Posts

গল্প

সিঙ্গাপুরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা।

June 14, 2024

Tanmi Shaharin

Original Author তানমি শাহারিন

Translated by তানমি শাহারিন

জানো, বাবা?তোমার আম্মা যহন মইরা যায়,তোমার দাদি খুব জোর করসে বিয়া করাইতে।বিয়া করি নাই।তোমার চেহারা ডায় চাইলে, আর মন লয় নাই।ভালোই হইছে আব্বা,তুমি আর আমি এহন হস্পিটালে, মাইয়া মানুষ থাকলে লাভ কী হইতো?পুরুষ ওয়ার্ডে তো মাইয়া ঢুকতে দেয় না।ভালো হইসে না তামিম?

তামিমের এই মুহুর্তে কথা বলার শক্তি নেই,কিন্তু বাবার সামনে তো দুর্বল হলে চলবে না,বাবাকে অভয় দিতে হবে।তামিমের জড়তার হাসিতে অবশ্য মন খারাপের বিষয় স্পষ্ট। সে বাবাকে বলছে ভালো করসো, আব্বা।বিয়া করলে কি আমগোর বাপ-পুতের সংসার হইতো?ভালো করসো,এখন আমার চাকরিডা হইলেই আরাম কর‍তে পারবা।আর কাজ করে লাগবো না।চিন্তা কইরো না আব্বা।

তামিম জানে,তার বাবার বুঁকের তিনটা পাজর এই ভেঙে গিয়েছে,মাথায় ও আঘাত পেয়েছে, দ্রুত অপারেশন না হলে মৃত্যু অবধারিত। ।সরকারি হস্পিটালে এই রোগের অপারেশন নাই।তারা ঢাকা যেতে বলেছে।কিন্তু হাঁস আর ছাগল বিক্রির টাকার সংসারে ঢাকা যাওয়ার সামর্থ্য তামিমের নাই।হাঁস আর ছাগল বেচে বাপ-পুত শুধু ভালো খাবার এই খেতে পারে।কিন্তু  ভাগ্যের নির্মম খেলায়,ছাগল বেঁচতে বাজারে যাওয়ার পথে একটি মারাত্মক সড়ক দূর্ঘটনার মুখোমুখি হয়ে তাদের জীবনের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।এখন দরকার টাকার।টাকাই যে নেই!
বাপের ভিটা টুকুও বেঁচা যাবে না,বেঁচতে গেলে তামিমের দাদার কালের ওয়ারিশ আগে দিতে হবে।
এমন অস্থিরতায় তামিম ফোন টিপছে,আর কিছুই করার নাই।ভাবছে কি করবে?কিভাবে ম্যানেজ হবে টাকা।
ভগ্ন হৃদয়ে ফোনে স্ক্রিনে তাকিয়ে,হুট করে দেখলো একটি সংবাদ " স্বাস্থ্য পরীক্ষায় সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী"।
তারপর তামিমের মন আর খারাপ থাকলো না, বিদ্রোহীও হলো না,শুধু ভাবতে লাগ্লো,তার বাপের মতো কৃষক দের এভাবেই ধুঁকতে ধুঁকতে মরা উচিৎ।তার বাপ কী মন্ত্রী, নাকি এম্পি,নাকি সরকারি আমলা? যে চিকিৎসা করবে।
তার বাপ সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত শ্রেণী,যারা সরকারি হস্পিটালে আসে সরকারি নার্সদের বকা খেতে আর বড় বড় ডক্টরদের চেহারা দেখতে।এটাই তাদের বড় পাওয়া।
এই ভাবতে ভাবতে তামিম ফোন রেখে দিয়ে বাবার হাতে লাগানো স্যালাইনের দিকে তাকিয়ে রইলো।

Comments

    Please login to post comment. Login