পোস্টস

উপন্যাস

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর- (পর্ব-০৯)

১৬ জুন ২০২৪

পার্থসারথি

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর ( ক্যাম্পাসভিত্তিক রোমান্টিক ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস )

*পার্থসারথি

পর্ব-০৯  

আমি কিছুই বলতে পারিনি। মা-বাবার ওপর খুব রাগ হচ্ছিল। কতক্ষণ নিজে নিজে বিড়বিড় করলাম। লোকটার সাথে তারপর আর কোন কথা বললাম না। 

যথাসময় লোকটা বিদায় নিয়ে চলে যায়। লোকটার মা-ও জানেন না যে, তার ছেলে চিরতরে চলে যাচ্ছে। কারণ সে তার মার কাছে বলে গেছে ক'দিনের জন্য ঢাকায় যাচ্ছে। 

পারমিতা বলে ওঠে- আপনি লোকটার মাকে সত্যি কথাটা বলে দিলেন না কেন? 

রুচিরা কণ্ঠটাকে একটু দৃঢ় করে বলে- আমি ইচ্ছে করেই বলিনি। ভাবলাম বাকি জীবনটা পুত্রহীন কাটিয়ে কিছুটা হলেও যন্ত্রনা ভোগ করুক। 

কয়েকদিন পর অবশ্য সব বললাম। আমার কথা শোনার পর মহিলার সে কী কান্না! দু’দিন পর্যন্ত নাওয়া-খাওয়া করেননি। আর তৃতীয় দিনে চেপে ধরলাম আমি। 

মহিলা আমাকে বুঝাতে চেষ্টা করেছেন- ছেলেকে কাছে ধরে রাখার জন্য এমনটি করেছি। অন্য কিছু ভেবে করিনি মা, তুমি আমাকে ক্ষমা কর। 

আপনি আমার জীবনটাই নষ্ট করে দিয়েছেন। আপনি যে অপরাধ করেছেন তা ক্ষমার যোগ্য নয়। আমি আপনাকে কোনদিন ক্ষমা করতে পারবো না। 

তার পরদিনই আমি চলে আসি। মা-বাবা আমার কথা শোনার পর হতবিহ্বল হয়ে যায়। কষ্টের সীমানা পেড়িয়ে আমি খুশী হওয়ার ভান করেছি শুধু মা-বাবাকে কষ্ট দেয়ার জন্য। কিছুদিন পর আমি নিজেই উকিল নোটিশ পাঠিয়ে দিই। 

রুচিরার কথা শোনার পর পারমিতা যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। কী বলবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। বুকের ভেতরটা হাহাকার করে ওঠেছে। তবুও অনেকটা সামলে নিয়ে পারমিতা বলে- যা হয়েছে তা-তো আর ফিরে পাবেন না। সব কিছু ভুলে যেতে চেষ্টা করুন। জীবনটাকে আবার নতুন করে সাজিয়ে তোলেন। দেখবেন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। মানুষের জীবনে কত হাজার রকমের দর্ঘটনা ঘটে। ধরে নিন, এটা একটা দুর্ঘটনা। একটু সময় নিন দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে। 

চেষ্টাতো করছি-ই ভাই। কিন্তু মনটাকে প্রবোধ মানাতে পারছি না। 

পারমিতা এসে রুমে ঢুকেই জিজ্ঞ্যেস করে-‘একা একা কার সাথে কথা বলছেন? 

পারমিতার উপস্থিতিতে রুচিরার তন্ময়ভাব কেটে যায়। তারপর বলে- স্মৃতি নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম। 

অফিসে যাচ্ছেন বুঝি?- পারমিতা জানতে চায়। 

বাম হাতে ছোট আয়নাটা ধরে রেখে ঠোঁটে লিপস্টিক রঙ লাগাতে লাগাতে রুচিরা বলে- হ্যাঁ, অফিসে যাচ্ছি। ও হ্যাঁ পারমিতা, আজ সম্ভবত বেতনটা পাব। বেতন পেলেই তোমাকে আর সৈকতকে চাইনিজে নিয়ে যাব। তারপর নাটকপাড়ায় নাটক দেখতে যাব। 

পারমিতা খুশী হয়ে বলে- ঠিক আছে। 

রুচিরা ভ্যানিটি ব্যাগটা হাতে নিয়ে বাইরে পা বাড়ায়। পারমিতা সাথে সাথে হেঁটে চলে। বিল্ডিং-গেট পেরিয়ে একটু এগোতেই একটা মেয়ে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে বলে- আজকের সাজগোজটা ভালোই হয়েছে। কাস্টমার বেশি জুটবে। 

কথা বলার সাথে সাথেই অন্য মেয়েগুলো খিলখিলিয়ে হেসে একজন অন্যজনের ওপর গড়িয়ে পড়ছে। 

কথাগুলো রুচিরা স্পষ্টই শুনেছে এবং বুঝতে পেরেছে। আশেপাশে অন্য কেউ নেই। রুচিরার উদ্দেশ্যেই বলা সেটা ওর বুঝতে একটুও অসুবিধা হয়নি। রুচিরা পারমিতাকে বলে- ওই মেয়েটা কত নম্বর রুমে থাকে জান? 

হ্যাঁ দিদি, জানি।- পারমিতা উত্তরে বলে। 

রুচিরা কেন জানতে চেয়েছে তা ও বুঝতে পারেনি। কারণ একটু আগে যে কথাগুলো বলেছে ওই মেয়েটা তা পারমিতা শুনতে পায়নি বা লক্ষ্য করেনি। 

রুচিরা আর কথা বাড়ায়নি। গেইট পেরিয়ে গিয়ে রিকশায় উঠল রুচিরা। তারপর পারমিতাকে বলল- রাতে তুমি হলেই থেকো। আবার বাসায় চলে যেও না কিন্তু। কাজ আছে। 

ঠিক আছে, বাসায় যাব না। 

রিকশাওয়ালার পা চলতে থাকে। পারমিতা কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে আবার হলের ভেতর পা বাড়ায়। 

*

পড়ার টেবিলে বসা অবধি লেখাপড়াতে মনটা ঠিকমতো বসাতে পারেনি পারমিতা। হৃদয়ের পুরো পৃষ্ঠা জুড়ে সৈকতের অবাধ বিচরণ। পারমিতার চোখের সীমানায় শুধু সৈকত। মনের অজান্তে সাদা পাতার বুক জুড়ে কলমের চিবুক বেয়ে নেমে এল সৈকত, সৈকত, সৈকত! নামের উপরে আরও আঁকিবুকি করতে লাগল। মাঝেমাঝে নিজের নামটাও বসিয়ে দিচ্ছে। বসিয়ে দিয়েই পরক্ষণে নিজেই লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একটা ঘোরের মধ্যেই কেটে গেল পুরো সময়টা। 

রুচিরা রুমে ঢুকেই দেখতে পায় পারমিতা মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করছে। কোনরকম শব্দ না করে চুপচাপ পারমিতার চেয়ার ঘেঁষে দাঁড়াল। খাতার উপর চোখ পড়তেই ‘সৈকত’ লেখার পাশাপাশি ‘পারমিতা’ লেখা অক্ষরগুলো চোখ পড়ে। সাথে সাথেই রুচিরা বলে- সরি, আই অ্যাম রিয়্যালি সরি। 

পারমিতা তড়িৎ গতিতে খাতাটা লুকিয়ে লজ্জাবনত দৃষ্টি নিয়ে রুচিরার দিকে তাকিয়ে বলে- আপনি কখন এলেন? 

এইমাত্র এলাম। রুমে না গিয়ে সোজা তোমার রুমেই চলে এলাম। খাওয়া হয়েছে তোমার? 

পারমিতা অবাক চোখে ঘড়ির দিকে তাকায়। নয়টা বেজে পাঁচ । বেশ অবাকই হয় পারমিতা। তারপর অস্ফুটস্বরে উচ্চারণ করে- এত রাত হয়ে গেল কখন?- বলেই লজ্জায় অবনত হয়ে আসে। 

রুচিরা মুচকি হেসে কানে কানে বলে- সৈকত খুবই ভালো ছেলে। সৈকতও তোমাকে খুব ফিল করে। 

পারমিতা খুশী হয়েও যেন লজ্জায় ডুবে গেল। রুচিরার এক হাত টেনে ধরে বলে- চলুন আগে রাতের খাবার খেয়ে আসি। 

খাওয়ার কাথাটা মনে এলেই অরুচি এসে যায়।- এই কথা বলে পারমতিা রুচিরার দিকে তাকায়। 

রুচিরা বলে- কী আর করা, চলো খেতে তো হবেই। যতদিন বেঁচে আছি খেতে তো হবেই। দু'জন একসঙ্গে ক্যান্টিনের দিকে পা বাড়ায়। 

খাওয়া শেষ করেই রুচিরা বলে- বিকেলে যে মেয়েটার কথা বলেছিলাম ওই মেয়েটার রুমে চল। 

পারমিতা কিছুটা অবাক হয়েই বলে- এখনই যাবেন। বিশেষ দরকার বুঝি? 

রুচিরা পারমিতাকে বিকেলের ঘটনাটা বলে। কথাটা শোনার সাথে সাথে পারমিতা বলে- তখন কিছু বললেন না কেন? 

অফিসের দেরি হয়ে যেত, তাই। চল, এখন যাব। 

ঠিক আছে চলুন।- পারমিতা বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বলে। 

দু’জন চুপচাপ হেঁটে চলে। দরজার কাছে এসে দাঁড়াল। বেশ কয়েকটি মেয়ে রুমে বসে গল্প করছে। রুচিরাকে দেখামাত্রই ওই মেয়েটার চোখ-মুখ ফ্যাক্যাশে হয়ে গেল। সাথে অন্য যে মেয়েগুলো ছিল ওদরে কেউ এখানে নেই। রুচিরা মেয়েটার উদ্দেশে বলে- আপনার সাথে কিছু কথা ছিল। 

মেয়েটা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।

 

চলবে...