পোস্টস

উপন্যাস

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর- (পর্ব-১১)

১৬ জুন ২০২৪

পার্থসারথি

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর ( ক্যাম্পাসভিত্তিক রোমান্টিক ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস )

*পার্থসারথি

পর্ব-১১  

কথা কেড়ে নিয়ে সৈকত বলে- ও সারাদিন লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকে। 

রুচিরা প্রসঙ্গ পাল্টে বলে- অনিক আজ কি তোমার কোন কাজ আছে? 

টিউটোরিয়াল পরীক্ষা আছে একটা দিদি। - এই বলে অনিক বলে- সৈকত আমি নিচ থেকে একটু আসছি। আবার বের হয়ে যাস না কিন্তু? 

সৈকত বলে- ঠিক আছে, একটু তাড়াতাড়ি আসিস। 

রুচিরা বুঝতে পেরে বলল- অনিক, এখন কিছুই খাব না। বসো, কিছু আনতে হবে না। 

সৈকত বলে- ঠিক আছে, অল্প কিছু নিয়ে আয়। 

রুচিরা না, না করছিল কিন্তু অনিক কোন কথাই শুনল না। দরজা পেরিয়ে আড়াল হয়ে গেল। 

রুচিরা সৈকতকে ডেকে বলে- ঝটপট তৈরি হয়ে নাও। 

প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে সৈকত তাকায়। 

রুচিরা বলে- আগে তৈরি হয়ে নাও। এখন কিছুই বলছি না। 

সৈকত আলনার আড়ালে চলে যায়। পারমিতা এতক্ষণ চুপচাপ বিছানা গোছাচ্ছিল। বিছানা গোছানো শেষ করে টেবিলে হাত দিল। রুচিরা বিছানায় এক কোণে বসল। টেবিলের এলোমেলো বই-খাতা সব পারমিতা গুছিয়ে তারপর চেয়ারটা টেনে বসল। 

অনিক একটি পিচ্চিসহ রুমে ঢুকল। পিচ্চির হাতে বিস্কুট, কলা এবং একটা ডেনিস কৌটায় চা। চানাচুরের প্যাকেটটা অনিক টেবিলে রেখে একটা বড় সাইজের বোতল এবং দুটো গ্লাস পিচ্চিটার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল- ভালো করে ধুয়ে তারপর পানি নিয়ে আসবি। 

পিচ্চিটা এক দৌঁড়ে বাইরে চলে যায়। সৈকত প্যান্ট-শার্ট পরে সামনে এগিয়ে আসে। অনিককে ডেকে কাছাকাছি নিয়ে বসে। যখন সৈকত চানাচুরের প্যাকেটটায় হাত দেয় তখন অনিক ডেনিস কৌটা থেকে চা গ্লাসে ঢেলে রুচিরা ও পারমিতার দিকে এগিয়ে দেয়। 

পারমিতা বলে- আপনারা আগে খান, আমরা পরে খাই। 

রুচিরা হাসতে হাসতে বলে- আ-রে আমরা হলাম গেস্ট । কি বল অনিক? 

অনিক কথাটিতে বেশ মজা পেয়ে যায়। তারপর হাসিমুখেই স্পষ্ট অথচ প্রাণোজ্জল কণ্ঠে বলে- ঠিকই বলেছেন দিদি। আগে গেস্ট তারপর হোস্ট। 

*

দরজার বাইরে পা বাড়িয়েই সৈকত ঘড়িতে তাকায়। দশটা বাজে। অনিক দরজায় দাড়িঁয়ে থেকেই বলে- দিদি আবার আসবেন কিন্তু। রুচিরা ও পারমিতা একই সাথে বলে ওঠে- হ্যাঁ আসব। 

কিছুক্ষণ এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরির পর ওরা একটা নাগাদ রিকশা নিয়ে সোজা নীরব হোটেলে চলে এল। নীরব হোটেলটা চাংখারপুল পেরিয়ে নাজিমউদ্দীন রোড়ে। পুরনো ঢাকায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই এখানে বেশি আসে। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন খাবারের পাশাপাশি বিভিন্ন রকম খাবারের সমাহার এবং দামেও বেশ সস্তা। ঢাকা শহরে এত সস্তায় এমন রুচিশীল খাবার পাওয়া সত্যিই দুষ্কর। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এত ভিড়। এখন এই হোটেলটা বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। বিশেষ করে ছাত্রদের কাছে। 

ভিড় থাকা সত্ত্বেও এক কোণের টেবিলে ওরা জায়গা পেয়ে গেল। চেয়ারে বসতে বসতে রুচিরা বলে- কি কি অর্ডার দেব, তোমরা বল। 

সৈকত উত্তরে বলে- আজকের পুরো দিনটাই আপনার হাতে ছেড়ে দিলাম। কী বলো পারমিতা?- বলেই সৈকত পারমিতার দিকে তাকায়। 

উত্তরে পারমিতা বলে- একদম ঠিক। 

রুচরিা ওদের কথাতে বেশ খুশি হয়ে বলে- আচ্ছা ঠিক আছে, তবে তোমাদের পছন্দের বিশেষ কিছু বাদ পড়ে গেলে অবশ্যই কিন্তু বলবে। 

সৈকত হাসতে হাসতে বলে- আপনার কাছে যদি লুকিয়ে রাখি তাহলে কি চলবে? তারপর সৈকত বয়কে ডেকে বলে- মামু, এদিকে আসেন। 

বয় যেন ডাকের অপেক্ষায় ছিল। ডাক দেবার সাথে সাথেই চলে এল। 

বয় কাছে আসতেই রুচিরা অর্ডার দেয়- সব রকমের ভর্তা এবং ভাজি, শুকনা মাছের ভর্তাও বাদ যায়নি। 

মাংসের কথা বলতেই সৈকত মৃদু আপত্তি তুলে বলে- আজ মাছ-মাংস বাদ শুধু শাকসবজি আর ভর্তা, কি বল পারমিতা? 

দিদি অর্ডার দিচ্ছেন যেহেতু আজকে অন্তত মিশালীভাবেই চলুক। 

ওকে, র্অডার পাস হয়ে গেল। - এই বলে সৈকত হাসে। 

কাঁটায় কাঁটায় তিনটেয় ওরা হোটেলের বাইরে এলো। হোটেল গেটের পাশের দোকান থেকে তিনজনই মিষ্টি পান খেলো। তারপর রিকশা নিয়ে জাতীয় জাদুঘরে চলে এল। রুচিরা এর আগেও একবার এসেছে। আবার দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছে । সৈকত গত দু‘বছরে জাদুঘরে একবারও উকি দেয়নি। জাদুঘর দেখেছে কিনা জিজ্ঞ্যেস করতেই লজ্জায় লাল হয়। 

পারমিতা বলে- ‘আমিও যাইনি। 

রুচিরা পারমিতাকে বলে- ‘তুমি তো মাত্র ফার্স্ট ইয়ারে । হয়ত ক্যাম্পাসের মোহেই এখনও আবিষ্ট হয়ে আছো। সৈকতের এতদিনে আসা উচিত ছিল। কত দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসে জাদুঘর দেখতে। আর আমরা কাছে থেকেও খোঁজ নিইনি। এটা কিন্তু ঠিক না। আমাদের সবসময় উচিত নিজেদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে জানা। 

সাড়ে তিনটা নাগাদ ওরা জাদুঘরে ঢুকে সবকিছু খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে। কোনটা কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, কে ব্যবহার করত, কে মালিক ছিল। কত সালের জিনিস । মোট কথা সব সূত্রই লেখা আছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভালোভাবে দেখে নিল। সাড়ে ছয়টা নাগাদ ওরা বেরিয়ে এল জাদুঘর থেকে। তারপর রিকশা নিয়ে বেইলি রোড়, নাটকপাড়ায়। 

রিকশা থেকে নেমেই সৈকত রুচিরাকে বলে- রুচিদি, নাটক দেখে ফিরতে ফিরতে দশটাও বেজে যেতে পারে। আপনাদেরতো হলে ঢুকতে দেবে না। 

রুচিরা উত্তরে বলে- ‘অ্যাপ্লিকেশন করে পারমশিন নিয়ে এসেছি। কোন অসুবিধা হবে না। 

সবকিছু তাহলে আগেই প্লান করে রেখেছিলেন?- বলেই রুচিরার দিকে তাকায় সৈকত। 

রুচিরা মিষ্টি হেসে বলে- মোটামুটি। 

নাটক শেষ হলো রাত সাড়ে নয়টায় । রুচিরা ও পারমিতাকে হলে পৌঁছে দিয়ে সৈকত হলের দিকে চলল। রিকশা চলছে বাতাসের উল্টোদিকে। ফুরফুরে বাতাস সৈকতের মনটাকে আরও সজীব করে তুলল। খোশমজোজের আমেজের সৈকত গানে সুর মেলাচ্ছে। আজ সত্যিই আনন্দের দিন। পারমিতাকে খুবই কাছে পেয়েছে এবং মনে হয়েছে পারমিতার খুবই কাছের জন। রিকশা কখন হল গেইট চলে এল সৈকত একদমই টের পায়নি। রিকশা থামতেই ভাবনায় যতি রেখা পড়ল। 

রুমে ঢুকতেই অনিক, সুমন্ত ও আসফি একসাথে বলে ওঠল- কনগ্র্যাচুলেশনস।- এই বলে সবাই হাত বাড়িয়ে এসে হাত মেলায় এবং বুকে মেলায় বুক। সৈকত চুপচাপ দাঁড়িয়ে । সে কিছুই বুঝে ওঠতে পায়নি। অবাক দৃষ্টে ওদের দিকে তাকিয়ে রইল। 

প্রথমে আসফি বলে ওঠে- অবাক হচ্ছো কেন বন্ধু? ডুবে ডুবে জল খেলে কী হবে? এখন ওপেন সিক্রেট। এত বড় সুখবরটা পেয়ে ভাবলাম বন্ধুটির সাথে দেখাটা করেই যাই। কি ঠিক করিনি? 

 

চলবে...