম্বরে একটি সামাজিক মিডিয়া পোস্টে লিখেছিলেন, ‘নিউরালিংক ইমপ্লান্টের ফলে কোনো বানর মারা যায়নি।’

তিনি আরো বলেছিলেন, সুস্থ বানরদের ঝুঁকি কমাতে তারা ‘টার্মিনাল’ বানর বেছে নিয়েছে। মস্তিষ্কের চিপ স্থাপন প্রযুক্তি বিশ্বকে পরিবর্তন করার সম্ভাবনা রাখে। তবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার আগে এর সম্ভাব্য সুবিধা এবং ঝুঁকি সম্পর্কে সাবধানে বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রযুক্তির প্রায়োগিক ব্যবহার ও গবেষণা ক্ষেত্র নিয়ে নির্দিষ্ট বৈশ্বিক নীতিমালা প্রস্তুত করা খুবই জরুরি, যা এর ব্যবহারকে সাধারণ জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে আসবে।

Comments

    Please login to post comment. Login