Posts

ফিকশন

মূহুর্তকাল

June 13, 2024

নীলকর সাহেব

নগরীর চকবাজার বেশ পুরনো এলাকা। সেই মোঘল আমলে এর আবাদ হয়েছে। এখন তো আরো জমজমাট। সেদিন অফিস শেষে বিধস্ত হয়ে মেসে ফিরছিলাম। চকবাজারে আসতেই হঠাৎ মুষলধারে বৃষ্টি আরম্ভ হলো। আমি রাস্তার পাশের এক টং দোকানের ছাউনিতে কোনোরকম গা বাঁচিয়ে ঠাঁই নিয়েছি। দেখলাম আশে পাশে পথচারীরা যে যেখানে পেরেছে দোকানের ছাদের নিচে ঢুকে পড়ছে। ক্রমে বৃষ্টির তোড় বাড়তে লাগলো। সেই সাথে ঝড়ো হাওয়া। নীল ত্রিপলের এই ছাউনি যেন সেই ঝড়ো বাতাসে এক্ষুণি উড়াল দিলো বলে। কিন্তু না। তেমন কিছু হলোনা। এই ছাউনি খুব কায়দা করে বানানো। চোখের সামনে উলট পালট হাওয়া বইলেও ছাউনি একটুও নড়ছেনা। যদিও বৃষ্টির ঠান্ডা ছাঁট এসে লাগছে গায়ে। দোকানদার লোকটাকে দেখলাম নির্বিকার। একমনে চায়ের কাপ ধুচ্ছে সে। বললাম, 'মামা একটা কেক দেন আগে। তারপর এককাপ চা বানান।' তাক থেকে একটা বেকারির কেক দিলো লোকটি। কেকের নিচে পাতলা কাগজের আবরণটা ছাড়িয়ে কামড় দিতে বুঝলাম এটা প্রচলিত কোন কেক নয়। বরং এক ভিন্ন স্বাদের অদ্ভুত দর্শন পিঠা। এটা কোন কম্পানির কেক? জানিনা। ক্ষুধার্ত থাকায় তিন কামড়েই কেক সাবাড়। একটু পর কোনোদিকে না তাকিয়ে চায়ের একটা কাপ আমার হাতে ধরিয়ে দিল লোকটি। চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে অবাক হলাম। এত সুন্দর কারুকাজ করা কাপ সেকালের রাজা-বাদশা আর একালের কোনো এন্টিক শপেই কেবল দেখা যাবে। বাইরে বৃষ্টি দেখতে দেখতে চায়ে চুমুক দিচ্ছি। আহ! কি চমৎকার স্বাদের চা বানায় লোকটা। তৃপ্তিতে মন চনমন করে উঠলো। চা শেষ করে কাপটা রেখে দিয়ে মানিব্যাগ বের করতে গেলাম টাকা দেয়ার জন্য। এমন সময় একটা ঘোড়ার গাড়ি দ্রুতগতিতে পাশ দিয়ে ছুটে গেল। আর অমনি রাস্তার নোংরা জল এসে ছিটকে আমাকে হাফ গোসল করিয়ে দিলো। গাড়িটার দিকে তাকিয়ে একটা ভারী রকমের গাল দিতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু মস্তিষ্কের সাজেস্ট করা টপ টেন গালির মধ্য থেকে বহুকষ্টে চেপেচুপে একটাই শব্দ বের হলো মুখ থেকে- 'হালাই কামডা করলো কি! দিনে দুপুরে কি চোখে মানুষ দেখেনা নাকি।' গালিটা জুতসই হয়নি জানি। কিন্তু মনের ঝাল একটু কমলো বলে মনে হলো। বাসায় গিয়ে গোসল তো করতেই হতো। বাড়তি কাজ হিসেবে জামা কাপড়গুলো আবার কাছতে হবে, এর বেশি তো না। যাইহোক, মানিব্যাগ থেকে একশো টাকার একটা নোট বের করে দোকানদারকে দিতেই যাবো- দেখি লোকটা নেই। শুধু লোকটা নয়। এখানে তার দোকানটাই নেই। একটু আগেই যেখানে লোকটা বসে ছিলো সেখানে কয়েকটা খালি ডাস্টবিন পড়ে আছে। চারপাশে তাকালাম। কোথায় বৃষ্টি কোথায় কি। মাথার উপর শতচ্ছিন্ন ছাউনিটা মৃদ্যু বাতাসে উড়ছে। আর সমগ্র ফাটা ফুটো দিয়ে বিকেলের পড়ন্ত রোদ এসে পড়েছে। নিজেকে এমন বোকা আর জীবনে মনে হয়নি। আমি কি এই নোংরা জায়গায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্বপ্ন দেখছিলাম এতক্ষণ? ঝুম বৃষ্টি, ঘোড়ার গাড়ি, নির্বিকার দোকানী... এক মূহুর্তে সব উধাও! আর পিতলের কাপে চা, অদ্ভুত স্বাদের কেক যে খেলাম? সবই কি আমার আকাশ-কুসুম কল্পনা? কেকের কথা ভাবতেই কেকের উপরের সেই আবরণটার মনে পড়লো। একটু আগে এখানেই তো ফেলেছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে নিচে তাকিয়ে খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও গেলাম সেটি। হাতে তুলে নিয়ে তড়িঘড়ি করে উলটে দেখলাম। আরবি অক্ষরে দুটো লাইন লেখা-

 کیک شاهی

 تاریخ انقضا - ۱۲-۰۸-۱۶۵۸ 

যার বাংলা করলে দাঁড়ায়- 

শাহী কেক

মেয়াদ- ১৪/০৮/১৬৫৮!

Comments

    Please login to post comment. Login