পোস্টস

উপন্যাস

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর- (পর্ব-১৪)

১৬ জুন ২০২৪

পার্থসারথি

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর ( ক্যাম্পাসভিত্তিক রোমান্টিক ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস )

*পার্থসারথি

পর্ব- ১৪  

পারমিতা দৌড়ে গিয়ে রিসিভারটা তুলল। ওপার থেকে পাপ্পুর কণ্ঠে উচ্চারণ- দিদি, ভাগনী হয়েছে। দেখতে খুবই সুন্দর। বাচ্চা বেশ সুস্থই আছে। দিদিও সুস্থ আছে। আমি এক্ষুণি আসছি। রাখলাম। 

টেলিফোন রেখেই পারমিতা প্রভাময়ী দেবীকে জড়িয়ে ধরে খুশীর খবরটি জানাল। দ'হাত জোড় করে দেয়ালে টানানো দেব-দেবীর ছবি দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে দীর্ঘক্ষণ প্রণাম করলেন। তারপর প্রভাময়ী দেবী দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে শান্ত হয়ে বসলেন। এখন যেন সকল চিন্তামুক্ত হলেন।  

*

স্লিপটা পাঠিয়ে সৈকত ওয়েটিং রুমে বসে আছে। পাশে আরও কয়েকজন বসে আছেন। এক ভদ্রলোক বসে আছেন। আরেক ভদ্রলোক স্ত্রী এবং বাচ্চাসহ অপেক্ষায় আছেন। প্রথম ভদ্রলোকটি সৈকতকে বারবার আড়চোখে তাকিয়ে দেখছে। সৈকত বেশ বিব্রতবোধ করছে। একবার ভাবল উঠে বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করবে। কিন্তু সৈকতের উঠা একদম ভালো লাগে না। কেমন অবলা অবলা মনে হয় নিজেকে। সৈকত চুপচাপ বসে আছে। কারও দিকে তাকেচ্ছে না। গন্তব্যহীন দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে শুধু। গন্তব্যহীন দৃষ্টিতে এদিক- ওদিক তাকাচ্ছে অথবা তাকিয়ে আছে একদিকে আর মনটা পড়ে আছে অন্য কোথাও। 

হঠাৎ বাইরে তাকাতেই রুচিরাকে দেখতে পেল। রুচিরা গেস্ট রুমের দিকেই এগিয়ে আসছে। সৈকত উঠে রুমের বাইরে চলে আসে। তারপর ওরা হল গেটের বাইরে বেরিয়ে আসে। 

রুচিরা হালকা সাজগোজ করে এসেছে। সৈকত তাকিয়ে দেখছে রুচিরাকে আর মিটিমিটি হাসছে। 

রুচিরা জিজ্ঞ্যেস না করে পারল না- কী ব্যাপার! অমনভাবে তাকিয়ে দেখছটা কী? 

আপনাকে। 

আমাকে ওভাবে দেখার কী আছে? 

দেখছি আপনি ইদানীং কিছুটা সাজগোজ করেন। 

করতে হয়, তাই। 

করতে হয় মানে! 

অফিসের হালকা অর্ডার। 

সাজলে আপনাকে বেশ লাগে। কথাটা বলে সৈকত অন্যদিকে তাকায়। রুচিরা কোন কথা বলে না। মুচকি মুচকি হাসে। 

সৈকত প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলে- আপনার কাছে এসেছি একটা বিশেষ কাজে। আপনার কি বিশেষ কোন কাজ আছে এখন? 

আপাতত নেই। তাছাড়া আমি অফিসে যাওয়ার প্রস্ততি নিয়েই বেরিয়েছি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রুচিরা আবার বলে- এখন মাত্র এগারোটা বাজে। হাতে অনেক সময়। অবশ্য তোমার কাজটা শেষে লাইব্রেরিতে ঢুকব। লাইব্রেরি থেকে অফিসে যাব। 

রুচিরাকে নিয়ে সৈকত পাবলিক লাইব্রেরিতে এল। তারপর সৈকত বলল- রুচিদি, পারমিতার ওখানে ফোন করতে হবে। 

অবাক হয়ে রুচিরা বলে- এর জন্যই কি আমাকে এনেছ? 

গতকাল জরুরি তলবে পারমিতা বাসায় গিয়েছে। আমাকে নিষেধ করে গেছে যনে ফোন না করি। 

কেন, কী ব্যাপার? হঠাৎ জরুরী তলব? 

কিছুই জানতে পারলাম না। তাই গতরাতটা খুবই উৎকণ্ঠায় কেটেছে। 

কয়েন ঢুকিয়ে রুচিরা নম্বর ঘুরায়। পরপর ৫ বার রিং হবার পর মহিলা কণ্ঠ- হ্যালো, আপনি কে বলছেন? 

আমি রুচিরা বলছি। 

রুচিরা? আপনি কাকে যাচ্ছেন? 

রুচিরা প্রথমে বুঝতে পারেনি যে কণ্ঠস্বরটা দিদির নয়। তারপর বলে- আমি পারমিতার বান্ধবী। প্লিজ পারমিতাকে একটু ডেকে দিবেন? 

আমি পারমিতার মা। 

নমষ্কার মাসী মা। আপনি কোন দিন এসেছেন? 

গতকালই এলাম। তোর বান্ধবী রুচিরা । শেষ কথাটা উচ্চারণ শেষে বললেন- নাও তোমার বান্ধবীর সাথে কথা বল। 

ওপার থেকে পারমিতা বলে- হ্যালো। 

কী ব্যাপার বাসায় হঠাৎ জরুরী তলব হলো যে? 

দিদির বাচ্চা হয়েছে। 

রুচিরা খুশি হয়ে বলে- তাই নাকি? দিদি ভালো আছেন তো? নরম্যাল না কি সিজারিয়ান। 

সিজারিয়ান। দিদি এখনও হাসপাতালে আছে। সম্ভবত কয়েকদিন থাকতে হবে।- পারমতিা বলে। 

আজ দিদিকে দেখতে যেতে পারছি না। আগামীকাল অবশ্যই আসব। 

আরও কিছুক্ষণ টুকটাক কথা বলে তারপর শেষে বলল- সৈকতের সাথে কথা বল। টেলিফোনটা করা হচ্ছে কয়েন বক্স থেকে। পাশে একটা লোক শুরু থেকেই টেলিফোনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। সৈকত আবার কয়েন ঢুকাল। লোকটা বুঝতে পারল যে একটু দেরি হবে। লোকটা আড়চোখে তাকিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে চলে গলে। রিসিভার নিয়ে সৈকত প্রথমে কথা বলে- হ্যালো। 

হ্যাঁ বলছি।- পারমিতার কণ্ঠস্বরটা কেমন যেন একটু খ্যাশখেশে শোনায়। 

সৈকত জিজ্ঞ্যেস করে- কী ব্যাপার তোমার কণ্ঠস্বরটা এমন শোনাচ্ছে কেন? 

গত রাত ফ্রিজের জল একটু বেশি খাওয়া হয়ে গেছে। তাই একটু ঠান্ডা ঠান্ডা লেগে আছে। 

ভাগনী হলো না কি ভাগনে?- সৈকত জানতে চায়। 

ভাগনী হয়েছে। খুশি হওনি? 

অবশ্যই। খুশি হব না মানে! দিদি এখন কেমন আছেন? 

ভালো। তবে দিদির ওপর খুব ধকল গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত সিজারই করতে হলো। 

দিদি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত কোন কাজ করতে দিও না। দিদিকে বিশ্রামে রেখো। 

পারমিতা শুধু বলে- হু। 

অবশ্য এ কদিন আমি বঞ্চিত হবো।- দুষ্টুমি করে বলেই সৈকত মুচকি হেসে রুচিরার দিকে তাকায়। রুচিরাও সৈকতের হাসিতে নীরবে যোগ দেয়। 

কী রকম?- ওপাশ থেকে পারমিতা বলে। 

এই ধর, তোমাকে কাছে পেলে আমার মনটা বেশ ফুরফুরে থাকে। আর যদি অল্পক্ষণের জন্য কাছে না পাই তবে মনে হয় যুগ যুগ ধরে দেখা নেই। তোমার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে মনটা চঞ্চলা হরিণীর মত ছটফট করে। তুমি কাছে নেই মানে আমি সর্বহারা।  

ওপার থেকে পারমিতা কোন কথা বলছে না। কারণ মা কাছাকাছিই বসে আছেন। পারমিতা শুধু শুনে যাচ্ছে, আর হু, হ্যাঁ করছে। 

সৈকত বুঝতে পেরেছে এই ফাঁকে একটু দুষ্টুমি করা যাবে। পারমিতা কিছুই বলতে পারবে না। রুচিরা সৈকতের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। 

তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে পারমিতা? 

কী করে বুঝলে? 

নিশ্চয়ই এলোমেলো চুলে আছো? ঠোঁটে লিপস্টিক রঙ নেই? এভাবে তোমাকে কোনদিন দেখিনি। 

কোনটাই ঠিক হয়নি। আমি একটু পরই হাসপাতালে যাব। সুতরাং এর মধ্যেই রেডি হয়ে গেছি। আপনার ধারণা একেবারে ভুল। 

আমিও আসছি। হাসপাতালের নামটা বল। 

সরি হাসপাতাল নয় ক্লিনিকে। এই বলে পারমিতা ক্লিনিকের নামটা বলে দেয়। 

একা আসছো কি? তাহলে আমি জিগাতলার মোড়ে অপেক্ষা করি? 

কণ্ঠস্বরটা একটু নামিয়ে পারমিতা বলল- আমার মা। 

ওই একই, আমারও। তোমার হলে, আমার হতে আপত্তি কি? শাশুড়ি মানেই মা। 

পারমিতা শব্দহীন হাসি হেসে বলে- বেশ কথা বলতে শিখে গেছ। 

ওই লোকটা ফোন বক্সের দিকেই আবার এগিয়ে আসছে। সৈকতই প্রথম দেখতে পেল। সৈকত ভাবল লাইনে আর বেশিক্ষণ থাকা উচিত হবে না। 

 

চলবে...