পোস্টস

গল্প

হৃদয়ের সুর

১৪ জুন ২০২৪

শাহ আমান উল্লাহ

হৃদয়ের সুর

একটি ছোট্ট, শান্ত গ্রামে, যেখানে জীবন ধীরগতিতে চলত, সেখানে বাস করত নীল আর সুরাইয়া। নীল ছিল গ্রামের একমাত্র সংগীত শিক্ষক, যার কণ্ঠে ছিল জাদু, আর সুরাইয়া ছিল এক স্নিগ্ধ মেয়ে, যার স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া।

নীল প্রতিদিন গ্রামের ছোট্ট সংগীত স্কুলে বাচ্চাদের গান শেখাত, আর সন্ধ্যায় সে নিজের বাড়ির ছাদে বসে সুরের জগতে ডুবে যেত। তার গান শুনে গ্রামের মানুষ মুগ্ধ হয়ে যেত, আর সুরাইয়া প্রতিদিন তার জানালা দিয়ে নীলের গান শুনত।

একদিন, গ্রামের মেলা বসেছিল। সুরাইয়া তার বান্ধবীদের সাথে মেলায় ঘুরতে গিয়ে নীলের সংগীত স্টল দেখতে পেল। সেখানে নীল তার গিটার বাজিয়ে গান গাইছিল, আর সুরাইয়া মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তার গান শুনছিল।

“তুমি কি এই গানগুলো নিজেই লিখেছ?” সুরাইয়া জিজ্ঞাসা করল, তার চোখে মুগ্ধতার ছাপ।

নীল হাসল, “হ্যাঁ, গানগুলো আমার হৃদয়ের সুর। তুমি যদি চাও, আমি তোমাকে আরো গান শোনাতে পারি।”

সুরাইয়া সেই প্রস্তাবে সাড়া দিল, আর তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। প্রতিদিন তারা মেলার পরে একসাথে সময় কাটাত, নীল গান গাইত আর সুরাইয়া মন দিয়ে শুনত।

কিন্তু জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত যেমন সুখময় হয় না, তেমনি নীলের জীবনে একদিন বিপর্যয় এলো। তার মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন, আর তার চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে নীলকে শহরে কাজ খুঁজতে যেতে হলো।

সুরাইয়া এই খবরে ভেঙে পড়ল, কিন্তু সে জানত, নীলের জন্য এটা অত্যন্ত জরুরি। নীল চলে যাওয়ার দিন, সুরাইয়া তার হাত ধরে বলল, “নীল, তুমি ফিরে আসবে তো?”

নীল তার চোখে তাকিয়ে বলল, “সুরাইয়া, আমি প্রতিজ্ঞা করছি, যত তাড়াতাড়ি পারি আমি ফিরে আসব। আর তখন আমরা একসাথে থাকব, সবসময়।”

দিন, মাস, বছর কেটে গেল, কিন্তু নীল আর ফিরে এল না। সুরাইয়া প্রতিদিন তার জন্য অপেক্ষা করত, কিন্তু নীলের কোন খবর আসত না।

একদিন, যখন সুরাইয়া নদীর তীরে বসে ছিল, সে দূর থেকে এক পরিচিত সুর শুনতে পেল। সে ছুটে গেল এবং দেখতে পেল, নীল তার গিটার বাজিয়ে গান গাইছে। সুরাইয়া অশ্রুসজল চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইল।

“নীল, এতদিন তুমি কোথায় ছিলে?” সুরাইয়া জিজ্ঞাসা করল, তার কণ্ঠস্বর কাঁপছে।

নীল মৃদু হাসল, “সুরাইয়া, আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমি ফিরে আসব, আর আজ আমি এখানে। শহরে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে, কিন্তু তোমার স্মৃতি আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল।”

সুরাইয়া নীলকে জড়িয়ে ধরে বলল, “তুমি ফিরে এসেছ, এটাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় উপহার।”

নীল এবং সুরাইয়া আবার একসাথে হতে পেরে তাদের জীবনকে নতুন করে সাজাতে লাগল। তারা গ্রামের মানুষদের জন্য নতুন গান সৃষ্টি করত, এবং তাদের ভালোবাসার গল্প সবার হৃদয়ে সুর হয়ে বাজত।

এই প্রেমের গল্পটি যেন প্রমাণ করে, সত্যিকারের ভালোবাসা কোনো বাধা মানে না। নীল এবং সুরাইয়ার হৃদয়ের সুর তাদের জীবনে এনে দিয়েছিল এক নতুন আলোর ঝলক, যা সবার হৃদয়ে চিরকাল বাজবে।