পোস্টস

প্রবন্ধ

ফটোগ্রাফি ইনসাইটঃ শব্দ, বাক্য ও ভাষা।

১৫ জুন ২০২৪

সাইদ সুমন

(চোখ দেখে আর রেকর্ড করে, যেটা মানুষ মনে করে সে মনে রাখে নাই, তা মনে থাকে মানুষের, সে না জানলেও সব দেখা ইনফরমেশন থাকে অচেতন পর্যায়ে, আমরা সচেতন ভাবে মনে রাখি যা আমরা মনে রাখতে চাই। ক্যামেরা তাই দেখে যা ফটোগ্রাফার দর্শককে দেখাতে চায়, আর্টিফিশিয়াল ফিজিক্যাল চোখ যে প্রিন্ট ও ডিসপ্লে সমর্থ। তারে বানানো হইছে আমাদের চোখের আদলে। আমাদের চোখ যখন দুরের কিছু দেখতে চায় তখন সে তার ফোকাস আরও বাড়ায়ে দেয়, আর ক্যামেরা জুম লেন্স দিয়ে মেগ্নিফাই করে দুরের বস্তু দেখেই ফেলে, যা চোখের দ্বারা সম্ভব নয়, আবার চোখ যেভাবে কালার টোন দেখে, ক্যামেরা তা দেখতে গিয়ে হিমসিম খায়। তখন যত গুড় তত মিঠা এই প্রবাদে চলে যায়, ডিভাইস যত শক্তিশালী তত পারফেক্ট চোখের মত দেখতে পারে ক্যামেরা, এবং ডিভাইস যত দুর্বল সেও তত দুর্বল মানুষের চোখের কাছে। ) 

 

সম্পূর্ণ পৃথিবী পাঠ করা হয় সিম্বল আকারে, বা শব্দ আকারে, সবই শব্দ বা এক একটা নাম, পৃথিবী নামবাচক। যখন বলা হয় ‘গাছ’ তখন আমরা একটা গাছের কল্পনা করি, তখন আমরা ডিফাইন করে দেই নির্দিষ্ট গাছের নাম, তখন আম’রা কল্পনায় সেই গাছ কে দেখি, হিউম্যান বিং চলে মেমোরি দিয়ে, মেমোরিতে আছে সব শব্দের অর্থ, প্রাণের এই ব্যাক্তিগত স্মৃতি ও ইউনিভার্সের গ্র্যান্ড স্মৃতি দুই আদতে এক। একটা ক্ষুদ্র আর একটা বৃহৎ। মানুষের দেহ আর বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বড় ডিকশনারি আর পকেট ডিকশনারির মতো, সবই এক শুধু সাইজ আলাদা।

 

 একটি ইমেজ বিচিত্র তথ্যের সমষ্টি, এসব তথ্যকে আমরা শব্দ বলতে পারি। একটা ছবির মধ্যে যে কয়টা শব্দ বা নাম আছে তাকে হেরফের করে ছন্দ দেওয়ার চেষ্টা করা হয় ফটোগ্রাফিতে, এবং একটা ভালো ইমেজ দাড়ায় যখন ইমেজের মধ্যে সমস্ত শব্দ গুলোকে একটা ছন্দে আনা হয়, সেখানে প্রশ্ন আসে শব্দ ছন্দে আনতে আমরা কোন পদ্ধতি ব্যবহার করলে বা একটা ছবি কে কিভাবে কম্পোজ করলে তাকে ভালো ছবি বলে এই জ্ঞান আমরা কোথায় পাই ? এর উত্তর আমরা আমাদের জ্ঞানকাণ্ড থেকে পাই, যেখানে ভালো ছবি আর দুর্বল ছবির একটা সাজেশন আমাদের আছে, তাই যদি হয় তাহলে এই Ego constructed জ্ঞান এর সাজেশন ছাড়া আমরা কি একটা ইমেজ কম্পোজ করতে পারি কিনা ?

 

 একটি ইমেজে যখন দেখা যায় ধুধু খোলা মাঠে শুধু একটি গরু অনেক দূর থেকে হেটে যাচ্ছে তখন খোলা মাঠ ও গরু এই দুইটি ভিজ্যুয়াল তথ্যকে প্রকাশ করে ফটোগ্রাফি, তার সাথে আরও তথ্য থাকে যেমন কোন সময়ের ইমেজটি, লাইট কেমন ? আকাশ কেমন ? এই সকল বিষয়কে ক্যামেরা দিয়ে একটা ছন্দে আনা, যাকে বলা হচ্ছে শব্দ বা নাম দিয়ে একটি বাক্য লেখা ভিজ্যুয়াল দিয়ে, বাক্যটা হয়ত এমন যে, ধুধু খোলা মাঠে বিকেলে একটা সাদা গরু হেটে যাচ্ছে, আরও অনেক কিছু যোগ হতে পারে। আবার যদি বলি ব্যস্ততম শহুরে রাস্তায় গাড়ির সারি, সেই গাড়ির ছাদে একটা মানুষ বসে আছে, এই ইমেজে অনেক তথ্য , রাস্তার সাইজ, রাস্তার আশে পাশে ভবন, গাছপালা যদি থাকে, রাস্তার রঙ্গ, ভবন গুলোর রঙ্গ, গাড়ির রঙ্গ, কত মানুষ কোথায় আছে রাস্তায় কর্মরত, যে ছাদে বসে আছে তার সাইজ, তার কালার , পজিশন এঙ্গেল, ইত্যাদি, ইত্যাদি। এখানে যত তথ্য আছে তাদের সবাইকে শব্দ জ্ঞান করে তাকে দিয়ে বাক্য গঠন করা বা একটা ভিজ্যুয়াল স্টেটমেন্ট তৈরি করে ফটোগ্রাফার, এবং শেষ পর্যন্ত হয়তো বাক্য এমন হলো সকাল বেলা রাস্তায় গাড়ির সারির মধ্যে ছাদে একটা মানুষ কে বসে ট্রাভেল করতে দেখা যাচ্ছে। এটা ফটোগ্রাফিক ভাষা, একজন ফটোগ্রাফার ক্যামেরা দিয়ে দর্শকের সাথে তার ভিজ্যুয়াল দিয়ে এভাবে কথা বলেন।

 

 ফটোগ্রাফির ভাষার আলোচনা করতে গিয়ে আমরা শব্দ নিয়ে এখানে আলাপ করছি, যেখানে বলা হচ্ছে একটা ইমেজে অনেক গুলো শব্দ থাকে, যে শব্দগুলোর মানে আমরা জানি, এবং অনেক গুলো বা কম শব্দ এই দুই ভাবেই একটা বাক্য গঠন হয়, যাকে আমরা ইমেজ বলি, এই আলাপ ফটোগ্রাফারের জানা জরুরী, ইমেজের আভ্যন্তরীণ ক্রিয়া এবং তার কাঠামো চেনার জন্য, এরপরে সে তার ইমেজ কিভাবে বাক্য গঠন করবে সেটা নির্ভর করবে তার জ্ঞানের গভীরতা ও মাত্রায়।

 

 তার মানে এই নয় ফটোগ্রাফার সব সময় সচেতন ভাবেই তার ইমেজের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। ফটোগ্রাফিতে লাক বাই চান্স আছেই, ছিলও, এবং থাকবে সারাজীবন।

 

 ফটোগ্রাফারের ভিজ্যুয়াল রেফারেন্স, যাকে আমরা স্মৃতি বলতে পারি যেখান থেকে যে কোন ভিজ্যুয়াল উপাদানের তথ্য আসে, মানুষ পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ করে বা তার স্পেসকে বুঝতে পারঙ্গম হয় যেহেতু সে তার স্পেসের প্রতিটি বিষয়কে সে চিনতে পারে, সে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মুহূর্তকে বাক্য আকারে পাঠ করতে থাকে, ফটোগ্রাফার একটা মুহূর্তকে স্থির করে দিয়ে শব্দকে বাক্যে রুপ দিয়ে গল্প বলে।ফটোগ্রাফারের ভিজ্যুয়াল রেফারেন্স, যাকে আমরা স্মৃতি বলতে পারি যেখান থেকে যে কোন ভিজ্যুয়াল উপাদানের তথ্য আসে, মানুষ পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ করে বা তার স্পেসকে বুঝতে পারঙ্গম হয় যেহেতু সে তার স্পেসের প্রতিটি বিষয়কে সে চিনতে পারে, সে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মুহূর্তকে বাক্য আকারে পাঠ করতে থাকে, ফটোগ্রাফার একটা মুহূর্তকে স্থির করে দিয়ে শব্দকে বাক্যে রুপ দিয়ে গল্প বলে।

 

 ফটোগ্রাফি একটা ইমেজের মধ্যে দিয়ে স্টেটমেন্টের মাধ্যমে বাক্য বলে, যা অর্থবোধক। এই বাক্য অনেক গুলো খণ্ড ভিজ্যুয়ালের সমষ্টি, যেখানে বলা যায় একটা সেন্টার অফ ইন্টারেস্ট কেন্দ্র হয়ে অন্যান্য প্রান্তকে সংযুক্ত করে। ছবির সেন্টার দর্শকরা খুঁজে বের করে, যে অংশে চোখ প্রথমে যায় সেই শাসন করে ভিজ্যুয়ালকে।