Posts

উপন্যাস

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর- (পর্ব-০৬)

June 15, 2024

পার্থসারথি

73
View

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর ( ক্যাম্পাসভিত্তিক রোমান্টিক ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস )

*পার্থসারথি

পর্ব-০৬  

নাস্তার ট্রে হাতে কাজের মেয়েটা এলো। পেছন পেছন এলেন দিদি। ওদের সাথে দিদিকেও দু’এক টুকরা আপেল এবং মিষ্টিও খেতে হল। রুচিরা নিজ হাতে তুলে পারমিতাকে খাইয়ে দিল। 

চা-পর্ব শেষ করে রুচিরা ঘড়ির দিকে তাকাল। একটা বেজে কুড়ি মিনিট। কিন্তু কিছু বলার আগেই দিদি বললেন- ভাই ঘড়ি দেখে কোন লাভ হবে না। দুপুরে তোমরা খেয়ে যাবে। রুচিরার সাথে সাথে সৈকতও ‘না-না’ করছিল। 

দিদি হালকা আদুরে ধমক দিয়ে বললেন- তোমরা কোন কথা বলো না। চুপচাপ বসে বসে গল্প করো। আমি তোমাদের একদমই দেরী করাবো না। বলেই দিদি মিষ্টি একখান হাসি ছড়িয়ে দিলেন। 

রুচিরা বলে দিদি, আমাকে অফিসে যেতে হবে। নতুন জয়েন করেছিতো। তাই সময় মতো যাওয়াটা জরুরি। 

হঠাৎ মনে পড়ে গেল এমনভাব নিয়ে দিদি বললেন- সরি, আই অ্যাম রিয়্যালি সরি। তোমার চাকরির কথা পারমিতা বলেছিল। অথচ তোমাকে একবারও জিজ্ঞ্যেস করলাম না। একটুক্ষণ থেমে দিদি আবার বললেন- ভালো, খুব ভালো। মেয়েরা আজকাল অনেক সাহসী হচ্ছে। এটা খুবই ভালো লক্ষণ। তোমার অফিস ক’টায়? 

বিকেল চারটা হতে সন্ধা আটটা নাগাদ। 

তাহলেতো খুবই ভালো হল। দুপুরে এখানে খাবে। বিশ্রাম নেবে। তারপর অফিস যাবে এখান থেকেই।

রুচিরা আমতা আমতা করছিল। 

দিদি রুচিরাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন- তোমাকে আমি এত সাধতে পারবো না। বসে বসে গল্প কর, আমি আসছি। আর কোনরকম জবাবের জন্য অপেক্ষা করলেন না দিদি। 

এই মাসটা ব্যস্ততার মাঝে ভালো কেটেছে রুচিরার। সৈকত, পারমিতা, চাকরি আর জীবনের প্রাসঙ্গিক টুকিটাকিতে ডুবে থেকে থেকে একঘেমেয়ি থেকে কিছুটা হলেও দূরে থাকতে পেরেছে। হঠাৎ করে রুচিরা নিজেকে সুখী ভাবতে চেষ্টা করছে। সত্যি, সময়গুলো কেমন যেন ফুরুৎ ফুরুৎ করে চলে যাচ্ছে। জীবনের এক ঘেয়েমি ভাবটা একেবারেই কেটে গেছে। রুচিরা এখন প্রতিটা মুহূর্তকেই দারুণভাবে উপভোগ করছে। এবং জীবনের প্রতিটা মুহূর্তই যেন বেশ অর্থবহ মনে হচ্ছে ওর কাছে। চাকুরি করে, লেখাপড়ার তেমন কোন অসুবিধা হচ্ছে না। বরং জীবনে অন্যরকম একটা ছন্দময়তা জড়িয়ে থাকে। যা রুচিরাকে সর্বক্ষণ নতুন করে বাঁচতে তাগিদ দিচ্ছে। 

মেয়েদের হলে আঁড়ালে-আবডালে অনেকেই রুচিরার রূপের কথা বলাবলি করে বলে যে, মেয়েটা খুবই দেমাগি। আর সেজে-গুজে হোটেলে হোটেলে ঘুরে বেড়ায়। একটুও লজ্জাশরম নেই! 

এ'কথাটা রুচিরার কানেও এসে পৌঁছে গেছে। একমাত্র রুচিরাই জানে, সে কেন সর্বক্ষণ এত চুপচাপ থাকে। প্রত্যেকের জীবনে এমন কিছু ঘটনা থাকে যা জীবনের কোন না কোন সময়ে ভাবিয়ে তোলে। আবার এমন কিছু ঘটনা থাকে যার বেড়াজাল থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা খুবই কঠিন ব্যাপার। রুচিরা নিজের কষ্টটাকে এক মুহূর্তের জন্যেও আড়াল করতে পারে না। ছায়া হয়ে মনের আঙিনায় র্সবক্ষণ বিচরণ করে। কষ্টের মাঝেই বর্তমানে রুচিরার বসবাস। তাই চুপচাপ থাকতেই বেশি পছন্দ করে। সৈকতের সাথে ইদানিং সম্পর্কটা একটু ঘনিষ্ঠ হয়েছে। 

পারমিতার সাথে পরিচয় পর্বটা একটু ভিন্ন আঙিকের। পারমিতা পাশের বিল্ডিংয়ে থাকে। একদিন বিকেলে রুচিরা সবুজ ঘাসের বুকে নিজের মনকে বিছিয়ে চুপচাপ বসে আছে। পারমিতা অনেকের কাছে রুচিরা সম্পর্কে শুনেছে। কিন্তু ওই মুর্হূতে পারমতিার কেন যেন মনে হলো, মেয়েটা খুবই অসুখী। পারমিতা ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে যায়। কাছাকাছি হয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। রুচিরার চিন্তা জগতে কোন রকম ভাবান্তর হয় না। 

অনকেক্ষণ পর পারমিতা বলে- আপা একটু বসতে পারি কি? 

রুচিরা ফিরে তাকায় । কিছুটা আশ্চর্য হয়। কারণ মেয়েটা অপরিচিত। কোন চেনা মেয়েও সাধারণত যেচে এসে রুচিরার সঙ্গে কথা বলে না। রুচিরা স্মরণ করার চেষ্টা করল, পূর্বে কখনও পরিচয় হয়েছিল কিনা। কোনভাবেই পরিচিত সীমানায় আনতে পারছে না। 

আপা বসতে পারি?- পারমিতা আবারও বলে। 

রুচিরা এবার স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে, বলে- অবশ্যই, অবশ্যই।- এই বলে পাশের জায়গাটুকু ইশারায় দেখিয়ে দেয় রুচিরা। পারমিতা ঘাসের ওপর চেপে বসে। পারমিতার হাতে কোন কাজ নেই। ইচ্ছে ছিল বান্ধবীকে নিয়ে একটু বৈকালিক হাঁটাহাঁটি করবে। বান্ধবীটি রুমে ফিরেনি। তাই হলের ভেতরই পারমিতা হাঁটাহাটি করছলি। এই সময় অনেকে বন্ধুদের নিয়ে বাইরে আড্ডা দেয়। তবে বেশি সংখ্যক মেয়েরা হলের ভেতরই সময় কাটায়। কেউ হয়তো পেপার রুমে, কেউবা লাইব্রেরিতে আবার গেমস রুমেও অনেকে সময় কাটায়। রুমের ভেতর আড্ডাও বেশ জমে। অনেকে এটা-সেটা কেনার জন্য নিউ মার্কেট অথবা গাউছিয়া মার্কেটে যায়। 

রুচিরা যেখানটায় বসে আছ , এখানে সচরাচর কেউ বসতে আসে না। পারমিতা ইচ্ছে করেই এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করছিল। হঠাৎ চোখ পড়ে, একটা মেয়ে নির্জন জায়গায় চুপচাপ একাকী বসে আছে। 

নীরবতা ভেঙে রুচিরা বলে, কিছু বলবেন কি? 

নিদিষ্ট কিছু বলব বলে আসিনি। আপনাকে দেখে কাছে বসতে ইচ্ছে জাগলো তাই আসা।- পারমিতা আন্তরিকতার সহিত কথাগুলো বলল। 

রুচিরা সত্যিই অবাক হল। হল জীবনের এই আড়াইটা বছরে এমন ঘটনা ঘটেনি। যাদের সাথে হালকা পরিচয় ছিল তারাও অনেক দূরত্ব বজায় রেখে চলে। অবশ্য এর মূল কারণ রুচিরা নিজে। রুচিরা ইচ্ছে করেও জীবনের প্রাণ-চঞ্চল্যময় মুহূর্তগুলো ফিরিয়ে আনতে পারে না। ফলে বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা বাড়েনি। অথচ এই অপরিচিত মেয়েটা যেচে এসে পাশে বসল। রুচিরা পারমিতার চোখের কাছাকাছি চোখ রেখে বলল- আপনি আমার সম্পর্কে কোন কিছুই শোনেননি? 

শুনেছি। 

তবে?- বলেই রুচিরা প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে পারমিতার দিকে তাকায়। 

কান কথায় আমি কখনও বিশ্বাস করি না।- পারমিতা বেশ দৃঢ়চিত্তেই কথাগুলো বলে। 

হতেও তো পারে। 

আমার মনে হয় এ পরিস্থিতির জন্য আপনি নিজে দায়ী না এবং এর পেছনে নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে?- পারমিতা দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে বলে। 

রুচিরা অবাক দৃষ্টিতে তাকায়। পারমিতা চোখ ফেরায় না। রুচিরা স্বাভাবিক কন্ঠেই আবার বলে- আপনি আমাকে কতটুকু জানেন? 

আপনার সাথে আজই প্রথম কথা বলছি। জানব কোথেকে? যতটুকু জেনেছি অন্যদের কাছ থেকে শোনে শোনে। যার কোন অর্থই হয় না। আমি কারও শোনা কথায় বিশ্বাস করি না। 

যা জেনেছেন তা সত্যিওতো হতে পারে নাকি? 

ধরে নিলাম সত্যি । কিন্তু আপনি আমার কথা এড়িয়ে যাচ্ছেন।

চলবে...

Comments

    Please login to post comment. Login