পোস্টস

নন ফিকশন

হজ মহাসম্মেলন

১৪ জুন ২০২৪

MUHAMMAD AL-HELAL

sonar bangla logo

রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ১২তম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ॥ ৭ জিলহজ ১৪৪৫ হিজরী ॥ ১৪ জুন ২০২৪


 

হোম >> ঈদুল আজহা >> হজ মহাসম্মেলন

 

হজ মহাসম্মেলন

 

 

॥ মুহাম্মদ আল্-হেলাল ॥
মহান আল্লাহ বিশ্বজগতের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, লালনকর্তা ও পালনকর্তা। তিনি সমুদয় বস্তুর মালিক ও সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। দৃশ্য ও অদৃশ্যজগতের সবকিছুই তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই; তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে জানেন, তিনি পরম দয়ালু, অসীম দাতা। তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, অধিপতি, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মহাশক্তিধর, মহাত্মশীল। তারা যাকে অংশীদার করে, আল্লাহ তায়ালা তা থেকে পবিত্র। তিনিই আল্লাহ, সুজনকর্তা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নামগুলো তারই। নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তার পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা হাশর : ২২-২৪)।
প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে আরো বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ইসলামই হচ্ছে একমাত্র মনোনীত দীন (আনুগত্যের বিধান বা জীবন ব্যবস্থা)।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৯)।
ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো জীবনবিধান আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নই। তাই তিনি বলেন, ‘কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো কবুল করা হবে না।’ (সূরা আলে ইমরান : ৮৫)।
আমাদের সমাজে ইসলামের সুবিধাজনক অংশ অনুসরণ করার প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যায়। যদিও ইসলামের কোনো অংশবিশেষ নয়। পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অনুসারী হতে মহান আল্লাহ তাগিদ দিয়েছেন।
আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না। নিশ্চিতরূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সূরা আল বাকারা : ২০৮)।
আল্লাহ তায়ালা মানব কল্যাণে ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ হিসেবে পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান ‘ইসলাম’কে নির্বাচন করেছেন। ইসলাম সকল প্রকার সমস্যা ও জটিলতামুক্ত এবং সহজতর একটি দীন। মহান আল্লাহ এরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ব্যাপারে সহজতা চান, জটিল বা কঠিনতা চান না।’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)।
আর তিনি দীন ইসলামকে পরিপূর্ণও করেছেন, যার ঘোষণা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে রাসূল (সা.)-এর বিদায় হজের ভাষণে, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নিয়ামত পূর্ণ করলাম; আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দীন হিসেবে নির্বাচন করলাম।’ (সূরা মায়েদা : ৩)।
ইসলামের পরিপূর্ণতার জন্য ৫টি রুকন বা ভিত্তি রয়েছে তার মধ্যে হজ অন্যতম।
হজ আরবি শব্দ। শাব্দিক অর্থ মিলন, সম্মেলন, সাক্ষাৎ ইত্যাদি।
আর পারিভাষিক সংজ্ঞায় মহান আল্লাহ নিজেই বলেন, ‘আর আল্লাহর জন্য মানুষের ওপর পবিত্র ঘরের হজ করা (অবশ্য) কর্তব্য; যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার। আর যে লোক তা অস্বীকার করে (তাহলে সে জেনে রাখুক) আল্লাহ্ সারা বিশ্বের কোনো কিছুরই পরওয়া করেন না’। (সূরা আলে-ইমরান : ৯৭)।
অর্থাৎ যিনি হজের উদ্দেশে রওনা দেওয়া থেকে শুরু করে জিলহজ মাসের ৮-৯ তারিখ পর্যন্ত হজের নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করে নিজ বাড়িতে ফিরে আসা পর্যন্ত হজের যাবতীয় খরচ এবং পরিবারের খরচ বহন করতে সামর্থ্যবান, তার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা হজ ফরজ করেছেন এবং সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ পালন না করলে সতর্কতাও জারি করেছেন।
হজের গুরুত্ব এত যে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা হজের মাহাত্ম্য ঘোষণা করতে বিশ্বনবী এবং রাসূল সা.-কে নির্দেশ দেন।
‘এবং মানুষের মধ্যে হজের জন্য ঘোষণা প্রচার কর। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূরদূরান্ত থেকে।’ (সূরা হজ : ৯৭)।
কোনো ঝগড়া-বিবাদ বা গর্হিত কাজ নয়, বরং হজ একটি মহাসম্মেলনের স্থল।
‘হজে কয়েকটি মাস আছে সুবিদিত। এসব মাসে যে লোক হজের পরিপূর্ণ নিয়ত করবে, তার পক্ষে স্ত্রীর সাথে নিরাভরণ হওয়া জায়েজ নয়। না অশোভন কোনো কাজ করা, না ঝাগড়া-বিবাদ করা হজের সেই সময় জায়েজ নয়। আর তোমরা যা কিছু সৎকাজ কর, আল্লাহ তো জানেন। আর তোমরা পাথেয় সাথে নিয়ে নাও। নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে আল্লাহর ভয়। আর আমাকে ভয় করতে থাক, হে বুদ্ধিমানগণ! তোমাদের ওপর তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করায় কোনো পাপ নেই।’ (সূরা আল বাকারা : ১৯৭-১৯৮)।
হজ বা সম্মেলনের স্থান নির্দিষ্ট করে আল্লাহ বিভিন্ন আয়াত নাজিল করেছেন তার মধ্যে অন্যতম, ‘নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তায়ালার নিদর্শনগুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কাবাঘরে হজ বা ওমরাহ পালন করে, তাদের পক্ষে এ দুটিতে প্রদক্ষিণ করাতে কোনো পাপ নেই। বরং কেউ যদি স্বেচ্ছায় কিছু নেকীর কাজ করে, তবে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তা অবগত হবেন এবং তার সে আমলের সঠিক পুরস্কার দেবেন।’ (সূরা আল বাকারা : ১৫৮)
পৃথিবীতে ২০০ অধিক রাষ্ট্র রয়েছে। সব দেশেই প্রায় মুসলিম রয়েছে এবং সব দেশ থেকেই প্রায় মুসলিমরা হজ পালন করতে পবিত্র মক্কা নগরীতে নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হয়। আরবের বিভিন্ন শহরে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও তাদের বিভিন্ন পণ্য এবং সেবাসমূহ নিয়ে উপস্থিত হয় বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে।
‘তোমাদের ওপর তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ (বাণিজ্য) সন্ধান করায় কোনো পাপ নেই। অতঃপর যখন তওয়াফের জন্য ফিরে আসবে আরাফাত থেকে, তখন মাশআরুল-হারামের নিকটে আল্লাহকে স্মরণ কর। আর তাঁকে স্মরণ কর তেমনি করে, যেমন তোমাদিগকে হিদায়েত করা হয়েছে। আর নিশ্চয়ই ইতোপূর্বে তোমরা ছিলে অজ্ঞ।’ (সূরা আল বাকারা  : ১৯৮)।
মহান আল্লাহ হজকে মহাসম্মেলন এবং নিরাপত্তাস্থল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
‘যখন আমি কাবাগৃহকে মানুষের জন্য সম্মেলনস্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ইব্রাহীমের দাঁড়ানোর জায়গাকে নামাযের জায়গা বানাও এবং আমি ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, অবস্থানকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ।’ (সূরা আল বাকারা : ১২৫)।
ইসলাম উদার ও মানবিকতাসম্পন্ন পূর্ণাঙ্গ দীন। কোনোরূপ সংকীর্ণতা বা বাড়াবাড়ির জায়গা ইসলামে নেই। মানবজাতির বৃহত্তর কল্যাণের নিমিত্তে ইসলামের আগমন। অন্ধকার ও জাহেলিয়াত থেকে মুক্ত করে মানবজাতিকে সত্যের দিশা দিতে মহামহিম আল্লাহ ইসলামকে নির্বাচন করেছেন। আল্লাহ বলেন, তিনি দীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো সংকীর্ণতা বা কঠোরতা চাপিয়ে দেননি।’ (সূরা হজ : ৭৮)।
ইসলাম সংকীর্ণতা নয়, বরং সর্বজনীনতায় বিশ্বাসী। সুতরাং বর্তমান পৃথিবীর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সকল ধরনের হানাহানি সংকট নিরসনে এ হজ তথা বিশ্ব সম্মেলন রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
লেখক : এমফিল গবেষক (এবিডি), আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।