পোস্টস

ভ্রমণ

ময়মনসিংহে একদিন – সবুজে সবুজে ভরা ট্যুর!

১৩ জুন ২০২৪

Afnan Sarker

‘চোখের জন্য শান্তিদায়ক’ বলে একটা কথা আছে। ইংরেজীতে যাকে বলা হয় eye soothing. তেমনই চোখের জন্য শান্তিদায়ক একটা ট্যুর ছিল ময়মনসিংহ ট্যুরটা। কৃত্রিম রঙে রঙচঙে ঢাকা যখন চোখের জন্য একটা শাস্তি হয়ে উঠছিল, ঠিক তখনই সবুজে ঘেরা ময়মনসিংহ ঘুরে আসার সুযোগ হয়েছিল।


শুরুটা হয়ে ছিল চ্যাটবক্সে শাইখ এর একটা নক দিয়ে। “ভাই, আসসালামু আলাইকুম। একটা হেল্প লাগত।” কি হেল্প লাগবে জিজ্ঞাসা করতেই বলল- “ভাই, ১০০০ টাকার মধ্যে একটা ট্যুর সাজেস্ট করেন।” নিউরণে হালকা ঝাঁকি দিতেই আসল পদ্মা রিসোর্ট এর নাম। পরের অপশনটা নুহাশ পল্লী। কিন্তু কেন যেন আমারই মনমত হচ্ছিল না।


হুট করে মাথায় আসল ময়মনসিংহের কথা। পদ্মা রিসোর্ট আর নুহাশপল্লীকে পাশ কাটিয়ে ময়মনসিংহকেই পছন্দ করা হল। স্থির হল পরদিন শনিবার সক্কাল সক্কাল রওনা হব। শুক্রবার সারাদিনের একবস্তা কাজের ফাঁকে ফাঁকে বের করে ফেললাম কোথায় কোথায় ঘুরা যায়, কি কি করা যায়, কতক্ষণ লাগতে পারে এসব তথ্য।


যাত্রা শুরু হোক তবে!


পরিকল্পনামত শনিবার সকালে হাউজ বিল্ডিং এনার কাউন্টার থেকে রওনা হই আমি, শাইখ আর হৃদয়। দিনটা এপ্রিলের মাঝামাঝি কোন একটা দিন। সবুজের শুরুটা ভাওয়াল বন থেকে। কিছুদিন আগে ঝরে যাওয়া পাতার স্থান দখল করা নতুন পাতাগুলো সদ্য যৌবনে পড়েছে, তাই সবুজটা দেখার মতই ছিল। সেই সবুজের মাঝ দিয়ে পিচঢালা মসৃণ পথ ধরে এনা ছুটে চলছিল এনার মতই। দু’পাশের সবুজের মধ্য দিয়ে আগের ট্যুরগুলোর গল্প করতে করতে মাওনা আর ভালুকা পার হয়ে সাড়ে দশটার একটু আগে পৌছে গেলাম ময়মনসিংহ।


মুক্তাগাছা রাজবাড়ি


ময়মনসিংহে নেমেই বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএনজি রিজার্ভ করলাম মুক্তাগাছা রাজবাড়ি যাওয়ার জন্য। ২৫০ টাকায় রিজার্ভ করেছিলাম। আমার কাছে একটু বেশি মনে হয়েছে। কিন্তু তাড়াহুড়ো ছিল তাই বেশি দরাদরি করিনি। সরকারী অফিসারদের বাসভবন, পুলিশ লাইনস, জেলখানা পেরিয়ে সবুজ সিএনজি কিছুক্ষণ পরেই প্রবেশ করলো সবুজের ভেতরে। দুইপাশে ধানক্ষেত, কিছু দূরে দূরে ছোট ছোট বাড়ি, পুকুর, ছোট-বড় গাছপালা, কখনো বা একতলা-দুইতলা পাকা দালান- সবমিলিয়ে তাকিয়ে থাকার মত দৃশ্য দুই পাশেই। হা করে তাকিয়ে থেকে দু’চোখ দিয়ে গিলতে লাগলাম আশেপাশের দৃশ্য। দেখতে দেখতে পৌছে গেলাম মুক্তাগাছা রাজবাড়ি।


আমার জানামতে এটা মূলত জমিদারবাড়ি। এখানের জমিদার প্রথমে রাজা এবং পরে মহারাজা উপাধি পাওয়ায় এরপর থেকে রাজবাড়ি বলা হয়। সিএনজি আমাদের নামিয়ে দিল সরকারি কলেজের গেটের সামনে। ভেতরে পরীক্ষা চলছিল। গেট তালাবন্ধ, ভেতরে সিকিউরিটি গার্ড। ভাবলাম না দেখেই ফেরত যেতে হয় কি না! পরে দেখি পাশে আরেকটা গেট। ওই গেটটাই মূলত রাজবাড়ির গেট। গেটের বাইরেই পাথরের ফলকে লেখা রয়েছে রাজবাড়ির ইতিহাস। ব্যাগ আর ক্যামেরা নিয়ে ঢুকা নিষেধ, তাই ব্যাগ দারোয়ানের কাছে রেখে ভেতরে ঢুকলাম। 

 

খুব সম্ভবত সংস্কারকাজ চলছিল, মিস্ত্রিদের দেখলাম বালু, রড নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে। এর মাঝেই ভেতরটা ঘুরে এলাম। ভাঙাচোরা কিছু দালান, একেকটার একেক রঙ। তবে ভেতরের একটা দালান বেশ ভালোভাবেই টিকে আছে, সেইসাথে টিকে আছে দরজা আর পিলারের সাথে করা অপূর্ব কারুকাজ। দুই-তিনটা দালানের তো বেশিরভাগই নেই হয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল সংস্কারকাজের ফলে স্বকীয়তা হারাবে দালানগুলো। কিন্তু কি আর করার! ধ্বংসস্তূপ দেখার চাইতে কিছুটা স্বকীয়তা হারিয়ে টিকে থাকা দালান দেখাই মনে হয় ভালো। আর এর সাথে বাংলাদেশিদের বিখ্যাত দেয়াললিখন শিল্প তো আছেই। দেয়াল জুড়ে অমুকের সাথে তমুকের মেলবন্ধনের কিচ্ছা লেখা।


ভেতরে একটু ঘুরাঘুরি করে বেরিয়ে এলাম। এবার উদ্দেশ্য দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী গোপাল পালের দোকানের মন্ডা চেখে দেখা। মুক্তাগাছার এই মন্ডা তুমুল জনপ্রিয়। তার আগেই হাতের ডানে চোখে পড়ল উঁচু পুরাতন স্থাপনা। একজনকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম ওটা মন্দির। পুরাতন স্থাপনার দিকে বরাবরই আমার আগ্রহ বেশি। তাই ঢু মেরে এলাম ওদিকটা থেকেও। পাশাপাশি দুটো গোলাকার মন্দির আর সামনে একটা বড় পুকুর। এরকম মন্দির আশেপাশে আরও চোখে পড়ল।


এরপর মন্ডা খেতে ঢুকলাম গোপাল পালের মন্ডার দোকানে। বসতেই তিনজনের জন্য তিনগ্লাস পানি চলে এল। তারপর অর্ডার নিয়ে একটা বাটিতে একটা করে মন্ডা সামনে দিয়ে গেল। এইটুকু একটা মিষ্টি। এর দাম নাকি ২৫ টাকা!


চামচ দিয়ে সামান্য কেটে মুখে দিতেই বোঝা গেল কেন এইটুকুর দাম ২৫ টাকা। মুখে নিয়ে তালু দিয়ে চাপ দিতেই মিহি গুড়ো গুড়ো দানার মত ছড়িয়ে গেল মুখের ভেতরটায়। অনেকটা কাচাগোল্লার মতই কিন্তু আরো বেশি মিহি। আমার খাওয়া সেরা মিষ্টিগুলোর মধ্যে একটা এটা।


শশীলজ


মন্ডায় মন মজিয়ে বের হয়ে এলাম। এবার গন্তব্য শশীলজ। তাই আবার ছুটতে হবে ময়মনসিংহ শহরে। মন্ডার দোকান থেকে বের হয়ে বামদিকে মুক্তাগাছা বাজার। বাজারের মধ্য দিয়ে কিছুটা হেঁটে মেইন রাস্তায় চলে এলাম। সিএনজি ঠিক করে সোজা শশীলজ। শশীলজ বললে নাও চিনতে পারে। মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ বললে চিনতে পারে। অথবা জজকোর্ট বা কাচারী বললে চিনবে। আমরা কাচারী বলে জায়গা চেনাতে পেরেছিলাম। কোর্টের একটু দূরেই শশীলজ অবস্থিত। গুগল ম্যাপ দেখে সিএনজি একদম শশীলজের গেটের সামনে এনে থামালাম।


রাস্তা পার হয়ে ঢুকে গেলাম ভেতরে। সীমানা প্রাচীরের ভেতরে গেটের দুইপাশে দুটো বিশাল প্রাচীন গাছ আছে। গেট দিয়ে ঢুকে সামনে অনেকগুলো গাছ নিয়ে ত্রিভুজাকৃতির বাগান আর বাগানের মধ্যেখানে বেদীর উপর অবস্থিত ভেনাসের মূর্তি। বাগানের পরই বিশাল প্রাচীন দালানটি দাঁড়িয়ে আছে সগৌরবে তার প্রাচীনত্বের সাক্ষী হয়ে। এটি এখন মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।


এখানেও ছবি তোলা, ভিডিও করা নিষেধ। তাই ক্যামেরা ব্যাগে গুঁজে আশপাশটা একটু হেঁটে বেড়ালাম। তারপর সিঁড়িতে বসে একটু জিরিয়েও নিলাম আর দুটো সেলফি তুলে ফেললাম। এরপর আরেকটা চক্কর দিয়ে বের হয়ে গেলাম শশীলজ থেকে।


এইখানে একটা মজার ঘটনা ঘটেছে। আমরা যখন পেছনদিকে যেতে চাইলাম, আমাদের বলা হল পেছনে কিছু নেই। কিন্তু পরে জানতে পারলাম পেছনে একটা বিশাল দিঘী আছে। দিঘীর ঘাটটা বেশ চমৎকার। আর একটা দোতলা স্নানাগারও আছে, যদিও এখন স্নান করার মত অবস্থায় নেই। তাই কেউ যদি বলেও পেছনে কিছু নেই, কানে তুলবেন না ভুলেও। আমরা তুলেছিলাম, পরে পস্তাতে হয়েছে।


ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে


পরিকল্পনায় এরপরই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও সিদ্ধান্ত নিলাম ব্রহ্মপুত্রের পাড় ধরে একটু ঘুরে আসব। সেইজন্য শশীলজ থেকে বের হয়ে ডানদিকে হাঁটা শুরু করলাম। একটু হেঁটেই চোখে পড়ল ময়মনসিংহ জিরো পয়েন্ট। জিরো পরেন্ট থেকে বাম দিকে হাঁটা শুরু করলাম। ডানে ব্রহ্মপুত্র নদ রেখে এগোতে থাকলাম। এভাবে কিছুদূর এগিয়েই পেলাম সার্কিট হাউজ পার্ক। পার্ক বলতে নদীর পাড় ঘেঁষে অনেকদূর পর্যন্ত জায়গা একটু পর পর বেঞ্চ আর বড় বড় গাছে ঢাকা। চাইলেই গাছের ছায়ায় বসে জিরিয়ে নিতে পারেন। এই ভরদুপুরেও দেখলাম প্রায় সব বেঞ্চই কারো না কারো দখলে। কিছুক্ষণ পর একটা খালি বেঞ্চ পেয়ে কিছুক্ষণ বসে জিরিয়ে নিলাম। তারপর আবার কিছুদূর এগিয়ে নদের পাড়ে বসলাম।


আরামদায়ক বাতাস আর নদীর চিরাচরিত বয়ে চলে দেখতে বেশ ভালোই লাগছিল। কিন্তু এরই মাঝে দুপুরের খাবার সময় হয়ে এসেছিল। তাই উঠে আবার সোজা হাঁটা শুরু করলাম। এবার প্রবেশ করলাম জয়নুল আবেদীন পার্কের ভেতরে। এই পার্কের প্রবেশও ফ্রি। তবে এই পার্কের ভেতরে মিনি চিড়িয়াখানা সহ চিত্তবিনোদনের বেশ কিছু ব্যাবস্থা আছে যেগুলোর জন্য আপনাকে টাকা দিতে হবে।  শিশুদের খেলার জন্য আলাদা জায়গাও আছে, এটা একদমই ফ্রি। আমরা কিছুক্ষণ দোলনায় বসে দোল খেয়ে ছোট্টবেলায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পেটে খিদে নিয়ে কি আর অন্য কিছু সম্ভব হয়?


অগত্যা উঠে পড়লাম দোলনা থেকে। সোজা হেঁটে আরেক গেট দিয়ে বের হয়ে আসলাম। এইপাশের গেটের মুখোমুখিই জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালা। এখানে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের আঁকা ছবি ও তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রবেশ ফি ২০ টাকা। এসেছি যখন দেখেই যাই- এই ভেবে টিকিট কেটে ব্যাগবোঁচকা জমা রেখে দেখে আসলাম ছবি ও শিল্পাচার্যের ব্যবহৃত জিনিসপত্র। সংগ্রহশালার সামনেও বেশ চমৎকার একটা বাগান আছে। চাইলে পাঁচ-সাত মিনিট সময় কাটিয়ে আসতে পারেন।


বের হয়ে দেখি পার্কের গেটের সামনে থাকা শেষ রিকশাটাও চলে গেল মাত্রই। ওই যে একটা কথা আছে না – অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকায়ে যায়। অগত্যা কি আর করার! আবার হাঁটা ধরলাম মেইন রোডের দিকে। হাঁটতেও খুব একটা খারাপ লাগছিল না। অনেক গাছপালাতে ভরা ছিল চারপাশ। রোদটা একটু কম থাকলেই হত। মেইন রোডে এসে ব্যাটারীচালিত অটো ধরে সোজা রওনা দিলাম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। নামতে হবে জব্বারের মোড়ে। সরাসরি জব্বারের মোড়ের অটো নাও পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ব্রীজ পর্যন্ত এসে ব্রীজ থেকে জব্বারের মোড়ে নামতে পারেন। খরচ হবে ২০ টাকা।


বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়


এসে নামলাম জব্বারের মোড়ে। এখানে কিছু খাবারের দোকান আছে। এর মধ্যে একটায় ঢুকে দুপুরের খাবার সেরে নিলাম। অনেক কম দামে খাবার পাওয়া যায় এখানে। কোয়ালিটির কথা বলতে গেলে বলব আমার অনেক জায়গায় খেয়ে অভ্যাস আছে, তাই হজম করতে সমস্যা হয় নি। খুব একটা খারাপ নাহ। জব্বারের মোড়ের পাশ দিয়েই চলে গেছে রেললাইন। খাওয়াদাওয়া সেরে রেললাইন ধরে একটু হেঁটে প্লাটফর্মের দিকে গিয়ে একটু বসে বিশ্রাম করে নিলাম। এরই মধ্য শাইখের বন্ধু স্মরণ চলে এসেছে। আরো কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে উঠে পড়লাম আবার। এখনো পুরো ক্যাম্পাসটা ঘুরে দেখা বাকি।


প্রথমেই রওনা দিলাম বোটানিক্যাল গার্ডেনের দিকে। ব্রহ্মপুত্র নদের পাশে বেশ অনেকটা জায়গা নিয়ে অবস্থিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বোটানিক্যাল গার্ডেন। জব্বারের মোড় থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেনের দিকে যেতে চোখে পড়ে কৃষি অনুষদ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ, শহীদ মিনার সহ আরো অনেক কিছু। একদম সোজা রাস্তাটা দেখতেও বেশ সুন্দর। আর আশেপাশে যেদিকেই তাকানো যায় সেদিকেই যেন সবুজ দিয়ে মোড়ানো। বোটানিক্যাল গার্ডেনের গেটেই টিকিট কাউন্টার আছে। বহিরাগতদের এখানে টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। ঢুকে ভেতরটা এক চক্কর ঘুরে এলাম। এখানে নানা প্রজাতির অনেক গাছ আছে, যার বেশিরভাগটাই আমি চিনি না। একফালি রাস্তা চলে গেছে এঁকেবেঁকে আর আমাদের নিয়ে যাচ্ছে বোটানিক্যাল গার্ডেনের আনাচেকানাচে। আশেপাশে এতরকম গাছের ভীড়ে হারিয়েই যাব মনে হচ্ছিল। তবে পুরোটা বেশ ভালো করেই উপভোগ করে বেরিয়ে এলাম না হারিয়েই। এইজন্য স্মরণকে একটা বেশ বড়সড় ধন্যবাদ দেয়াই যায়।


এবারে গন্তব্য আমবাগান। বোটানিক্যাল গার্ডেন যেদিকে, আমবাগানটা তার পুরো উলটো দিকে অবস্থিত। বোটানিক্যাল থেকে আমবাগানে যেতে অন্য রাস্তা ধরলাম যেন একই রাস্তায় আবার যেতে না হয়। একে একে চোখে পড়ল বেশ কয়েকটি হল, টিচার্স কোয়ার্টার, বেশ কিছু অনুষদ, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, এগ্রিকালচার মিউজিয়াম (বন্ধ ছিল), কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়াম ইত্যাদি।


দেখতে দেখতে চলে এলাম আমবাগানের রাস্তায়। দু’পাশে সারি সারি আমগাছ নিয়ে একদম সোজা একটা রাস্তা চলে গেছে। আর রাস্তাটার দুইপাশে যতদূর চোখ যায় ততদূর একদম সবুজে মোড়ানো।  চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মত দৃশ্য। বেশিরভাগ গাছেই ঝুলছে লোভনীয় কাঁচা আম যা আরো চোখ জুড়িয়ে দিচ্ছিল। বিকেলের পড়ন্ত আলোয় হাঁটতে একটুও খারাপ লাগছিল না, বরং সারাদিনের ক্লান্তি নেই হয়ে গিয়েছিল। শুধু মনে হচ্ছিল আশেপাশের মানুষগুলো না থাকলে আরও ভালোভাবে উপভোগ করতে পারতাম জায়গাটা। বকবক করতে করতে পার হয়ে এলাম আমবাগান। আমবাগানের রাস্তার মাথায় এসে বামে মোড় নিলেই লিচুবাগান। এখানে রাস্তার একপাশ দিয়ে সারি সারি লিচুগাছ, অন্যপাশে কয়েকটি অনুষদ। প্রতিটি গাছেই সবুজ সবুজ লিচু ঝুলছিল, তখনো খাওয়ার উপযুক্ত হয়নি। তাই তেমন কারো নজর পড়েনি। লিচুবাগান পার হয়ে সামনে এসে একটা খোলা জায়গা দেখে বসলাম আবার কিছুক্ষণের জন্য। সারাআদিন হেঁটে হেঁটে পায়ের অবস্থা একটু খারাপই হয়ে গিয়েছিল, তাই পা দুটোকে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম দিলাম।


সময় প্রায় শেষ হয়ে আসছিল। ঢাকায় ফেরার তাড়া ছিল। কথা ছিল ৭ টার বাস ধরব। আর তাই মিনিট পনের পরে উঠে পড়লাম। এবারে বঙ্গবন্ধু হল, ফজলুল হক হলের পেছন দিয়ে গিয়ে রেললাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম জব্বারের মোড়ে। রেললাইন আমার বরাবরই ভালো লাগে। এই রেললাইনটা আরো বেশি ভালো লাগছিল কারণ যতদূর চোখ যায় একদম সোজা চলে গেছে দুইপাশে নাম জানা আর না জানা অনেকরকম গাছ নিয়ে। মনে হচ্ছিল এরকম রেললাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে বহুদূর চলে যাওয়া যায়। হয়তো শুধু এই রেললাইনের জন্যই আবার আসা যায় এই ক্যাম্পাসে।


জব্বারের মোড়ে যখন ফিরলাম তখন ছয়টা বিশ। এবারে ফেরার পালা। স্মরণের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে একটা স্মরণীয় দিন পেছনে ফেলে এগিয়ে চললাম ব্রীজের দিকে। ব্রীজের যেখানে অটো নামিয়ে দেবে সেখান থেকে একটু এগিয়ে বামে মোড় নিয়েই আবার অটোতে চড়া আসলাম মাসকান্দা। ব্রীজ থেকেও ঢাকার বাস পাওয়া যায়, তবে সেগুলো লোকাল বাস। মাসকান্দা এসে দেখলাম একটা এনা বাস মাত্রই ছেড়ে যাচ্ছে। উঠে পড়লাম আর বাস অন্ধকারের বুক চিরে ছোটা শুরু করল ঢাকার উদ্দেশ্যে।


সত্যি বলতে এই ট্যুরটা হুট করেই হয়ে গিয়েছিল। ‘সাডেন প্লান অলওয়েজ রকস’ কথাটার সত্যতা আরেকবার প্রমাণ হল। একদিনের মুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আবার ফিরে এলাম ঢাকা শহরে, কিছুটা মন খারাপ আর অনেকগুলো স্মৃতি নিয়ে। আর সাথে একটা ব্লগ লেখার মত যথেষ্ট রসদ তো ছিলই।


বিশেষ দ্রষ্টব্য- ট্যুরটা ছিল ২০১৯ সালের দিকে। সঙ্গত কারণেই জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে এটা আর ১০০০ টাকার ট্যুর নেই। তবে ১৫০০-১৬০০ এর মধ্যে ঘুরে আসতে পারবেন ঢাকা থেকে।

 

কিভাবে যাবেন, কিভাবে প্লান সাজাবেন জানতে দেখতে পারেন আমার এই লেখাটি।