Posts

গল্প

আফিমের ঘোর (রম্য রচনা)

June 15, 2024

Tarikulislam Rifat

Original Author ডাঃ মোঃ তরিকুল ইসলাম

251
View

আফিমের ঘোরে আচ্ছন্ন হইয়া পথভুলা আমি মনুষ্যকে বিশ্বাস করিয়া  ছিলাম। মনুষ্য যে এত অদ্ভুত হইতে পারে, এত জটিল হইতে পারে, তাহা আগে বুজিতে পারি নাই,  আফিমের গুণে কিছু বুজিবার দুঃসাহস করিলাম।

 মনুষ্যকে বিশ্বাস করিয়া কাছে আসার সুযোগ দিয়া ছিলাম,  প্রথমে আমাকে মিষ্টি কথায় মোহিত করিবার চেষ্টা করিল,কাছে আসার দরজটার কপাট টা খুলিবার জন্য নাড়াচাড়া করিল। আমি মনুষ্য দেখিয়া ভয়ে দরজার কপাট শক্ত করিয়া লাগাইয়া দিলাম।

বার বার দরজায় কড়া নাড়িয়া যখন ব্যর্থ হইল তখন মনুষ্য তাহার কৌশল পরিবর্তন করিয়া আমাকে একদিন পথের দ্বারে জড়াইয়া ধরিল, বিব্রত  হইলাম কিন্তুু মোর বিকশিলে আবেশে তনু নজরুলের চিত চুম্বন চোর কম্পন থর থর থর প্রথম পরশ কুমারীর মত কাঁপিতে লাগিলাম। নজরুল যেমনে কাঁপিল আমি তাহার দশ গুণ বেশি কম্পনে কাঁপিলাম,
 এই ভূমিকম্পের মত কম্পন যে আমার পাথর সদৃশ হৃদয়ে একটু ফাঁটল ধরাইয়া ঝর্ণার মত একটু খানি রস বাহির করিয়া লইবে তাহা বুজিতে পারি নাই।মনুষ্য চলিয়া গেল আমার পাথর ভাঙিয়া টুকরা টুকরা হইয়া গেল। এখন আফিমের ডোজ  বাড়াইয়া দিলেও  আর কাজ করে না

 মনুষ্যকে কেমন জানি বিশ্বাস করিয়া লইতে বলে ঝর্ণা ধারা।
ভয় কে জয় করিয়া মনুষ্যকে বিশ্বাস করিলাম। মনুষ্য আমার কাছে আসিল,  কুলে উঠিল, ঘাড়ে ছড়িল, গালে চুম্বন করিল 
মাথার চুলে দু একটা টান মারিল,  আমি ঘোরে আচ্ছন্ন থাকায় কিছুই বুজিতে পারিলাম না  কি করিতেছে।


মনুষ্য সময় পার হবার সাথে সাথে তাহার পূর্বের সকল বৈশিষ্ট্য যাহা এতদিন জোর করিয়া চাপিয়া রাখিয়াছিল তাহা উদগীরণ করিতে লাগিল,  আমার আফিম আসক্ত চুল ছিড়িতে লাগিল,,  গালে নখর বসাইতে লাগিল,  হত আর হতে শরীর ভরতে লাগিল,  আফিম আসক্ত মায়াহীন জীবনে তখন মায়া দয়া উদয় হইতে লাগিল, মনুষ্য থেকে মুক্তির জন্য গুরু মশাইকে বলিলাম গুরু মাশাই আমাকে মনুষ্য থেকে রক্ষা কর।

সময়ের স্রোতে আরও কতক মনুষ্যের দেখা পাইলাম, দেখিলাম রাস্তার দ্বারে কিছু ফকিরকে, ছিন্ন বস্রকে সাহায্য করিতেছে,  বিশেষ শ্রেণী ভাবিয়া মনুষ্যকে বিশ্বাস করিলাম কাছে গিয়া দেখিলাম মনুষ্য জীবন্ত দুনিয়ার কারিগর!


চোখ বন্ধ করিয়া আসিয়া পরিলাম আফিম খোরের সব দেখিতে নাই, গুরু মশাই বলিয়াছেন।আরেক মনুষ্যকে দেখিলাম তাহারই মত মনুষ্যকে লইয়া বাজারে বেচিয়া দিয়াছেন। 
কতক দেখিলাম জ্ঞান বিজ্ঞানে বলিয়ান হইয়া কলমের খোঁচা দিতেছে  আর মাতৃবুক থেকে রক্ত ঝড়িতেছে।পটিয়ারা এসে সবাই কে তাড়িয়ে দিতেছে।সাহেব নাকি তাহার মা সদৃশ দেশকে ভাড়া দিয়াছেন পটিয়াদের কাছে ; শতক পর্যন্ত।


 কতক মনুষ্য সাহেব সাজিতে গিয়া বানর আকৃতি ধারণ করিয়াছেন  আমি দেখিয়া একটু হাঁসিলাম কিন্তুু মনুষ্য বলিয়া  ভয়ে কিছু বলিলাম না। নিজের আকৃতি পরিবর্তনে এত  উচ্ছ্বসিত আর দেখা হই নাই।

কতক মনুষ্য দেখিলাম নিজেকে দেখাইতে গিয়া কাপড় পরার কথা ভুলিয়া গিয়াছেন, তাহাদের দেখিয়া দয়া হইল কাপড়ের এত হাহাকার দেশে, মনুষ্য নিজেকে ঢাকিবার কাপড়টুকু ও পাইতেছে না! মনুষ্যকে দেখিয়া আরও একটু আফিম খাইতে মনে চাহিল,  কষ্টে কাতর হইলে আমার আফিমের হাহাকার বেড়ে যায়।।


এত শত মনুষ্য দেখিয়া বুজিলাম আমার এই সমাজে আর থাকবার নয় এত ঢং মনুষ্যের কিন্তুু তাও যদি বিশ্বাস করার মত কেহ থাকিত! সকলই কেমন যেন নিজের স্বার্থে পরকে বলি দিতে ব্যস্ত,  পরকে বলি দিতে না পারিলে দক্ষতা নাকি আসে না মনুষ্য  জীবনে!!

এমনই করিয়া মনুষ্য নিজের মাংস নিজে ভক্ষণ করিতেছে, নিজের রক্ত নিজে পান করিতেছে, উল্লাসে মাতিতেছে।গোলকের ভিতরে এত ধাঁধা রাখিল কর্তা আগে বুজিনি, গোলক আর কি বুজিব মনুষ্যের ভেতরে এক একটা গোলক তাহাই বুজিতে পারিলাম না!


একদিন আফিমের ঘোর বেশি হইয়া যাওয়ায় পথেরদ্বারে মনুষ্যের সব কৃতকর্ম বর্ণনা করিতে লাগিলাম।দশ পনের লাইন বর্ণনার পর দেখি সকল মনুষ্য মিলে আমাকে জামাই আদর করিতে লাগিল। কেহ আমার গালে আদর করিল, কেহ সামনের লাউ এ একটু গুতা মারিল, কেহ পশ্চাদদেশে চুম্বন করিল, কেহ চুল ধরিয়া ঝুলাই রাখিল, কেহ বেশি আদর করিয়া ঠোঁট দুখানায় আঘাত করিল যেন আবৃতি বন্ধ হইয়া যায়।

মনুষ্যের তৃষ্ণা মিটিলে নিজেকে অনেক ক্লান্ত আবিষ্কার করিলাম,  দেখিলাম আমার গাল দুখানায় কোন রমণী যেন একটু লিপস্টিক দিয়া গিয়াছেন,, সামনের লাউ ফেঁটে যাওয়ায় একটু একটু ছিলিক মারিতেছিল,, আর পশ্চাদে কিছু দেখিলাম না তবে বেশি চুম্বনে তাহার চামড়া একটু হালকা হইয়াছে মনে হইল।।


আমার সবচেয়ে মায়ার জিনিস পাখির বাসাটার মত চুল দিগকে দেখিলাম কোন এক জংলী কাকের আক্রমণের  মত 
বাসার ছাদটা মাঝে মাঝে খালি খালি হইয়া পড়িয়াছিল।

শত কষ্ট সহ্য করিয়া ও মনুষ্যকে মানিয়া লইয়া ছিলাম।
কিন্তুু আমার বাসার ছাদ মাঝে মাঝে খালি দেখিয়া আর কাঁধিতে পারিলাম না অভিমানে আর্তনাদ করে অকস্মাৎ জোড়ে গুরু মশাইকে ডাকিয়া উঠিলাম।

ঘোর কেটে দেখি আমি হাটের নিচে পরে আর্তনাদ করিতেছি!  কি করিলাম এতক্ষণ আমি স্বপ্ন ভ্রমে আফিম খাইয়াছি আসতাগফিরুল্লাহ!খোদা মাফ করো আমায়।


 তবে ঘোরে একটা জিনিস বুজিয়াছি মনুষ্যকে অদূরে রেখে সম্মান করা যায়, ভালবাসা যায় বিশ্বাস করা যায় না। মনুষ্য বিশ্বাস ভাঙিবেই এটা তার স্বভাব জাত বৈশিষ্ট্য।

উতর্সগঃ বাংলাবিদ ছোট আপাকে(মিলি জেসমিন)।

ডাঃমোঃ তরিকুল ইসলাম 
সহকারী রেজিস্ট্রার 
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। তারিখঃ১৯/১১/২৩,,সময় ১২. ৩০ PM, রুটির সন্ধানে তিন চাকার বাহনে চড়ে গফরগাঁও যাওয়ার পথে লিখা।

Comments

    Please login to post comment. Login