বখতিয়ার আলী মুহাম্মদ একজন কুর্দি উপন্যাসিক, বুদ্ধিজীবী, সাহিত্য সমালোচক, প্রাবন্ধিক এবং কবি। তিনি একজন কবি এবং প্রাবন্ধিক হিসাবে লেখালেখি শুরু করেছিলেন। এরপর ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে নিজেকে একজন প্রভাবশালী উপন্যাসিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনিই প্রথম কুর্দি লেখক যার উপন্যাস ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে। কুর্দি এই লেখক কুর্দি সাহিত্যকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
ইরাকি কুর্দিস্তানের অন্যতম বিখ্যাত এবং সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত একজন লেখক বখতিয়ার আলী। তিনি উত্তর ইরাকের সুলায়মানিয়াতে বড় হয়েছিলেন। এটি এমন একটি স্থান ছিল যেখানে তিনি কুর্দিদের জন্য একটি সাহিত্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক কেন্দ্র হিসাবে উদ্দীপনা খুঁজে পেয়েছিলেন। তবে এর এক মাত্রিকতা এবং অন্যান্য সংস্কৃতির সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া না থাকার কারণে এটি তার কাছে শ্বাসরুদ্ধকরও ছিল।
সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে ছাত্র বিক্ষোভে আহত হওয়ার পর আলী ভূতত্ত্ব নিয়ে পড়ালেখা ছেড়ে দেন। এর পরিবর্তে তিনি সাহিত্যে জীবন উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নেন।
বখতিয়ার আলী ইরান-ইরাক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে চাননি, ফলে তিনি বেশ কয়েক বছর আত্মগোপনে চলে যান। সে সময় তিনি নিয়মিত পড়তেন এবং লিখতেন। ১৯৯১ সালে সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে ইরাকি শিয়া ও কুর্দিদের নেতৃত্বে বিদ্রোহ শুরু হয়। এ সময় তিনি কবিতার সংকলন এবং দার্শনিক ম্যাগাজিন আজাদী প্রকাশ করেন।
তিনি জানিয়েছেন, ১৯৯১ সালের আগে ভাল কুর্দি বইয়ের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। তবে এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। এখন কুর্দি সাহিত্য মোটামুটি বড় আকার ধারণ করেছে।
একটা সময় আলী কর্তৃপক্ষের রোষানলের শিকার হন এবং প্রাণনাশের হুমকি পেতে শুরু করেন। তখন তিনি বুঝতে পারেন তাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। এরপর নিজের জন্মভূমির মায়া ত্যাগ করে জার্মানিতে চলে যান। ২৫ বছর ধরে জার্মানিতে থাকলেও তিনি নিজের ছেড়ে যাওয়া জন্মভূমিকে কেন্দ্র করেই লেখালেখি করে গেছেন।
বছরের পর বছর ধরে দমন-পীড়নের পরেও কুর্দি লেখকদের কণ্ঠস্বর বন্ধ হয়ে যায়নি। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তারা লেখালেখি করে গেছেন। এটি বখতিয়ার আলীকে আনন্দ দেয়। তবে কেবলমাত্র দক্ষ কুর্দি অনুবাদকের অভাবেই বিশ্ব সাহিত্যে স্থান করে নিতে পারছেন না কুর্দি লেখকরা। বিষয়টি তাকে বিষাদে আক্রান্ত করে।
তিনি বলেন, ‘পশ্চিমে একটি সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে যে মধ্যপ্রাচ্য মহান শিল্প ও সাহিত্য তৈরি করে না। অল্প কিছু প্রকাশকই মধ্যপ্রাচ্য থেকে কোনো সাহিত্যকর্ম প্রকাশের ঝুঁকি নেন। এক্ষত্রে কুর্দি সাহিত্য আরও দূরের বিষয়। কারণ বিশ্ববাসীর কাছে এটি অজানা একটি বিষয়।‘
তবুও কুর্দি এই লেখক বিশ্বাস করেন, কুর্দি সাহিত্য গত ৩০ বছরে অনেক দূর এগিয়েছে। কারণ এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ কুর্দি ভাষায় লেখা বা অনুবাদ করা হয়েছে।
বখতিয়ার আলী উল্লেখ করেন, আগে কুর্দি সাহিত্যে কবিতার প্রভাব বেশি ছিল। এখন ধীরে ধীরে সেখানে উপন্যাস নিজের জন্য একটি স্থান তৈরি করে নিচ্ছে। কুর্দি আখ্যান সাহিত্য নতুন। তবে তিনি নিজেও এখন পর্যন্ত সমস্ত কুর্দি লেখককে ভালভাবে জানতে পারেননি।
বখতিয়ার আলীর সর্বশেষ বই ‘দ্য লাস্ট পোমগ্রেনেট ট্রি’। ২০১৯ সালে কুর্দি ভাষায় প্রকাশিত বইটি চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইংরেজি অনুবাদে প্রকাশিত হয়েছে। বইটি অনুবাদ করেছেন করিম আব্দুলরহমান। সাদ্দাম হোসেনের শাসন এবং ইরাকের কুর্দি সংঘাতের পরের ঘটনাবলী এই বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বখতিয়ার আলী ইরাকি কুর্দিস্তানের সমসাময়িক লেখক ও কবিদের একজন। ৪ দশক ধরে লেখালেখির ক্যারিয়ারে তিনি ১২টি উপন্যাস এবং কবিতা ও প্রবন্ধের বেশ কয়েকটি সংকলন প্রকাশ করেছেন। ‘আই স্টারেড এট দ্য নাইট অব দ্য সিটি’ তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। ২০১৭ সালে তিনি নেলি শ্যাকস পুরস্কারে ভূষিত হন। মিলান কুন্ডেরা, মার্গারেট অ্যাটউড এবং জাভিয়ের মারিয়াসের মতো বিখ্যাত লেখকরা এই পুরস্কার পেয়েছিলেন।
সূত্র: দ্য ন্যাশনাল