দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী জীবনযাপন করেছিলেন ফিলিস্তিনি লেখক ওয়ালিদ দাক্কা। বোন ম্যারো বা অস্থি মজ্জার ক্যান্সারে আক্রান্ত এই লেখক অবশেষে কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেছেন। ফিলিস্তিনি এই উপন্যাসিক এবং অ্যাক্টিভিস্ট বন্দী অবস্থায় ৭ এপ্রিল ইসরায়েলের শামির মেডিকেল সেন্টারে মারা গেছেন। প্যালেস্টিনিয়ান কমিশন অব ডিটেইনিস অ্যান্ড এক্স ডিটেইনিস অ্যাফেয়ার্স তার মৃত্যুর খবর জানিয়েছে।
ওয়ালিদ দাক্কা প্রায় চার দশকের কারাবাসের পর ৬২ বছর বয়সে ক্যান্সারে মারা যান। তিনি ইসরায়েলি কারাগারে দীর্ঘদিন ধরে আটক থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীদের একজন ছিলেন।
গত বছর তার সাজার মেয়াদ শেষ হলেও ইসরায়েলি আদালত তাকে মুক্তি দিতে ইচ্ছুক ছিল না। কারাগারে সেলফোন পাচারে সহায়তা করার জন্য তাকে আরও আড়াই বছরের অতিরিক্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সে সময় ক্যান্সার আক্রান্ত এই লেখকের মুক্তির দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছিল ফিলিস্তিনিরা। ৪ জুন, লেখকের নিজ শহর বাকা আল ঘারবিয়েতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নিয়েছিল।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে দাক্কার একটি বিরল ধরনের অস্থিমজ্জার ক্যান্সার ধরা পড়ে। গুরুতর অসুস্থতার কারণে প্রথমে তাকে ইসরায়েলের একটি সিভিল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছিল। পরে ২০২৩ সালের মে মাসের শুরুতে রামলেহ কারাগারের ক্লিনিকে ফিরিয়ে আনা হয়। সে সময় তার স্ত্রী সানা সালামেহ দ্য নিউ আরবকে বলেছিলেন, ‘আমরা ওয়ালিদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানাচ্ছি, বিশেষ করে যেহেতু ডাক্তারদের রিপোর্ট ইঙ্গিত করে যে তার অবস্থা খুবই সংকটজনক।'
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্যালেস্টিনিয়ান প্রিজনার্স ক্লাব দাক্কার চিকিৎসায় অবহেলার জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেছিল। তকে মুক্তি না দেওয়ার ইসরায়েলি আদালতের সিদ্ধান্তকে তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেছিল।
১৯৮৬ সালে ইসরায়েলি একজন সৈন্যকে হত্যায় জড়িত থাকার অপরাধে ২৫ বছর বয়সী ওয়ালিদ দাক্কাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে তাকে ৩৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তার সাজার মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু তাকে মুক্তি না দিয়ে অন্য একটি মামলায় আরও আড়াই বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল।
১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তি অনুযায়ী যে কয়জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল, ওয়ালিদ দাক্কা তাদের একজন ছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক কারণ দেখিয়ে সে সময় তাকে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
তার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা সত্ত্বেও তিনি কারাগারে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। দাক্কা ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের বর্ণনা দিয়ে উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং কবিতাও প্রকাশ করেছেন, যা সারা বিশ্বে পৌঁছেছে।
তিনি ‘দ্য টেল অব দ্য সিক্রেট অব অয়েল’ নামের উপন্যাসটি ফিলিস্তিনি শিশু-কিশোরদের জন্য লিখেছেন। বইটি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয়। তিনি কারাগারে এই বই লেখেন।
এই উপন্যাসে জুড নামের ১২ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি কিশোরের গল্প বলা হয়েছে। এই কিশোরটির বাবা তার জন্মের আগে থেকেই ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী। তবে কারাগার থেকে পাচার করা তার বাবার শুক্রাণু থেকে জন্ম হয় জুডের। উপন্যাসটিতে ওয়ালিদ দাক্কার জীবনের প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। জুডের মত দাক্কার একমাত্র মেয়ে মিলাদের জন্মও এই ভাবেই হয়েছিল।
উল্লেখ্য, দ্য টেল অব দ্য সিক্রেট অব অয়েল বইটি ২০১৮ সালে ইয়ং অ্যাডাল্ট ক্যাটাগরিতে এতিসালাত অ্যাওয়ার্ড জয় করে।
সূত্র: দ্য নিউ আরব, আল জাজিরা, আল মনিটর, হারেৎজ