পোস্টস

উপন্যাস

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর- (পর্ব-১২)

১৬ জুন ২০২৪

পার্থসারথি

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর ( ক্যাম্পাসভিত্তিক রোমান্টিক ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস )

*পার্থসারথি

পর্ব-১২  

আসফির কথায় সবাই হাসতে হাসতে সৈকতকে ধরে মাথার ওপর তুলে ফেলল। কতক্ষণ পর সৈকতকে বিছানায় পুতুলের মত ফেলে দিল। তারপর সুমন্ত সবার উদ্দেশে বলে- আজ রাতটা শুধু আনন্দের, আনন্দের আর আনন্দের ।- এই বলে আসফি পকেট থেকে একটা পুটলা বের করে সৈকতকে দেখায়। 

সৈকত উঠে বিছানায় বসতে বসতে বলে- শুকনাটা আমি একদম সহ্য করতে পারি না। 

আসফি জোর গলায় বলে- ‘আজ অন্তত ক্ষমা নেই। 

আসফির কণ্ঠে অন্যরাও কন্ঠ মেলায়। 

অনিক নিচে গিয়ে মুড়ি আর চানাচুর নিয়ে আসে। তারপর সবাই ছাদের উপর ওঠে। জোছনার আলোয় চারদিকে আলোকিত আকাশে লক্ষ তারার ঝিকমিক। চারদিক আলোকিত। সৈকতের মনটা হাওয়ায় হাওয়ায় উড়ে বেড়ায় তারকালোকিত আকাশে। গাঁজা টেনে সবাই একটু আধটু নেশাচূড় হয়। কিন্তু সৈকত নিজেকে সামলাতে পারল না। ছাদের উপর শুয়ে পড়ল। আর দৃষ্টি মেলে দিল নীল আকাশের অসীমে। সৈকতের মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীটা চক্রাকারে ঘুরছে। আকাশের সব তারা যেন ওকে দেখে মিটিমিটি হাসছে আর চোখের সামনে ঘুরপাক খাচ্ছে। আবার মনে হচ্ছে পুরো ছাদটাই উল্টে পড়ে যাচ্ছে। 

সময় গড়িয়ে যায়। প্রতিটিক্ষণ চলে ঋতু-বদলের হামাগুড়ি। পাল্টে যায় বিভিন্ন প্রেক্ষাপট। জীবনে ঘটে যায় যোগ অথবা বিয়োগের পালা। সময়ের সিঁড়ি বেয়ে আজ সৈকত ও পারমিতা খুবই কাছাকাছি। একজন অন্যজনের ধ্যান-জ্ঞান-স্বপ্ন। পারমিতাবিহীন মূর্হূত সৈকত ভাবতে পারে না। আর পারমতিার ভাবনার বিস্তীর্ণ জাল শুধু সৈকতকে নিয়ে। ফাইনাল পরীক্ষা আর বেশিদিন বাকি নেই। এখন ওরা লেখাপড়া নিয়ে বেশ ব্যস্ত। প্রায় সারদিনই একসাথে লাইব্রেরিতে লেখাপড়া করে। কারণ ক্লাস সাসপেন্ড হয়ে গেছে। পরীক্ষা খুবই কাছাকাছি। ওদের লেখাপড়া চলে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। তারপর ঘন্টাখানেকের জন্য বাইরে বেরিয়ে আসে। দুপুরে খাওয়াটা ডাকসু ক্যাফেতেই চলে। দু’জন একান্তে বসে কিছুক্ষণ গল্প করে। আবার লাইব্রেরিতে ফিরে আসে। গৌধূলী বেলায় আবার বাইরে বেরিয়ে আসে। পরপর চলে কয়েক কাপ চা। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি আবার লাইব্রেরিতে খোশ মেজাজে ফিরে আসে এবং লেখাপড়া চলে লাইব্রেরি যতক্ষণ খোলা থাকে। 

লাইব্রেরির দোতলার পূর্বদিকের রুমের এক কোণের টেবিলে ওরা বসেছে। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক কথাবার্তা চলে । হয়তো দেখা গেল পারমিতার একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করার ফাঁকে অন্য কথা শুরু হয়ে যায়। 

এখন শেষ বিকেল। একটু পরই ওরা বাইরে বেরিয়ে আসবে। পারমিতা যে প্রশ্নটা ধরেছিল সেটি মোটমুটি শেষ হয়ে গেছে। এখন একটা বই নেড়ে চেড়ে দেখছে। দৃষ্টি ঘুরিয়ে সৈকতের দিকে তাকাল। সৈকত গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। টেবিলে কনুই গেঁড়ে হাতের তালুতে মুখ গুজে পারমিতা দৃষ্টিহীন পলকে সৈকতের মনে প্রশ্ন জাগায়। ফিরে তাকায় সৈকত। পারমিতা পলকহীন । না হেসে পারল না সৈকত। শব্দহীন হাসির রেশ টেনেই সৈকত জিজ্ঞ্যেস করে- কী ব্যাপার, লেখাপড়া রেখে আমাকে ওভাবে দেখার কী আছে? 

আমার পড়া শেষ। 

শেষ মানে? 

শেষ মানে শেষ। যে প্রশ্নটা ধরেছিলাম পড়া হয়ে গেছে। 

তাই বলে চুপচাপ বসে থাকবে? অন্য একটা প্রশ্ন ধর। 

এখন আর ভালো লাগছে না। চায়ের নেশা চেপে বসেছে। 

আর দশ মিনিট, তাহলেই উঠতে পারবো। 

লক্ষীটি একটু চুপচাপ বস। 

আমি কি দুষ্টমি করছি নাকি? 

তুমি শুধু দুষ্টমিই করছ না, আমার মনটা নিয়ে লোফালুফি করছ। এমন করলে কি আর সুস্থির থাকা যায়! 

পারমিতা এক গাল হেসে বলে- আমি তোমার মন নিয়ে খেলবো না তো আরেকজনের মন নিয়ে খেলবো? 

সৈকত একটু দুষ্টমি ভরা কণ্ঠে বলে- তুমি কি আর কারও মন নিয়ে খেলতে চাও? 

পারমিতা হাত জোড় করে চোখ টেনে বলে- মাফ চাই, এক মন নিয়ে খেলা করেই পেরেশান। মনের পরিধি যে এত ব্যাপক এবং গভীর তা কখনও কল্পনা করিনি। 

চোখে চোখ রেখে সীমাহীন দৃষ্টিতে সৈকত তাকিয়ে থাকে। 

পারমিতা বলে- থাক,ওভাবে তাকিও না, তাহলে মরে যাব। এত গভীরে গিয়ে নিঃশ্বাস ফেলতে কষ্ট হয়। তুমি তোমার পড়া শেষ কর। আমি চুপচাপ বসছি। এই বলে পারমিতা সুবোধ বালিকা হয়ে চুপচাপ বসে থাকে। 

কিন্তু সৈকতের দৃষ্টি সীমা থেকে নিজেকে সরাতে পারছে না। এক পলক অন্যদিকে তাকায় তো এক মায়াময় গভীর টানে আবার ফিরে আসে। দু’জনার দৃষ্টি এক হয়। পলকহীন দৃষ্টি সৈকতের। দৃষ্টির গভীর টানে পারমিতা মোহাচ্ছন্ন হয়ে যায়। হাঁটিহাঁটি পা পা করে সৈকতের হৃদয়ের গভীর অন্ধকূপে পৌঁছে যায় পারমিতা। অন্ধকারের অলি-গলি হেঁটে বেড়াতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। পারমিতা কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে- সৈকত, তোমার দৃষ্টির গভীরতা কমিয়ে নাও। আমি একটুও স্থির থাকতে পারছি না। 

সৈকত চুপচাপ। পারমিতা সৈকতের হাত চেপে ধরে বলে- তোমার দৃষ্টিজাল থেকে বের হওয়ার মত শক্তি আমার নেই। আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। কথা বলতে গিয়ে পারমিতার ঠোঁট জোড়া অসম্ভব রকম কেঁপে ওঠছে। 

পারমিতার হাতে হাত রেখে সৈকত এক গাল হাসে। একটা র্দীঘ নিঃশ্বাসে পারমিতা শান্ত হয়। তারপর চোখ ঠেড়ে সৈকত বলে- কী কেমন হলো? 

পারমিতার জবাবের অপেক্ষা না করে বইপত্র গুছিয়ে সৈকত উঠে দাঁড়ায় এবং বলে- চল, নিচ থেকে ঘুরে আসি। 

শব্দহীন পারমিতা সৈকতের সাথে নিচে নেমে আসে। দু’জন এসে বসে হাকিম চত্বরে । চা শেষে সৈকত যখন সিগারেট ধরায় তখন পারমিতা বলে- তুমি বস, আমি এক্ষুণি আসছি। 

কোথায় যাচ্ছো? 

রুমে যাব। 

মাথা নেড়ে সৈকত হ্যাঁ-সূচক জবাব দেয়। পারমিতা হেঁটে চলে হলের দিকে। সৈকত সিগারেটে দেয় লম্বা টান। তারপর পারমিতার জন্য অপেক্ষা। পারমিতা ফিরে এল দশ মিনিটের মধ্যেই। পারমিতার হাসিমাখা মুখ যেন একরাশ কালো মেঘের ছায়ায় ঢেকে আছে। কাছাকাছি হতেই সৈকতের ভেতরটা অজানা আশঙ্কায় মোচড় কেটে ওঠে। তারপর অধীর আগ্রহে সৈকত জিজ্ঞ্যেস করে- পারমিতা, তোমার কী হয়েছে, তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?- বলে পারমিতাকে নিয়ে হেঁটে চলে লাইব্রেরির দিকে। 

পারমিতা একটা চিরকুট ধরিয়ে দেয় সৈকতকে। চিরকুটে চোখ মেলে ধরল সৈকত- পারমিতা , তোমার খোঁজে এসেছিলাম। না পেয়ে লিখে যাচ্ছি। সংবাদ পাওয়া মাত্রই বাসায় চলে আসবে। অতি জরুরি । অবশ্যই আসবে।- দাদাবাবু , তাং : ১৩.০৭. ১৯৯৮।

 

চলবে...