পোস্টস

গল্প

উদার মনোভাব

১২ জুন ২০২৪

আশ্রাফ বাবু

উদার মনোভাব

আশ্রাফ বাবু
 

এই পাড়াটির নাম খিতিবপাড়া। কেউ কেউ আবার নতুনপাড়াও বলে। বনপাড়া বাবুদের খাসের জমিতে গরীব মানুষ বাড়িঘর বানিয়ে অনেক  কষ্টেসৃষ্টে বসবাস করছে। এই পাড়াটি দিয়েই আমাকে স্কুল যেতে হয়। 

রাস্তার ধারে হাসু আর রহমতের বাড়ি। পাশাপাশি বাড়ি হলেও কিন্তু দুজন কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না। ওদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকে। একদিন হাসু আর রহমতের তুমুল ঝগড়া দেখেছি ; দুজন যে যাকে পারছে চড় থাপ্পড় লাথি ঘুষি মারছে...। এমন ব্যাপার  প্রায়ই ঘটে। 
 

এই তো কদিন আগের ঘটনা।  সেদিন দেখলাম হাসুর বউ বিলকিস চিল-চিৎকারে রহমতের বউ পলিকে ' কানীমুড়ী'  'নচ্ছার'  'হিজরেমাগি 'ইত্যাদি বলে খুব গালিগালাজ করছে। পলিও কম যায় না। সে হাত নেড়ে, মুখ বিকৃত করে, পা দুলিয়ে বলতে থাকে,  তু গেঁড়ি মাগি —তোর ছেলে হবে বেঁটে। একপক্ষ  "কানী" বলে তো আরজন " গেঁড়ি মাগি" বলে। দুজনেরই কিন্তু খুব আত্মসম্মানে ঘা লাগে। রহমত একটা চ্যালাকাঠ উঁচিয়ে রে রে করে বিলকিসের দিকে এগিয়ে যায়, বলে  : তোর ভাতারই তো খোঁচা মেরে পলির একটা চোখ কানা করে দিয়েছে আর তুই কি না ওকে "কানী " বলছিস । হাসু বাড়ি ছিলো না। খবর পেয়ে 'পড়ি কি মরি ' করে ছুটতে ছুটতে এসে দুজনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ওদের থা থাম করে দেয়। বউ দুজন গজরাতে গজরাতে বাড়ি ঢুকে পড়ে।  দু পরিবারে বাক্যালাপ বন্ধ। 
 

দুদিন পর থেকে দেখছি দুটি বাড়িতেই তালা ঝুলছে। একটু অবাক হলাম। ব্যাপারটা কী ? এপাড়ার প্রায় সকলেই আমার চেনা। খবর নিয়ে জানলাম, হাসুর বুকে হঠাৎ ব্যথা —সদরে ভর্তি করানো হয়েছে। 

ভানুর কাছে আরও জানতে পারলাম, রহমত বলেছে "হাসুর বউ 'বিলকিস গেঁড়ি' তো কোনো কাজই ঠিক মতন করতে পারে না, উ উখানে একলা কী করবে ? আমাদের মধ্যে গাল-ফৈজত মারামারি হতেই পারে কিন্তু বিপদের সময় ওসব মনে রাখলে কি হবে ? কথায় বোলে না 'গাঁয়ে মায়ে সমান '। আমরা সদর হাসপাতালে গেচি, দশদিন থাকতে হবে যে...." 
 

এসব শুনে আমি থ বনে গেলাম। মনে মনে ভাবলাম,রহমত  আর তার বউ কতো মহৎ, কতো উদার ! ওরা দুজন আমাদের অনেককেই অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে । মাথা নিচু করে নীরবে চলে আসার সময় আমি আনন্দের  অশ্রু কিছুতেই ধরে রাখতে পারলাম না।