তখন কোন ক্লাসে পড়ি? খুব সম্ভব ক্লাস ১/২ হবে৷ আব্বার মনে হল, উনার কম্পিউটার বিষয়টা শেখা উচিত৷ কিন্তু একটু বেশি পুরোনো আমলের মানুষ হওয়ায়, এই যন্ত্রের সাথে উনার বনিবনা হল না৷ আব্বা যে কাজ নিজে না পারে, সেটা অন্য কাউর উপর চাপায় দেয়৷ যথারীতি, মাকে কম্পিউটার সেন্টারে ভর্তি করায় দিল।
আব্বার চেয়ে মা বয়সে এক যুগ পিছিয়ে থাকলেও, মায়ের চিন্তা ধারা একযুগ পিছনে৷ কম্পিউটারের সে কিছু বুঝে না; কি একটা বাক্স তারসাথে তার লাগানো আর বিরাট একটা টিভি- এটাই তার কাছে কম্পিউটারের সজ্ঞা। তবুও, আব্বার অনুরোধে শিখতে যাওয়া লাগত।
আমিও রোজ মায়ের সাথে কম্পিউটার শেখা দেখতে যেতাম৷ যন্ত্রটা দেখলে ক্যান জানি, আমার মন ভাল হয়ে যাইত৷ ছোট বাচ্চা হওয়ায় কম্পিউটার ধরতে দিত না কেউ, তবুও আমি জাস্ট দেখার জন্যেই যাইতাম। খুব সম্ভব এটাই জীবনে প্রথম প্রেম।
মা কতটুকু শিখতে পারছিল জানি না, কিন্তু আমার মনের ভিতর ফাংশন গুলো ঢুকে গেছিলো একদম। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে, মনের ডেস্কটপে ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট রিভাইজ দিতাম৷ হা হা হা- মনের ডেস্কটপ কেন বললাম? আসলে ওই ডেস্কটপের কোন অস্তিত্ব-ই ছিল না।
দেখতে দেখতে, ৩/৪ মাসের কোর্স শেষ হল৷ এবার মায়ের পরীক্ষা দেওয়ার পালা। আমিও সাথে গেলাম। মা আর্টসের ছাত্রী ছিল, যথারীতি মুখস্ত জ্ঞানে পিএইচডি লেভেলের মানুষ৷ কিন্তু, পরীক্ষার হলে মুখস্ত বিদ্যা খুব একটা কাজে দিল না। ঘাবড়ে গেল ভীষণ৷ তার উপর ফেইল করলে, আব্বার সামনে মান সম্মান থাকবে না।
আমি প্রশ্নের টাস্কগুলো কিভাবে করবে, সেটা বলে দিলাম। মা এতটা নার্ভাস ছিল যে- আমি হেল্প করতেছি, এই বিষয়টা তাকে একফোটাও অবাক করল না।
৭/৮ দিন বাদে রেজাল্ট দিল, মা ত ভাবছিল ফেইল করবে৷ কিন্তু, কয়েকটা ট্রেইনিং সেন্টারের মধ্যে সে হাইয়েস্ট গ্রেড পাইছে৷ খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, তুই এসব পারলি কিভাবে?
আমি বললাম, জানি না। আন্দাজে বলছি৷
সত্যি বলতে ভয় লাগতেছিল। তখন ত কম কথা বললাম, অবজার্ভ করতাম বেশি৷ এখন, উল্টো হয়ে গেছি৷ মাঝে মাঝে মা এখনো জিজ্ঞেস করে, সত্যিই উত্তরগুলো আন্দাজে বলেছিলি প্রত্যয়? আমি আর কিছু বলি না৷ কিছু কিছু বিষয়ে মানুষকে রহস্যের মধ্যে রাখতে বেশ ভাল লাগে।