অর্থবছরের হিসাব-নিকাশ
........লবেরু
প্রতিটি বছরই ফাল্গুনী বার্তাসহ আসে, নব রঙে সাজে,
তাইতো, ধ্বনির সম্মোহিত ঢঙে পাশও হয়।
আবার পৌষের হিমেল হাওয়ার মতো চলেও যায়
মুদ্রিত হয় কাগজে, শোনায় গল্প-উপন্যাসের কাল্পনিক বচন,
টিভির নিউজস্ক্রলে আপ-ডাউন করে,
পেপারের ভাঁজেভাঁজে ডিজিটের গল্প ভাসে,
চারপাশে নর-নারীর টুরিভুরিতে কাটে রেশ,
কেউ বলে গরীবের, কেউ বলে ধনীর,
কিন্তু কেউ বলে না মধ্যবিত্তের। এভাবেই মধ্যবিত্ত ঠেলে
চলে ধনী-গরীবের রেষারেষি।
দিনান্তিতে আয়-ব্যয়ের হিসেব কষা হয় পাক্কা,
শালা-সমন্ধীকের মনে লাগতে থাকে বড় ঝটকা।
কই মাছের মতো ছটফট করে দিন-মাস-বছর কেটে যায়।
অনেক কিছু বদলে গিয়ে তিনে তিনে হয় ছয়,
কেউ কেউ ধরে নেয় এটা হবে নয়। চারপাশে চলে নয়-ছয়।
২!
এ তো গেল বাজেটের গল্প। আমারটা?
বদলে না শুধু আমার জীবন?
না, না, না। আমার জীবনও বদলে যায়।
আমি পুরনো থেকে হই অধিকতর পুরনো,
বর্ণীলবস্ত্র থেকে বিবর্ণবস্ত্র,
বয়সের ভারে কুঁজো, সাদা থেকে পাকা বালে,
অক্ষিগোলকে ঝাপসা আলোর সঙ্গম,
চশমার ফ্রেমে বসে কয়েক ফোঁটা সুপার গ্লু'র আস্তর,
স্মৃতির বিস্মৃতি খেলে হাইড-এন্ড-সীক,
তার উপর গিগন্নির চোখ ধাঁধানিও একটু বেশি বাড়ে।
৩!
আমি বছর গুণি জুলাই মাস থেকে-
এটাকে পারিবারিক অর্থবছর বলে আখ্যায়িত করি
তবে জুন মাসটা আসলেই
বুকের ভিতরটায় একটু আলাদা যত্ন নেই,
চিকন চুম্বনে ভাল-মন্দের লোভ দেখাই।
চাপটা ধরে নেই নিয়তির খেলা, তাই
প্রকৃতিকে টেনে নিয়ে আসি আরো খুব কাছাকাছি।
যদি মায়াপুরী ছেড়ে চলেও যাই তাহলে যেন
ওখানে একটু আদর বেশি পাই।
৪!
চেকটা ভাঙ্গাতে দুপুরবেলায় ব্যাংকে গিয়েছিলাম।
হঠাৎ ক্যাশ ম্যানেজারের নজরে আসতেই ভালমন্দ
জিগিয়ে বলে, ' মিনু দা একটা সেভিংস একাউন্ট খুলুন না?'
আমি চিৎকার বলি, 'এ বছর আর হবে না গো,
আসছে বছর দেখা যাবে।'
মনে মনে এইটুকু চিন্তা করি যে
দাম যেটুকু বাড়বে সেভিংস টুকুও খরচ হয়ে যাবে,
তাছাড়া এবার আমার পুতুলটিও একটু বড় হবে।
খরচ কমাতে পারব না। খরচের অংক সহজ।
বিনয়ের সাথে মিলে যায়।
জুনের মাঝামাঝি খবর পেলাম ইক্রিমেন্টের পেপার হাতে পাব।
বেসিকের একটা নির্দিষ্ট পারসেন্টেজ। কত?
থাক বলার দরকার নেই। হিসেব করলে মন খারাপ হবে।
৫!
বাজারের মুদি দোকানী শংকু তার সঙ্গী-কে বলছে,
'কাল বাজেট পাশ হবে সিগারেটের দাম বাড়বে।
লুকিয়ে রাখ।'
একটু পরেই চিৎকার করে বলে, 'আর কী কী বাড়তে পারে?'
আমাকে দেখেই বললো, 'এই! উনাকে আগে বিদেয় কর।'
আমি সাবান, লঙ্কা.... চেয়ে বললাম, 'চিন্তার কিছু নেই।
তোমার সিন্ডিকেট তোমাদের লস দেখবে।'
মাছমহালে শিবু আমাকে দেখেই স্যার, স্যার বলতে লাগলো
এবং যা ভাবলাম তাই হলো।
বাসায় এসেই শুনি গিন্নি বললো, 'পুতুলের একটা নাচের টিচার লাগবে।'
বাড়ির দারোয়ান এসে বললো, 'আগামী মাস থেকে ময়লা বিল পঞ্চাশ টাকা বেশি দিতে হবে।'
মুখটা ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, 'এবারও কি বাসাভাড়া বাড়বে?'
উত্তর না দিয়ে চলে গেল বরিশালের লোকটি।
৬!
আমি মনে মনে ভাবছি ইনক্রিমেন্ট নিয়ে। এই হতচারা শব্দটা যেদিন কানে আসতো সেদিন হিসেবে প্যাঁচ লাগতোই।
এদিকে রান্নার রুম থেকে গিন্নির চিৎকার,
'বাজার টাজারে একটু মন দেও! এলাচ, ধনিয়া.... আননি!'
আমি চিমিয়ে চিমিয়ে বললাম বাজেট হয়েছে।
মনটা বাজেটের দিকে পড়ে আছে।
'বাজেট, না ছাই।' বলে চিৎকার করে গিন্নি গেল নিজ ঘরে।
আমার মাথায় বাজেটের গল্পটাই ঘুরছে।
বাজেট, না ছাই। ছাই নয়, বাজেট। আমার বাজেট।
মধ্যবিত্তের বাজেট, ঘাটতি বাজে।
মাথা ভনভন করছে। ওয়াশরুম থেকে মাথা ধুয়ে বের হয়ে
টেবিলে উপর দেখি ডিশ বিলের মেমো।
বাড়তি পঞ্চাশ টাকা বিল।
চশমাটা চোখে গুজে কাগুজে তাজমহলটির দিকে
এক নজর তাকিয়ে মনে মনে বলি এবারও দেখা হবে না,
মিনু, এবারও তুমি যেতে পারবে না।
১২ জুন, ২০২০