পোস্টস

গল্প

কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ী উপজেলার পটভূমি ও নামকরণ ইতিহাস

১৩ জুন ২০২৪

মোঃ পাভেল মিয়া

মূল লেখক পাভেল মিয়া

কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ী উপজেলার পটভূমি ও নামকরণ ইতিহাস 

 

 

ফুলবাড়ী উপজেলার নামকরণঃ

বাংলাদেশের উত্তর জনপদের কুড়িগ্রাম জেলার আওতাধীন ফুলবাড়ী উপজেলা। এ- উপজেলার ইতিহাস আছে,ঐতিহ্য আছে,আছে নিজস্ব স্বকীয়তা ও বৈশিষ্ট। ধরলা নদী পরিবেষ্ঠিত সীমান্ত উপজেলা ফুলবাড়ী। ফুলবাড়ী উপজেলা এক সময় কোচবিহার মহারাজা শ্রী জগদ্বীপেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদুরের পূর্বভাগ চাকলার অম র্গত ছিল। মহারাজা ১৩২০ বঙ্গাব্দে( ১৯১৩খৃঃ) পূর্বভাগ চাকলা পরিদর্শনে আসার পথে ধরলা নদীর উভয়তীরে কাঁশবন ও কাঁশফুল দেখে মুগ্ধ হয়ে  এর নামকরন করেন ফুলবাড়ী।

 

একটি সূত্র থেকে জানা যায় যে, ধরলা নদীর পূর্বপাড়ে গোটা পূর্বভাগ পরগনা বা চাকলা ছিল ফুলে ফুলে ঘেরা। পথের দু’ধারে জঙ্গলে, ঝোপ ঝাড়ে, বাড়ীর আঙ্গিনায় ছিল অসংখ্য ফুল। অসংখ্য বুনো ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মনপ্রান ভরে যেত। ফুরবাড়ী থানার মধ্য দিয়ে এককালে প্রবাহিত হত নীলকুমার নদী, নদীর দু’কুলেও ছিল অসংখ্য ফুলের সমারহ। ফুলবাড়ী জমিদারের কাছারী বাড়ীর সামনেও ছিল এক বিশাল ফুলের বাগান, সেখানে ছিল বিভিন্ন ফুলের সমাহার। এই ফুলপ্রীতি ও ফুলের সমারোহ থেকে এ থানার নামকরণ হয় ফুলবাড়ী।

ফুলবাড়ী থানা

 

কোচ রাজ্যের অধীন ৬টি পরগনা বা চাকলার অন্যতম ছিল পূর্বভাগ পরগনা। প্রাচীন কালের পূর্বভাগ পরগনা বর্তমানে কুড়িগ্রাম জেলার অন্যতম থানা ফুলবাড়ী। এই পরগনার অবস্থান ধরলা নদীর অপর পাড়ে হওয়ায় মোঘল সেনাপতিরা অনেকবার এই পূর্বভাগ পরগনা দখল করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। অবশেষে ১৭১১ সালে পূর্বভাগ মোঘলদের দ্বারা বিজিত হয়। কিন্তু করদানের চুক্তিতে কোচ রাজা পূর্বভাগ পরগনাকে নিজ অধিকারে রাখেন।কার্যত পূর্বভাগ পরগনা থেকে যায় অর্ধস্বাধীন করদ-মিত্র পরগনা রূপে।

পূর্বভাগ পরগনার সর্বশেষ জমিদার কে ছিলেন তা আজ আর সঠিক ভাবে জানা যায় না তবে ফুলবাড়ী কাছারী বাড়ী আজও তাঁর স্মৃতি বহন করছে। তাঁর কাছারী বাড়ীর সামনেও একটি মনোরম ফুলের বাগান ছিল।

 

এই বিলুপ্ত প্রায় বাগানের কিছু ফুলগাছের নমুনা এখনও বিদ্যমান রয়েছে। কামিনি ও গৌরী চাঁপার প্রাচীন গাছ গুলি কালের স্বাক্ষী হিসাবে এখনও বাতাসে গন্ধ ছড়িয়ে জানিয়ে দিচেছ যে আমার নাম ‘‘ফুলবাড়ী’’। পরবর্তীতে বৃটিশ শাসনামলে ০৬ মে ১৯১৪ সালের সরকারী গেজেট নোটিফিকেশনে ফুলবাড়ী থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখনও ফুলবাড়ী ডাকঘরটি পূর্বভাগ নামেই পরিচিত।

ফুলবাড়ী উপজেলা শহর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার পড়ে রয়েছে ভারত। প্রায় ৩৬ কিলোমিটার ফুলবাড়ী সঙ্গে রয়েছে ভারতের সংযোগ, বর্তমান ফুলবাড়ী উপজেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান ফুল সাগর, প্রেম সাগর লেক, শেখ হাসিনার ধরলা সেতু, ধরলানদী, নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ি ও বিলুপ্ত সিটমহল দাসিয়ারছড়া।

 

আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ফুলবাড়ী উপজেলার সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭ অনুযায়ী শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৮.১১%; পুরুষ ৪৫.৪৪%, মহিলা ৩০.৭৪%। জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৪.২৮%, অকৃষি শ্রমিক ৫.১৮%, শিল্প ০.২৫%, ব্যবসা ৯.৩১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৭০%, চাকরি ৩.৮১%, নির্মাণ ০.৬৫%, ধর্মীয় সেবা ০.১৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৭% এবং অন্যান্য ৪.৪৭%। 

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৭.৯৫%, ভূমিহীন ৪২.০৫%, শহরে ৪৯.৫৭% এবং গ্রামে ৫৮.৬৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

 

জনসংখ্যা ১৪০৩৯২; পুরুষ ৭০৬২৭, মহিলা ৬৯৭৬৫, মুসলিম ১২৫০৩৩, হিন্দু ১৫২৪৫ এবং অন্যান্য ১১৪, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৬১, মন্দির ১১। মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকসেনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান (ইপিআর) শহীদ হন।

প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস কার্যক্রমের আওতায় বিদ্যমান পুলিশি থানা ব্যবস্থাকে মান উন্নীত থানা হিসেবে প্রশাসনেরকার্যক্রম শুরু হয় ০৭ নভেম্বর ১৯৮২-তে। ঐদিন ৪৫টি  থানা উন্নীত থানা হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে।

 

Lord Warren Hastings১৭৭৪ এর ০৯ এপ্রিল   থানা নামক যে প্রতিষ্ঠান চালু করেন ২০৮ বছর পর তা নতুন নামে অর্থাৎ উপজেলা নামে যাত্রা শুরু করে। ১০টি পর্যায়ে মান উন্নয়ন সম্পন্ন হয়, ফুলবাড়ী ৫ম পর্যায়ে মান উন্নীত উপজেলা হিসেবে ১৯৮৩ সালে ২রা জুলাই  কার্যক্রম শুরু করে শুরু করে বর্তমানে নাওডাঙ্গা, শিমুলবাড়ী, ফুলবাড়ী সদর ,বড়ভিটা, ভাঙ্গামোড় ও কাশিপুর এই ৬ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ফুলবাড়ী উপজেলা।