Posts

উপন্যাস

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর- (পর্ব-০৫)

June 15, 2024

পার্থসারথি

72
View

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর ( ক্যাম্পাসভিত্তিক রোমান্টিক ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস )

*পার্থসারথি

পর্ব-০৫  

এই চলে যাচ্ছে।- এই বলে সৈকত প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। 

রুচিরা বলে- আমার তো মনে হচ্ছে তুমি বেশ চিন্তিত আছ। 

কথাগুলো শুনে সৈকত ভাবল হয়তো রুচিদি সৈকতের মনের অবস্থাটা বুঝতে পেরেছে। তাই খুবই চঞ্চলচিত্তে সৈকত জানতে চাইলো- পারমিতারও ক’দিন ধরে দেখা পাচ্ছি না। 

গত পরশু আমার সাথে দেখা হয়েছিল। গতকাল নিজের কাজে ব্যস্ত ছিলাম।- এটুকু বলে রুচিরা চুপচাপ বসে থাকে। সৈকত তাকিয়ে আছে রুচিরার দিকে। রুচিরা হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে গেল। দৃষ্টি ফিরিয়ে আবার সৈকতের দিকে তাকাল। তারপর বলল- গতকাল চাকরিতে জয়েন করে এলাম। 

সাথে সাথে সৈকত দু’হাত জোড় করে দুঃখিত কণ্ঠে বলল- ভুল হয়ে গেছে রুচিদি। আই অ্যাম অ্যাক্সট্রিমলি সরি! 

না, না আমি তেমন কিছু মনে করিনি। রুচিরা স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করল। তারপর কিছুটা আবেগঘন কণ্ঠে বলল- তবে মনে মনে তোমাকে আশা করেছিলাম। 

পড়ার পাশাপাশি চাকরি চালিয়ে যেতে পারবেন তো?- এই বলে সৈকত উত্তরের প্রত্যাশায় তাকিয়ে রইল। 

ওহো! বলতেই ভুলে গিয়েছি, পার্টটাম চাকরি! বিকেলে যেতে হবে। অতএব কোন সমস্যা হবে না।তাহলে খুব ভালো হবে। 

খুব ভালো হবে, কথাটা রুচিরার ভেতর কেঁপে উঠল। কিন্তু বাস্তবে তা একটুও প্রকাশ করল না। স্বাভাবিকভাবেই বলল- চল, পারমিতাকে একটু খুঁজে আসি। 

দু’জন ওঠে। ব্যতিক্রম চত্বর পেরিয়ে ওরা আর্টস বিল্ডিংয়ের দিকে এগিয়ে চলল। কিছুদূর এগোতেই পারমিতার রুমমেটের সাথে দেখা হয়ে গেল। রুমমেটের কাছে জানতে পেল; গতকাল বিকেলে দিদির বাসায় চলে গেছে পারমিতা। কারণ হঠাৎ করে শরীরটা একটু খারাপ লাগছিল। 

সৈকত রুচিরাকে জিজ্ঞ্যেস করে- রুচিদি, আপনার কাছে পারমিতার ফোন নম্বর আছে? 

আছে।- এই বলে পার্স থেকে ছোট নোটবুকটা বের করে খুঁজে বের করে সৈকতকে পারমিতার ফোন নম্বর দেয়। 

তাহলে ফোন করে একবার খোঁজ নেয়া যায়, কি বলেন?- বলেই সৈকত রুচিরার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে।  

রুচিরা অল্পক্ষণ কি যেন ভাবল। তারপর বলল- চল, সরাসরি চলে যাই। পারমিতার দিদির সাথেও দেখাটা করে আসি। 

সৈকত এতটুকু আশা করেনি। তাই বাসায় যাবার প্রস্তাবটা শোনামাত্রই উৎফুল্লচিত্তে বলল- হ্যা, চলুন। সরাসরি গিয়ে দেখে এলেই ভালো হয়। আর মনে মনে ভীষণ খুশী হয়ে ভাবে; মেঘ না চাইতেই জল! 

তাহলে চল, এখনই যাওয়া যাক।- রুচিরা বেশ খুশী হয়। 

সামনের দোকানটা থেকে একটা সিগারেট নিয়ে সৈকত আগুন ধরাল। কাছে আসতেই রুচিরা বলল- সৈকত, তুমি কিন্তু সিগারেটের মাত্রা ক্রমশ বাড়িয়ে যাচ্ছ। এটা কোন ভাল লক্ষণ নয়। 

দু’কানে হাত ছুঁয়ে সৈকত বলল- ‘সরি রুচিদি কমাতে চেষ্টা করবো। কথা বলার সাথে সাথে সারা মুখমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ল দুষ্টুমি ভরা হাসি। 

সৈকতের হাসিতে রুচিরার হালকা শাসন মিলিয়ে গেল। তারপর আবার বলল- ‘ঠিক আছে, এখন একটা রিকশা নাও। 

সৈকত এগিয়ে গিয়ে একটা রিকশা ঠিক করল। চেপে বসল দু’জন। রিকশা চলতে শুরু করল। নিউ মার্কেট ওভার ব্রিজের কাছে রিকশা থামিয়ে সৈকত নেমে গেল। ফিরে এল কিছু ফল কিনে। রিকশা আবার এগিয়ে চলল। রিকশা যতই এগোচ্ছ সৈকত ততই অজানা আমেজের এক বিমুগ্ধ শিহরণে আলোড়িত হচ্ছে। বিভিন্ন চিন্তা-ভাবনা ডুবে ডুবে সৈকত এগিয়ে চলছে। পথে সৈকত এবং রুচিরা খুব কমই কথা বলেছে। 

*

কলিংবেল টিপতেই পারমিতার দিদি এসে দরজা খুললেন। নমস্কারটুকু নিয়েই দিদি সরে দাঁড়ালেন। রুচিরা ও সৈকত ড্রয়িং রুমে এসে বসল। দিদি সৈকতের দিকে একপলক তাকিয়েই রুচিরার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। রুচিরা বুঝতে পেরে সৈকতকে দিদির সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। 

সৈকত দাঁড়িয়ে দিদিকে নমস্কার জানাল। নমস্কার নিয়ে দিদি বললেন- তোমরা বসো। আমি আসছি। 

রুচিরা বলল- একটু আগেই খবর পেলাম পারমিতা অসুস্থ। 

এখন একটু ভালো আছে।- এই বলে দিদি ভেতর ঘরে পা বাড়ালেন। পেছন পেছন গেল রুচিরা। যাবার আগে রুচিরা সৈকতকে বলল- তুমি বস। আমি একটু পারমিতাকে দেখে আসছি। 

মিনিট দুয়েক পরেই ফিরে এসে রুচিরা সৈকতকে ভেতর ঘরে নিয়ে গেল। 

পারমিতা ডান কাত হয়ে শুয়ে আছে। রুচিরা এগিয়ে গিয়ে পারমিতার কোলের কাছে বিছানায় বসল। সৈকত ঘরে ঢুকেই লজ্জায় একটু যেন গুটিয়ে গেল। সম্মোহিতের মত এগিয়ে গেল ধীরপদে। দিদি কাজের মেয়েটাকে ডেকে বললেন- এই ঘরে একটা চেয়ার দিয়ে যায়। 

সৈকত পারমিতার কাছকাছি হয়ে জিজ্ঞ্যেস করল- এখন কেমন আছ, পারমিতা? 

আড়ষ্টকণ্ঠে পারমিতা বলল- এখন অনেকটা ভাল। তবে শরীরটা খুব দুর্বল লাগছে। সৈকতকে চিন্তিত দেখে আবারও বলল- চিন্তা করো না। সামান্য জ্বর এমনিতেই সেরে যাবে। 

রুচিরার ভালোবাসার হাতটুকু পারমিতার কপাল থেকে ফিরে এল। তারপর গালে হাত বুলাতে বুলাতে বলল- চিন্তা করো না, ভাই। ঠিক হয়ে যাবে। 

পারমিতা জবাবে কোন কথা বলে না। শুধু শব্দহীন হাসি হাসল। সৈকত পারমিতার চোখে চোখ রাখল। পলকহীন মুহূর্ত। নির্বাক সময়ের কিছুক্ষণ যাত্রা। পারমিতার চোখ যেন সৈকতকে কাছে ডাকছে। সৈকত একটু আড়ষ্ট হয়ে যায়। তারপর কাছাকাছি এগিয়ে আসে। পারমিতার কপালে একটা হাত রাখল। হাতটা ভেতরে ভেতরে অসম্ভব রকম কাঁপছে। তাপ দেখে হাত সরিয়ে নিয়ে এসে বলে- ঔষধ ঠিকমত খাচ্ছো তো? 

মাথা কাত করে হ্যাঁ বলে পারমিতা । অবশ্য ‘হ্যাঁ-এর বেশির ভাগ জবাবই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে চোখের এক জ্যোতির্ময় কারুকার্যে । রেখে যাওয়া চেয়ারটা টেনে সৈকত বসে। এই ফাঁকে দিদি অন্য ঘরে গেলেন, বলে গেলেন, তোমরা গল্প কর। আমি একটু হাতের কাজ সেরেই ফিরে আসছি।- বলেই তিনি চলে গেলেন। 

পারমিতা জড়ানো কণ্ঠে বলে- রুচিদি আপনি নিশ্চয়ই চাকরিতে জয়েন করেছেন? 

হ্যাঁ ভাই, গতকাল জয়েন করলাম।- হাসতে হাসতে রুচিরা জবাব দেয়। 

প্রথমদিনের অনুভূতিটা নিশ্চয়ই রোমাঞ্চকর, তাই না রুচিদি?- এই বলে পারমিতা রুচিরার দিকে ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে থাকে। 

সত্যি খুবই ভালো একটা দিন গেল গতকাল। কথার মধ্যে রুচিরার সবটুকু সুখ ছড়িয়ে পড়ল। 

রুচিদি আপনি বেতন পেলেই আমাদের চাইনিজ খাওয়াবেন কিন্তু।- সৈকত রুচিরাকে বলে। 

নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই, এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তোমরা ছাড়া ক্যাম্পাসে আমার আর কে আছে?- রুচিরা বেশ উৎফুল্লচিত্তেই বলে কথাগুলো।

চলবে...

Comments

    Please login to post comment. Login