Posts

সত্তাশ্রয়ী

একটি ধীর সন্ধ্যা

June 14, 2024

জেরিন সুলতানা

81
View

ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসেছি আজ প্রায় পাঁচ দিন হলো। এই পাঁচ দিনে রাত দিন একাকার করে ঘুমানো ছাড়া আর তেমন কোনো মহৎ কাজ সম্পাদন করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। 
বাড়ি আসলে আমার সময় কাটানোর অন্যতম একটা সেরা জায়গা আমার নানী বাড়ির বারান্দা। জায়গাটার ছোট করে একটু বিবরণ দিচ্ছি। টানা বারান্দাওয়ালা উঁচু শানের টিনের চৌচালা ঘরের সামনেই মাঝারি সাইজের আড়াআড়ি একটা উঠোন, উঠোনে লিচু, আম, পেয়ারা গাছ। বারান্দার সামনে একটা গোলাপের চারাও আছে। পাশে ছোটমতো আরেকটা ঘর,,ঘর দুটো আলাদা হলেও পাশাপাশি হওয়ায়  দেখতে অনেকটা  L এর মতো লাগে। বাড়ির পেছনের পরিত্যক্ত জায়গায় ঘন ঝোপঝাড়ের মতো হয়ে আছে। বাড়ির সামনে ফসলের মাঠ। মাঠের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মেঘনা নদী।  বাড়ির দক্ষিণ দিকে কয়েকটা কাঠাল গাছ পেরুলেই গ্রামের ভেতরের সরু পাকা সড়ক চোখে পড়ে।  সামনে আর কোনো বাড়ি না থাকায় সরাসরি নদী দেখা যায় বারান্দায় বসলেই।।
আজও আমার একটা অলস রাত। নানীদের কেউ বাসায় নেই।  ছোটঘরে শুধু খিল এটে নানা বসে আছে। আর আমি অন্ধকার এই বারান্দার এক কোণে রাখা চেয়ারে বসে আমার চিরচেনা ক্লান্তি আর একঘেয়ে সময়কে যাপন করার খানিক প্রয়াস চালাচ্ছি।  উঠোনে ঢিমেতালে জ্বলছে ফ্লোরসেন্ট লাইট বাল্ব। আর মাঠ পেরিয়ে অদূরের নদী থেকে বয়ে আসছে ধীর,শীতল দখিনা বাতাস। আকাশের পশ্চিম কোণে ভেসে আছে একফালি চাঁদ, বিকেলের দিকে চাঁদের পাশে গোলাপি আভা ছিল, সন্ধ্যা মিলাবার সাথে সাথে সে আভাও কালো বর্ণে মিলিয়ে গিয়েছে। 
এই আবছা আলো আর অন্ধকারের মাঝে, বেশ ছিমছাম হয়ে আমি বসে আছি বারান্দার এককোণে রাখা পুরোনো সেই কাঠের চেয়ারে।  এখানে নগরের সব কোলাহল তাদের অস্তিত্ব হারায়, এই উঠোনে খেলা করে আদিম জ্যোৎস্না, মায়াপুরী থেকে বয়ে আসে বাতাস। শোনা যায় সেই কবে থেকে ডেকে চলা ঝিঁঝিদের গান। চোখে পড়ে দূরের বাড়িগুলোর আধখোলা দরজা ঠেলে বেরিয়ে পড়া ফ্লোরোসেন্টের নিস্তেজ আলো। ইশারের আজান হলো কিছুক্ষণ আগে। এখনো বাতাস একই ধীরতা নিয়ে বয়েই চলেছে.........
 

Comments

    Please login to post comment. Login