পোস্টস

চিন্তা

পদবি পয়-মাল

১৩ জুন ২০২৪

Atique Ullah

নামের শেষে যে অংশ অনেকটা লেজের মতো ঝুলে থাকে তাকে সাধারণত পদবি বলা হয়। অবশ্য মানুষ পদবি ব্যবহার করে লৌকিক প্রয়োজনে। শুধু নাম উচ্চারণ করলে কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। পদবি বসলে তাকে অনেকটা  ভদ্রস্থ লাগে। 
অবশ্য এক সময় এদেশে নামের সাথে পদবি ব্যবহার করার প্রচলন ছিল না। সেন আমলে পেশা ভিত্তিক পদবি প্রচলিত হয়। স্বর্ণকার, মালাকার, সূত্রধর,করাতি, তন্তুবায়, শীল----- আরও নানারকম পদবি ব্যবহৃত হতে থাকে পেশাজীবী সমাজের জন্য। বর্ণপ্রথা বাসা বাঁধে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। অবশ্য এসব কর্মকাণ্ডে তৎকালীন শাসকদের প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিল। শাসনকে একটি নির্দিষ্ট বলয়ের মধ্যে আবদ্ধ করার কৌশল ছিল এইসব পদবি। উচ্চশ্রেণীর মানুষের হাতে অন্ত্যজ শ্রেণীর মানুষ শোষিত,নিষ্পেষিত হতো। এমন ব্যবস্থা চলেছিল বহুদিন। 
মুঘল আমলে মধ্য-এশিয়া,পারস্য থেকে অনেক অভিজাত ব্যক্তি, আমির, সেনাপতি ভারতবর্ষে আসেন। তারা সমাজের উঁচু স্তরে আসন লাভ করেন। তাদের পদবি যেমন সৈয়দ, শেখ,মুঘল, পাঠান প্রভৃতি সমাজে আভিজাত্য ও ক্ষমতার স্মারক হয়ে ওঠে। মুসলিম শাসনের অবসান হলে ইংরেজরা একসময় চলে আসে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে। তাদের হাত ধরে অনেক ইউরোপীয় জনগোষ্ঠী এই উপমহাদেশে আসে। খ্রিস্টান মিশনারি সম্প্রদায় ধর্ম প্রচারে ব্যাপার তৎপরতা শুরু করে। সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ নানা প্রলোভনে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে। উপাধি কিংবা পদবি---- সবকিছুতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়। মাইকেল,ডি-কস্টা,গোমেজ, আরও নতুন নতুন পদবি জন্ম নেয়।আবার দেশীয় অনেক পদবি ইংরেজরা সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারতো না বিধায় সুবিধামতো বদলে নেয়।বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে যায় ব্যানার্জি, চট্টপাধ্যায় চ্যাটার্জি, গঙ্গোপাধ্যায় হয়ে যায় গাঙ্গুলি। মোল্লা পদবিধারী অনেকে লেখাপড়া শিখে হয়ে যায় মুনশি। 

সেই থেকে আজকের দিন পর্যন্ত নামের সাথে অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আছে পদবি। আধুনিক সমাজে অনেকে পৈতৃক পদবি ত্যাগ করেছেন। আবার কেউ কেউ নিজের মতো করে বদলে নিয়েছে। 

পদবি অবশ্য অনেক সময় বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শান্তিনিকেতনে নানা দেশের বহু বর্ণ,ধর্মের মানুষের সম্মিলন ঘটেছিল। এতরকম মানুষ এক জায়গায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামের বটবৃক্ষের ছায়াতলে সমবেত হয়েছিল। সারাবিশ্বের জ্ঞান ও সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম পীঠস্থান হয়ে উঠেছিল শান্তিনিকেতন। একদিন ক্লাস শেষে এক জাপানি ছাত্র মলিন মুখে গেল গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের কাছে।
" কি হয়েছে বাছা! তোমার মুখখানি মলিন কেন?" 

" না গুরুদেব তেমন কিছু না। এখানে কেউ আমায় ভালোবাসে না"। 

" এ আবার কেমন অনুযোগ? " 

"না গুরুদেব। ক্লাসে সবাই নির্মলকে  নির্মল দা, পরেশকে পরেশ দা, অমলকে অমল দা বলে ডাকে। কই আমায় কেউ তো অমন করে ডাকে না!" 

" আহা! মন খারাপ করো না। তা বাছা তোমার নাম কি?" 

" আজ্ঞে গুরুদেব আমার নাম বোকাচু ! " 

উত্তর শুনে গুরুদেব মুচকি হেসে নীরব হলেন।